সিলেটের স্বর্গীয় বিছানা ‘বিছনাকান্দি’
একুশে সংবাদ: প্রকৃতির সৌন্দর্যে শোভিত অপরূপ এক লীলাভূমি সিলেট। আর তার সাথে রয়েছে প্রকৃতির অসাধারণ রূপ-লাবন্যে ঘেরা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ‘বিছনাকান্দি’। আকাশে শরতের দলছুট মেঘেদের ছোটাছুটি, ওপারে সারি সারি পাহাড় আর পাহাড়ের বুক চিরে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ সবুজ জলে ভেসে ওঠা লাবণ্যপূর্ণ প্রাকৃতিক জলছবিই বলে দেবে এটা বিছানাকান্দি। যেখানে বড় বড় পাথরের ফাঁকে স্বচ্ছ জলের শক্তিশালী মায়া স্রোত আর সেই স্রোতের বুকে গা ভিজিয়ে রোমাঞ্চকর অনুভুতি আপনাকে দিতে পারে সাগরের ঢেউ খেলানো আনন্দ। তাইতো একে বলা যায়, সিলেটের স্বর্গীয় বিছানা।
ঝকঝকে শীতল পানির প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ে, বড় বড় পাথর আঁকড়ে ধরে শৈবাল হওয়া। সামনে সবুজে ঘেরা উঁচু উঁচু পাহাড়। দূরের পাহাড়টা এতোই উঁচু, দেখে মনে হয় যেন মেঘ ছুঁয়ে আছে। পাহাড়ের চূঁড়া থেকে বিরামহীনভাবে গড়িয়ে পড়ছে ঝর্ণার জল আর তার শব্দে সারা শরীর যেন নেচে ওঠে আজ। এ যেন নায়াগ্রা জলপ্রপাতেরই প্রতিচ্ছবি।
প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য্যের মহিমা, সত্যিই অবর্ণনীয়। এ যেন অদ্ভুত এক ভাললাগা। সবকিছু এখানে এসে মিলেছে। জাফলং এর স্বচ্ছ পানি, পাথর আর পাহাড়ের মিলন। তার সাথে আছে মাধবকুন্ডের মতো ঝর্ণা। কক্সবাজারের মতো জলের ঢেউ আর শীতল মিষ্টি পানি। এ যেন ভূ-স্বর্গ।
এখানে দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন এপাড়ের প্রকৃতি যেন ওপাড়ের পাহাড়ের সাথে মিতালী করছে গভীর মমতায়। কিন্তু সীমান্তহীন মেঘ নীল আকাশ এখানে বড় উদার, নিজেকে মেলে ধরেছে উজাড় করে। সেই আকাশে সাদা বকেরা উড়ে যাচ্ছে নীলিমার খোঁজে, ছায়া দেখা যায় পিয়াইনের সবুজ জলে। রয়েছে পাথর আহরণের সারি সারি নৌকার ঝাঁক, সীমান্তবাসীরা এই পাথরের বোঝাই থেকেই জীবন চলার পাথেয় আহরণ করেন। নদীর দু’পাড়েই বালিয়াড়ী হাঁসের ঝুপঝাপ-লাফালাফি, বিবাগী বাতাসে উদ্ভাসিত কলমী ফুলের হাসির ফাঁকে হঠাৎ চোখে পড়তে পড়ে কোন পল্লীবালা স্নান শেষে কলসী কাঁখে জল নিয়ে যাচ্ছে, আপনাকে দেখে সে লজ্জায় লাল হবে, আঁচল টেনে মুখ ঢাকবে।
বিছানাকান্দি যাবার দিনটা যদি হয় শুক্র বা সোমবার, তাহলে ভাববেন কপাল খুলে গেছে আপনার। সকাল দশটা থেকে চারটার ভিতর যেতে পারবেন ভারতে, সীমান্তে হাট বসে তখন। খেতে পারবেন ভারতীয় কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলমূল।
তবে সাবধান থাকবেন যাতে ফেনসিডিল দালালদের পাল্লায় না পড়েন। ছোট্ট শিশুরাও অফার করতে পারে। পা দিলে বিপদে পড়বেন কারণ, কিছুক্ষণ পরপর বিজিবি চেকআপ হয়। এছাড়া সাঁতার না জানলেও খুব সাবধান থাকবেন। সাঁতার যারা জানেন তারাও সাবধান, প্রচন্ড স্রোতে আপনি পাথরের আঘাত পেতে পারেন, পাথরে ধরতেও সাবধান থাকবেন, কারণ মাঝে মাঝে খুব পিচ্ছিল পাথর আছে।
আপনিও ঘুরে আসতে পারেন, তবে অনুরোধ খাবার দাবার নিয়ে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে প্রকৃতির এ অনন্যতা কিন্তু নষ্ট করবেন না।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যেকোন জেলা থেকে সর্বপ্রথম আপনাকে আসতে হবে প্রকৃতির অপরূপ হাতে সাজানো সিলেট শহরে। এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত রুম ভাড়া পাওয়া যায় এখানে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও বেশ ভালো। দরগা গেটে কয়েকটি ভালো হোটেল আছে। যেহেতু সকালের যাত্রাটা আম্বরখানা থেকে, তাই দরগা গেটই ভালো হবে।
বিছানাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমান বন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। সিএনজি হাদার পার নামক জায়গায় পর্যন্ত রিজার্ভ করে গেলে ভালো হয়। পাঁচ জন মিলে ৪০০ টাকায় সাধারণত ভাড়া নেওয়া হয়। তবে এ রুটে নিয়মিত সিএনজি চলে, ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা।
চারপাশে শুধু সবুজ চা বাগান। ওপরে নীল আকাশ আর নীচে যেন সবুজ গালিচা বিছানো। বিমানবন্দর পর্যন্ত এ রকমই সুন্দর রাস্তা দেখতে পাবেন। সবুজের সমারোহ, পাহাড়, দূর থেকে দেখা সাদা রেখার ন্যায় মেঘালয়ের ঝর্না আর গ্রাম দেখতে দেখতে আপনি হাদার পার এসে পৌঁছাবেন। মসজিদের পাশেই আছে খেয়া ঘাট। সুন্দর সাজ পোশাক দেখে মাঝিরা হয়ত ২০০০ টাকা চেয়ে বসতে পারে। ভুলেও রাজি হবেন না। ভাবখানা এমন রাখতে হবে যে, আমরা হেঁটেই যেতে পারব। নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া নিয়ে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হলে ভাল। দরাদরি করে এর চেয়ে কমে পেলে আরও ভালো। তবে এ্যাডভেঞ্চার প্রিয়রা হেঁটেই যায়। আগের রাতে যদি বৃষ্টি হয় তবে নৌকা নেয়াই ভালো। আর হাঁটার অভ্যাস না থাকলে ভুলেও হাঁটা শুরু করবেন না যেন।
একুশে সংবাদ ডটকম/মামুন/২৬.০৮.২০১৪
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :