পাহাড় আর মেঘের মিতালি বান্দরবনের নীলগিরী
একুশে সংবাদ: পাহাড় আর মেঘের মিতালি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবন। একবার ঘুরে এলে যেখানে আবারো যেতে মন চায়। আকাশ-মেঘ যেখানে ভ্রমন পিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। মেঘের সাথে পাহাড়ের যেখানে আজন্ম বন্ধুত্ব।
প্রকৃতির এমন বন্ধুত্ব যে কারো মন ভালো করে দেবে মুহুর্তেই। মেঘ পাহাড়ের বন্ধুত্বের পাশাপাশি আপনিও হতে পারেন মেঘের বন্ধু। এখানে এলে মেঘ আপনাকে বন্ধু না বানিয়ে ছাড়বেনা। বলছি নীল গিরি পর্যটনের কথা।
এখানে পাহাড় ও মেঘের সাথেই বসবাস করে পাহাড়ি আদিবাসী ম্রো সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা। ম্রোদের জীবন ধারায় রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এরা যুগ-যুগ ধরে নিভৃতে বসবাস করছে দুর্গম পাহাড়ে। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ২ হাজার ২ শত ফুট উচ্চতায় এই নীলগীরি পাহাড়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। এখানে থাকার জন্য রয়েছে মনোরম কটেজ এবং খাবার জন্য আধুনিক মানের রেঁস্তোরা।
নীলগিরী পাহাড়: বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ফুট উচ্চতায় এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে পরিচালিত নীলাচলের এই পাহাড়ি এলাকাটিকে অনেকে বাংলার দার্জিলিং বলে থাকেন। এখান থেকে বান্দরবান শহরটি একনজরে দেখা যায়। সকালটা বাদে সারাদিন-ই নীলগীরি থাকে মেঘের ভিতর। এ এক আশ্চর্য অনুভূতি। আপনাকে ঘীরে ঘন মেঘ! মেঘের ভিতর আপনি! বেশ মজা না?! দেখবেন- মেঘের অনেক রং! নীলগীরি-এর বিকাল আর সন্ধেটা খুব উপভোগ্য! সন্ধ্যায় মেঘমুক্ত আকাশে কর্নফুলী নদীর মোহনায় দাড়ানো অসংখ্যা লাইটারেজ জাহাজের আলোকছটা আপনার মনে এনে দেবে অপুর্ব তৃপ্তি। বিকেলের সুর্যাস্তের দৃশ্যও মন মাতানো।
শহর থেকে চাঁদের গাড়ীগুলো নীলগিরী পর্যন্ত ৩/৪ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে। এসব চাঁদের গাড়ীগুলো একসাথে ২০/২৫ জন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ করে। নীলগিরী পৌঁছে আপনি সেখানে রাত যাপনও করতে পারবেন। এখানকার কটেজগুলো একটু ব্যয়বহুল। এখানকার প্রতিটি কটেজের ভাড়া রাতপ্রতি ৪/৫ হজার টাকার মধ্যে। আর থাকতে না চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনাকে আবার বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।
শৈলপ্রপাত ঝর্না: নীলগিরী যাবার পথে শৈলপ্রপাত ঝর্নাও আপনি দেখে যেতে পারেন। এই এলাকায় নেমে ঝর্নার স্বচ্ছ জলে আপনি একটু মুখ-হাত ধুয়ে নিলে যাত্রা পথের ক্লান্তি অনেক কমে যাবে। স্থানীয় বম সম্প্রদায়ের বিচিত্র জীবন প্রনালী উপভোগ করাটা হবে যাত্রা পথে অতিরিক্ত পাওনা। শহরের রুমা বাসষ্টেশন থেকে বিভিন্ন চাঁদের গাড়ী, জীপ ইত্যাদি নীলগিরী পর্যটন কেন্দ্রে চলাচল করে। আপনাকে এসব গাড়ী রিজার্ভ করেই যেতে হবে গন্তব্যে। কারণ রিজার্ভ গাড়ীতে না গেলে আপনাকে পথে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। যা আপনার ভ্রমনের আনন্দকে ম্লান করে দিতে পারে। গন্তব্যে পৌঁছাতে এসব গাড়ী ২-৩ ঘন্টা সময় নিতে পারে।
বগা লেক: ভূ-তাত্ত্বিকগণের মতে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে মৃত আগ্নেয়গিরি-এর জ্বালামূখে সৃষ্টি হয়েছে এই বগা লেক। বগা লেকের উচ্চতা ১২৭০ ফিট! এই স্থানটি মূলতঃ কেউক্রাডাং পাহাড়ে ওঠার বেজক্যাম্প। কেউক্রাডাং জয়ের অভিযাত্রীরা এখানেই অবস্থান করে থাকেন। স্থানীয় মারমাদের পরিচালনায় কাঠ-বাঁশের তৈরী রেস্ট হাউজ পেয়ে যাবেন সহজেই। ভাত (অথবা খিচুরী), চাল কুমড়ার বা শিম এর তরকারী আর ডিম- এই হচ্ছে মোটামুটি প্রতি বেলার ম্যেনু! ধান, সবজী সবকিছুই জুম চাষ থেকে পাওয়া!
চিংড়ি ঝর্ণা : বগা লেক থেকে ৪০ মিনিটের হাঁটা পথ পেড়িয়ে সুন্দর একটা ঝর্ণা (চিংড়ি ঝর্ণা) দেখে আসতে পারেন। আর কেউক্রাডাং চুড়ায় উঠতে হলে বগা লেক হতে আরও ৪-৫ ঘন্টার পাহাড়ী হাঁটা পথ! সে পথও মাড়িয়ে আসতে পারেন। শরীর পারমিট করলে ও মনের জোর থাকলে বগা লেক থেকে পুরো এক দিনের হাঁটা পথ মাড়িয়ে দেখে আসতে পারেন কাইখ্যাং ঝর্ণা ও পুকুর
বুদ্ধ ধাতু জাদি: বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে বুদ্ধ ধাতু জাদি বা স্বর্ন মন্দিরের অবস্থান। এখানকার পাহাড়ের চুড়ায় দেবতা পুকুর নামে একটি পুকুর আছে। এই পুকুরকে ঘিরে অনেক কল্প কাহিনী প্রচলিত আছে। এখানে নির্মিত মন্দিরটি স্থাপত্য শিল্পের এক অনবদ্য সৃষ্টি।
চিম্বুক পাহাড় : শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দুরত্বে চিম্বুক পাহাড়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১৫শ ফুট। এ পাহাড় থেকে একই সাথে সুর্যোদয় এবং সূর্যোদয়ের অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। পাহাড়ের আশে পাশের বম ও ম্রো জনগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবন ধারাও উপভোগ করার মতো।
একুশে সংবাদ ডটকম/মামুন/২৪.০৮.২০১৪
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :