প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি লাউয়াছড়া
একুশে সংবাদ: ব্যস্ত এই নাগরিক জীবনে প্রতিটি মানুষেরই বিনোদনের প্রয়োজন আছে। আর এই প্রয়োজন মেটাতে শ্রীমঙ্গল একটি অন্যতম স্থান।
এখানে চা বাগানের নারী শ্রমিকদের কচি পাতা উত্তোলনের দৃশ্য আর দিগন্ত রেখায় মিলিয়ে যাওয়া বিস্তৃত চা বাগানের সৌন্দর্য্য যেন এক অচেনা জগত। রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানার নানা প্রজাতির বিরল পশু-পাখি, রয়েছে জীববৈচিত্র ও বন্যপ্রানীর মহামিলনের নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন শ্রীমঙ্গলের এই ন্যাশনাল পার্ক শুধু যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য শুধু তাই নয়, দেশের সবকটি বনাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে নান্দনিক ও আকর্ষনীয়। ১৯২৫ সালে ১২৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে প্লান্টেশন করে তৈরি বনরাজী এখন ঘন প্রাকৃতিক বনের আকার ধারণ করেছে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এই ন্যাশনাল পার্কে প্রাইভেট কার ও জীপ নিয়ে পরিদর্শন করা যায়। পর্যটকদের জন্য শ্রীমঙ্গল শহরে রয়েছে নামী দামি বোর্ডিং ও রেষ্ট হাউস। সব মিলিয়ে পর্যটক, গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এ পার্কটি এক অনন্য সুযোগ।
জীববৈচিত্রে ভরপুর এই পার্কে দেখা মেলে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পশু-পাখী। বিভিন্ন দেশের পাখি প্রেমীরা লাউয়াছড়ায় ছুটে আসেন দেখতে। লাউয়ছড়া জাতীয় উদ্যান ধীরে ধীরে দেশের শিক্ষা, গবেষনা, ইকো-ট্যুরিজমসহ ভ্রমন বিলাসীদের চিত্ত বিনোদনের অন্যতম আকর্ষনীয় স্পট হয়ে উঠেছে। গভীর অরণ্য সমৃদ্ধ, অদ্ভূত এক নির্জন পরিবেশে অবস্থিত লাউয়াছড়ায় রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষাদি। এরমধ্যে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, ম্যানজিয়াম, ডুমুর প্রভূতি উল্লেখযোগ্য। এ বনেই ছিল এশিয়ার বিখ্যাত বিরল প্রজাতির কোরোফর্ম বৃক্ষ। কয়েক বছর আগে ঝড়ে এ গাছটির মৃত্যু ঘটে। তবে বিরল কোরোফর্মের আরও একটি গাছের সন্ধান পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যা পর্যটকদের অত্যন্ত আকর্ষণ করে। এছাড়াও রয়েছে ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতীর সরীসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী এবং ২৪৬ প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে বিরল প্রজাতির উল্লুক, বানর, লজ্জাবতি বানর, হনুমান, ধনেষ, শ্যামা, অজগর, মেছোবাঘ, হরিণ প্রভূতি উল্লেখযোগ্য। এ বনের বিচিত্র পশুপাখী ও পোকা মাকড়ের অদ্ভূত এক ঝিঁঝিঁ শব্দ, বানরের ভেংচী আর উল্লুকের গাছে গাছে ছুটাছুটি পর্যটকদের মনে অনাবিল আনন্দের শিহরণ জাগিয়ে তুলে।
এ বনে রয়েছে ৩টি প্রাকৃতিক ফুট ট্রেইল বা পায়ে হাটা পথ। এরমধ্যে একটি ৩ ঘন্টার, একটি ১ ঘন্টার ও একটি ৩০ মিনিটের পথ রয়েছে। পর্যটকরা ইকো-ট্যুর গাইডের সাহায্য নিয়ে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করে পার্কটি ঘুরে দেখতে পারেন। এ পার্কে পর্যটকদের জন্য একটি ইনফরমেশন সেন্টার রয়েছে। এখান থেকে পাওয়া যায় পর্যটনের যাবতীয় তথ্যাদি। এ ছাড়াও পার্কে রয়েছে ইকো-কটেজ, ইন্সপেকশন বাংলো, গোলঘর, ফেন্সি ব্রীজ টয়লেট প্রভূতি। পর্যটকদের সুবিধার জন্য পার্কেরবিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে বিলবোর্ড ও নির্দেশনামুলক সাইনবোর্ড।
বিশ্বের অগণিত বিনোদন প্রিয়, গবেষক, ও পর্যটকদের সুপরিচিত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে উচু নীচু পাহড়ী টিলায় প্রচুর পরিমান চা, আনারস ও কাগজী লেবুর বাগান। এছাড়া লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন আদিবাসী খাসিয়াদের পান পুঞ্জি, উঁচু-নিচু পাহাড় আর খাসিয়া, মণিপুরী ও পাহাড়ী ললনাদের নানা সংস্কৃতি দেখতে ও জানতে হলে ভ্রমন পিপাসুদের শ্রীমঙ্গল পরিদর্শণ করা প্রয়োজন।
একুশে সংবাদ ডট কম/মামুন/২২.০৮.২০১৪
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :