AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা কোন দিকে মোড় নেবে?


Ekushey Sangbad

০৬:২০ এএম, আগস্ট ২৪, ২০১৪
পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা কোন দিকে মোড় নেবে?

একুশে সংবাদ : দ্রুত ধাবমান পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট কোন দিকে যে মোড় নেয় বলা কঠিন। এ কলাম লেখার সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশ জটিল ছিল। বিরোধী দুই নেতা সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান এবং বিদেশ থেকে প্রত্যাগত তাহ্‌রুল কাদরি রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থান নিয়েছেন এবং দাবি করছেন বর্তমান সরকারের পদত্যাগের জন্য। তারা বলছেন, সরকার পদত্যাগ না করলে এবং নতুন করে নির্বাচন দেয়া না হলে তারা রাজধানীতে তাদের অবস্থান চালিয়ে যাবেন। অবশ্য দুই বিরোধী নেতা কোনো যৌথ আন্দোলন করছেন না। তারা সরকারবিরোধী সমান্তরাল আন্দোলনে নিয়োজিত আছেন। উভয়েরই দাবি প্রায় একই ধরনের। তারা বর্তমান সরকারের অবসান চাচ্ছেন। অভিযোগ হলো, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ গত নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে তার শাসন পাকাপোক্ত করে তুলেছেন। এটাও অভিযোগ আছে, সরকার বিরোধী দলের ওপর দমননীতি চালিয়ে যাচ্ছে। ইমরান খান এবং তাহ্‌রুল কাদরি মনে করছেন, শরিফ সরকার পদত্যাগ না করলে তারা আন্দোলন চালিয়েই যাবেন। উভয়ের সমর্থকরা লাহোর থেকে সমর্থক ও নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানী ইসলামাবাদে জড়ো হয়েছেন। তারা পার্লামেন্ট ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থানে অবস্থান নিয়ে সরকার ও সংসদের কর্মকান্ডে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করছেন। যখন এ লেখা ছাপা হবে, হয়তো সেই সময় পরিস্থিতির বেশ পরিবর্তন হতে পারে। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কটের সহজ এবং আশু সমাধান ক্ষীণ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ কঠোরভাবে পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। যদিও তিনি বলেছেন, সংলাপের দরজা খোলা আছে, তথাপি তিনি দৃঢ়ভাবে মনে করছেন, সরকারের পদত্যাগের কোনো কারণ নেই। নওয়াজ শরিফ বলছেন, সব দলের অংশগ্রহণে, স্বাভাবিক নির্বাচনে তার দল জয়ী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের মে মাসের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, সেই ভোট পর্বের নিরপেক্ষতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। নওয়াজ শরিফ বলছেন, তার দলের সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়নি। সেটা হয়েছে একটি নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, যখন শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ বিরোধী দলে ছিল। তাহলে ভোটের কারচুপির প্রশ্নটি এখন কেন তোলা হচ্ছে? এ প্রশ্নের অবতারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কোনো যুক্তি নেই। শরিফ বলছেন, এ দাবি অসার এবং যুক্তিহীন। তিনি তার সরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না। পক্ষান্তরে, ইমরান খান এবং কাদরি দাবি করে যাচ্ছেন, নওয়াজ শরিফ কারচুপির মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন এবং সে কারণে তার ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। এ ব্যাপারে তারা অনমনীয়। ইমরান খানের পিটিআই দল হলো পার্লামেন্টে তৃতীয় বৃহত্তম দল। তাদের ৩৪ জন সদস্য আছে ৩২৬ সদস্যবিশিষ্ট সংসদে। শাসক মুসলিম লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম দলটি হলো, সাবেক শাসক পাকিস্তান পিপলস পার্টি। ধর্মীয় নেতা থেকে বর্তমানে বিরোধী দলীয় নেতায় রূপান্তরিত হওয়া তাহ্‌রুল কাদরির পিএটি দলের পার্লামেন্টে অবস্থান নেই। কেননা তারা নির্বাচন করেনি। পাকিস্তানের এ জটিল পরিস্থিতি-যেখানে সরকার এবং বিরোধী দল পরস্পরবিরোধী অবস্থানে লিপ্ত রয়েছে, কী করে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান সম্ভব? এ প্রশ্নটি প্রচন্ড ভাবে আলোচিত হচ্ছিল এ কলাম লেখার সময় পর্যন্ত। বিরোধী দুই দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ইসলামাবাদের 'রোড জোন' এলাকায় অবস্থান নেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করলেও সেটা কতদূর সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ 'রোড জোন' এলাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত ও স্থাপনা রয়েছে। সে কারণে সেই এলাকায় সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৪০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী সেখানে ও রাজধানীতে নিয়োজিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে উত্থান-পতনের রাজনীতির কারণে সমস্যার সৃষ্টি হলে, সেটা নিরসনের চেষ্টা ব্যর্থ হলে স্বাভাবিকভাবেই সেনাবাহিনীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। কারণ, সেনাবাহিনী দেশটিতে বেশ কয়েকবারই ক্ষমতা দখল করেছে এবং দীর্ঘদিন দৃশ্যপটে শক্তভাবে বিচরণ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের মাঝ দিয়ে ক্ষমতায় এলেও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। অধিকাংশ সময়ে সেনাবাহিনী পদার্পণ করেছে, কিংবা সেই নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুধু পাকিস্তানের ইতিহাসে একবারই সাধারণভাবে ও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। সেটা হলো গত নির্বাচনে যখন পিপিপির মেয়াদের পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুসলিম লীগ ক্ষমতায় আসে। এটা সমাদৃত হয়েছে গণতান্ত্রিক বিশ্বে। এর আগে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হয়েও নওয়াজ শরিফ দুইবার ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুমা বেনজির ভুট্টোও দুইবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে। সর্বশেষ সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছিল ১৯৯৯ সালে যখন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আসেন এবং দীর্ঘ ৯ বছর সরবে বিচরণ করেন। নওয়াজ দীর্ঘ প্রতিকূল পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত আবার সরকারপ্রধান হয়েছেন। অন্যদিকে পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতা ত্যাগের পর রাজনীতিতে এসে সুবিধা করতে পারেননি এবং বর্তমানে কঠিন অবস্থায় আছেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির সরকার বলা যায় যেন অনেকটা অলৌকিকভাবেই পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে যায়। এ সময় সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানি এবং প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মোহাম্মদ চৌধুরীর সঙ্গে সেই সরকারের অনেক বিষয়ে তীব্র মতবিরোধ হয়। সে কারণে কয়েকবারই জল্পনার সৃষ্টি হয়, সরকারের মেয়াদের আগেই সেনাবাহিনী হয়তো হস্তক্ষেপ করবে। কিন্তু সেটা আর সৌভাগ্যবশত হয়নি। ফলশ্রুতিতে পিপিপির সরকার পুরো মেয়াদই ক্ষমতায় থাকতে সক্ষম হয়। কিন্তু বর্তমান সরকার কি পুরো মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারবে? এ প্রশ্নটি রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের পটভূমিকায় বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনা ও বিতর্কে স্থান পেয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি, কিংবা যাওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছায়নি, যদিও সামগ্রিক অবস্থা বেশ উত্তপ্ত। এ লেখার পর হয়তো পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। অথবা নতুন কোনো ঘটনা প্রবাহের উন্মেষ হওয়ার পর সঙ্কেতও পাওয়া যেতে পারে। তবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে শরিফ সরকারের সম্পর্ক বেশ ভালো বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। শরিফের সঙ্গে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফেরও ভালো সম্পর্ক ছিল। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে মোশাররফ প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাত করতে কার্পণ্যবোধ করেননি। তখনও শরিফের অবস্থান পার্লামেন্টে শক্ত ছিল। অবশ্য বর্তমান সময়ে সেনাবাহিনী সহজে ক্ষমতার দৃশ্যপটে আসার সম্ভাবনা কম। আন্তর্জাতিক সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য সমস্যার কথা এখানে বিবেচ্য। তাছাড়া বর্তমান সেনাপ্রধান একজন পেশাগত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, যেমনটা ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানি। তবে প্রধান বিরোধী দল সাবেক শাসক পিপিপি বর্তমান সরকারের পদত্যাগের ব্যাপারে সরব নয়। এটা শরিফের জন্য বড় সুবিধা। ইমরান খান এবং কানাডা থেকে প্রত্যাগত তাহ্রুল কাদরির যথেষ্ট সমর্থন থাকলেও সেটা সরকারকে বাধ্য করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাদের সমর্থকরা আন্দোলনের এমন পর্যায়ে চলে গেছেন কিংবা চলে যাচ্ছেন যে, তাদের ফেরার পথ নেই বললেই চলে। নাকি তাদের পেছনে অন্য কোনো শক্তি আছে? সেটা কি দেশীয় নাকি বিদেশি? হয়তো সবকিছুই সম্ভব। পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা বেশ জটিল। সেটা কোন দিকে ধাবিত হয়, তা দেখার বিষয়। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-০৮-০১৪:
Link copied!