AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য আধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে


Ekushey Sangbad

০৪:৫৩ এএম, আগস্ট ২৭, ২০১৪
সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য আধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে

একুশে সংবাদ : সমুদ্র নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? আইনুন নিশাত : বাংলাদেশ ও ভারত দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বহু বিষয় নিয়ে বিবাদ রয়েছে এবং এক সময় এ বিরোধগুলো জট পাকাতে পাকাতে এমন হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার যে সম্ভাবনা ছিল কিংবা দুই দেশের মধ্যে সুপ্রতিবেশীসুলভ যেসব আচার-আচরণ লক্ষ করা যায়, সেগুলো নির্বাসিত হতে চলেছিল। একটু যদি পেছনের দিকে তাকাই, ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে সহযোগিতা করেছে, সেটা অপূরণীয়। আমি এ প্রশ্ন বহু ভারতীয় কর্তাব্যক্তির কাছে শুনেছি, তোমরা কি আমাদের সহযোগিতা ছাড়া স্বাধীন হতে পারতে? আমার উত্তর ছিল, হ্যাঁ, আমরা পারতাম। আমরা ইরিত্রিয়া হতাম; আমরা বায়াফ্রা হতাম না। * দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাবে বায়াফ্রা তো স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি; নাইজেরিয়ার অংশ হয়েই রয়েছে। ** হ্যাঁ, বায়াফ্রা হলো নাইজেরিয়ার একটি অংশ। যখন তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে, পাঁচ বছর পরে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হয়। আর ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়ার একটি অংশ ছিল। ৩০ বছর যুদ্ধ করে তারা স্বাধীনতা পেয়েছে। তারা শুধু মাটি পেয়েছে; পোড়ামাটি, বাড়িঘর সবই যুদ্ধে নষ্ট হয়েছে। আমরা বাংলাদেশীরা স্বাধীন হতাম ঠিকই- হয়তো অনেক কষ্ট হতো, আরও অনেক রক্ত ঝরত, আরও অনেক সময় যেত। ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বলে তার অর্থ এ নয়, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে গিয়ে আমার নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেব এবং তার স্বার্থ রক্ষার্থে আমি কাজ করতে থাকব। আমি লক্ষ্য করেছি, ১৯৭২ সালে যে নতুন সম্পর্ক ছিল, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার যে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছিল, সেই স্পিরিট কিন্তু ১৯৭৪ সালের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। আমি '৭৫ বলছি না, '৭৪-ই বলছি। কারণ ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বাইরের জগতের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। ইসলামিক কনফারেন্সে যান। পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরিতার পরিবর্তে সম্পর্ক কিছুটা নমনীয় করার চেষ্টা শুরু করেন। তিনি খুব দূরদর্শী ছিলেন। বিশ্বে বাংলাদেশের বন্ধু দরকার-এটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ভারত এটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। আমি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত লক্ষ করেছি, ভারত এটাকে তাদের একটা পরাজয় মনে করেছে। তাদের ধারণা, ভারতবিরোধী অংশটিই এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এর ফলে ভারত পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রতি সৎ প্রতিবেশীসুলভ তো নয়ই, বরং বৈরীমূলক আচরণ করতে থাকে। ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালে ফারাক্কা নিয়ে বাংলাদেশ ভারতকে একটি অনুমতি দেয়। অনুমতি হলো তারা ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করতে পারবে। কিন্তু অনুমতিটা ছিল ১৯৭৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত। তারিখটি নির্দিষ্ট ছিল। মে মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি; কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরপরই বোঝা গেল ভারত পানি নিয়ে উল্টাপাল্টা কাজ শুরু করবে। * এমনটা মনে হওয়ার কী কারণ? ** কারণ হচ্ছে চাকমা সমস্যা। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরে উপজাতিরা যখন অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল, তখন ভারত সরকার চাকমাদের ভারতে আশ্রয় প্রদান করে। কোনো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া ত্রিপুরায় ক্যাম্প স্থাপনের সুযোগ দেয়। শান্তিবাহিনী লারমা গ্রুপকে আশ্রয় দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। এ প্রক্রিয়াটি তখন থেকেই শুরু। তাহলে একটি বৈরীমূলক আলোচনা হচ্ছে পানির ক্ষেত্রে, আরেকটি বৈরীমূলক আলোচনা শুরু হয় উপজাতীয়দের নিয়ে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তেমন যোগাযোগ ছিল না। ভিসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। এহেন পর্যায়ে তার সঙ্গে আরেকটি বিষয় যোগ হয়, সেটা হচ্ছে তালপট্টি এবং সমুদ্রসীমা নির্ধারণ। বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী ছিলেন। তখন তিনি যদি কিছু নির্দেশ দিতেন বা আদেশ দিতেন, তা প্রতিপালিত হতো। কিন্তু কেন এ নির্দেশ বা আদেশ দিলেন, তা হয়তো যারা প্রতিপালন করল, তাদের কাছে অতটা পরিষ্কার নয়। যেমন তিনি ১৯৭৩-৭৪ সালেই অনুধাবন করেছিলেন, বাংলাদেশের জন্য উপকূলের অংশটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত কিন্তু একাত্তরে নির্ধারিত হয়নি। এ সীমানা নির্ধারিত হয়েছে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। রেডক্লিফ সাহেব সেই সীমারেখা টেনে দিয়ে গেছেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে বিশ্বজুড়ে, 'ল অব সি' বলে যে সামুদ্রিক আইন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছিল, সে আইন তখনও সম্পন্ন হয়নি। তখন বলা হচ্ছিল তটরেখা থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল; কোনো দেশ বলছিল ২০ নটিক্যাল মাইল হচ্ছে নিজস্ব সমুদ্র; আর ২০০ থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল হলো অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর ওপর দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে পারবে; কিন্তু সম্পদের মালিক হবে সংশ্লিষ্ট দেশ। এগুলো নিয়ে তখন আন্দোলন চলছিল। তখন ধারণা করা হচ্ছিল, এটি ১২ নটিক্যাল মাইল আর ২০০ থেকে ২৫০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, আন্তর্জাতিক আইন হলে দেখা যাবে। তোমরা এরই মধ্যে জাতীয় আইন করে ফেল। আমরা ঘোষণা করে ফেলি এতটুকু আমাদের নিজস্ব অঞ্চল, এতটুকু আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চল। অর্থাৎ সময়ের অনেক আগে, আন্তর্জাতিক আইন হওয়ার আগেই তিনি আইন করার বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন। তখনই তালপট্টি দ্বীপটি সবার নজরে আসে। এ তালপট্টি দ্বীপের উৎপত্তি হলো ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আজকের যেটি নিঝুম দ্বীপ, সেটির নাম ছিল চর ওসমান, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট প্রবল জলোচ্ছ্বাসে চর ওসমান ধুয়ে চলে যায়। তখন সেখানে সামান্য কয়েকজন ছাড়া কেউই বেঁচে ছিল না। পরবর্তী সময়ে পলি জমে জমে '৭৪-৭৫ সালে দ্বীপটি আবার পানির ওপর ভেসে ওঠে। তখন এটির নামকরণ করা হয় উত্তর কমলার চর ও দক্ষিণ কমলার চর নামে। সর্বশেষ নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ। * সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর বঙ্গবন্ধু কি চর ওসমানে গিয়েছিলেন? ** না। অত দূর যাননি। ওনারা বেশি হলে হয়তো মনপুরা পর্যন্ত গেছেন। চর ওসমানের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এটি ছিল হাতিয়ার দক্ষিণে। পরবর্তী সময়ে '৭৪-৭৫ এ ফিরে আসে। ঠিক একই সময়ে তালপট্টি নামে যে জায়গাটি তৈরি হলো, সেটি হলো দক্ষিণ তালপট্টি। উত্তর তালপট্টি নামেও কিন্তু একটি দ্বীপ আছে। এটি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মালিকানার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হয়। ১৯৭৭-৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ ব্যাপারে মনোযোগ দিতে শুরু করেন। তিনি প্রচুর বাগ্বিতন্ডা ও করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়। ভারত সার্ভে করার কথা বলল। কিন্তু তারা সার্ভে করার পরিবর্তে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে পুরো দ্বীপটি দখল করে নেয়। তারা এর নাম দেয় নিউ মুর আইল্যান্ড। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সাহস করে একটি গানবোট পাঠায়। গিয়ে দেখা যায়, চারটি ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ সেখানে অবস্থান করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের দখলে এটা কোনো সময় ছিল না। পরে যে সরকারগুলো এসেছে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময়, এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি। ১৯৯৬ সালে যখন দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা হয় এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুবই খারাপ, ঠিক সে সময় প্রথমে গঙ্গা চুক্তি হলো, তারপর উপজাতীয় সমস্যার সমাধান হলো, উপজাতিরা ফিরে এলো। তখন সরকারের নজর পড়ল তালপট্টি ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়ে। এরপর মূল কাজটা কিন্তু করা হয় কেয়ারটেকার সরকারের সময়। দেখা গেল, মিয়ানমার নিজেদের মতো সমুদ্ররেখা টেনে সেখানে নেভি টইল দিচ্ছে। তখন বাংলাদেশ এটা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের অধীনে তাদের ট্রাইব্যুনালে গেল; ভারতের সঙ্গে চেষ্টা করা হলো। ভারত সেই কোর্টে যেতে রাজি হলো না; তারা আরবিট্রেশনে যেতে রাজি হলো। মানে মিয়ানমারের সঙ্গে হলো বিচার আর ভারতের সঙ্গে হলো সালিশ। দুটোরই ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক আইনে আছে। এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। একটি হলো, বেজলাইন বা তটরেখা। এখানে নদীর মোহনার ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে দুই দেশের জমি শেষ যেখানে, সেটাকে যোগ করে একটি লাইন টানা হবে, তারপর এটিকে লম্ব টেনে দুই ভাগ করা হবে। এ লাইনটি যদি পূর্ব-পশ্চিমে থাকে তাহলে লম্বটি এক রকম হবে। এ লাইনটি যদি পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকে, তাহলে আড়াআড়ি হয়ে গেল। কাজেই এ লাইনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের ক্ষেত্রে যেটি হলো, প্রথমে সেন্টমার্টিন দ্বীপ মিয়ানমার দাবি করল। ব্রিটিশ আমলে হয়তো মিয়ানমার প্রশাসনের অধীনেই ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা যখন সীমানা নির্ধারণ করল, তখন এটা তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তানের অংশ হয়। তাই ট্রাইব্যুনাল প্রথমে সেন্টমার্টিনকে বাংলাদেশের অংশ ধরল। এখন সেন্টমার্টিন আর মিয়ানমারের অংশে মিয়ানমারেরও ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অধিকার আছে; ভারত-বাংলাদেশেরও মিয়ানমারের দিকে ১২ নটিক্যাল মাইল অধিকার আছে। তখন এ দুটির মাঝখানে সমদূরত্বের একটি লাইন টানল। টেনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে ১২ নটিক্যাল মাইল করে দিল-যেখানে শেষ হয়েছে একটি যৌক্তিকতার ভিত্তিতে; কারণ বাংলাদেশ চাইছে উত্তর-পশ্চিমে লাইন। সেটা তো হতে পারে না। কারণ মিয়ানমারের তো ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত তার অর্থনৈতিক জোন নির্দিষ্ট। তার ২০০ নটিক্যাল মাইল টানলে সেটি বাংলাদেশের ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলে আসে। তখন তারা কিছু পয়েন্ট ফিঙ্ড করে একটি লাইন টানল এমনভাবে, যাতে ২০০ নটিক্যাল মাইলের পরেও বাংলাদেশের বহিঃসমুদ্রে অ্যাঙ্সে (প্রবেশাধিকার) থাকে। * সমুদ্রে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়াকে কেউ কেউ জয়-বিজয় বলে চিহ্নিত করেছেন। আপনার মতে এটা আসলে কী? আর এখানে আমাদের লাভটাইবা কতটুকু হলো? ** আমি এটাকে জয়-বিজয় কিছুই বলব না। এটাকে বলব একটি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং নিষ্পত্তিতে বিচারকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, তারা একটি যুক্তির ভিত্তিতে করেছেন এবং তারা সব সময় চেয়েছেন, বহিঃসমুদ্রে যেন বাংলাদেশের অধিকার থাকে। তখন এ লাইনটা এবং মিয়ানমারের লাইনটা যখন টানা হলো, মনে রাখতে হবে, এ এলাকাটি একটি উল্টো 'ইউ' আকৃতির, অর্থাৎ ভারতের কোস্টলাইন থেকে তাদেরও তো ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অধিকার আছে। বাংলাদেশের পটুয়াখালী থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অধিকার আছে; মিয়ানমারের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অধিকার আছে। কাজেই এ ডটেড লাইনগুলো টেনে দেখা গেছে, ভারত আর বাংলাদেশের লাইন যেখানে এসে মেশে, ওই এলাকায় ৫০ বর্গকিলোমিটারের মতো এলাকা, আর মিয়ানমারের সঙ্গে ওরকম ৫০ থেকে ৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সমাধান করা যায় না। ওটা এদেরও হতে পারে, ওদেরও হতে পারে। সে জায়গাটাকে গ্রে এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হলো। অর্থাৎ এখানে যদি কোনো ভূগর্ভস্থ সম্পদ থাকে, তাহলে তারা আলোচনা করে এটা ঠিক করে নেবে। * এবার নিষ্পত্তি হওয়ার ফলে সম্ভাব্য অর্জন প্রসঙ্গে বলুন। ** হ্যাঁ, এবার আমরা আসি নিষ্পত্তির ফলে লাভ কী হলো, সেই প্রসঙ্গে। আমি গঙ্গা চুক্তি ও উপজাতিদের সঙ্গে যে শান্তি চুক্তি তা টেনে এনেছিলাম এজন্য যে, আমরা মনে করি, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা আছে। ভারতে উত্তর-পূর্ব অংশ যদি খোলা হয়, আমার মনে হয় বিহার, পশ্চিমবঙ্গ; অন্যদিকে এপাশে সিকিম ও যে সাতটি রাজ্য আছে-এ ১০টি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং চীনের কুনমিং প্রদেশ নিয়ে যে নতুন অর্থনৈতিক জোনের কথা বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ কিন্তু তার কেন্দ্রে। বাংলাদেশে এখনও রাজনৈতিক রাজনীতি অর্থনৈতিক রাজনীতি থেকে আলাদা করে দেখা হয় না- এটি একটি ট্র্যাজেডি। কিন্তু এর পরিবর্তন শুরু হয়েছে। ফ্রান্স-জার্মানি দুইবার বিশ্বযুদ্ধ করেছে; কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করে। আমি মনে করি, দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি সুরাহা হওয়া, যদিও পুরোপুরি হয়নি; শান্তিবাহিনীর সমস্যা সমাধান হওয়া, তা-ও পুরোপুরি হয়নি; কিন্তু সমুদ্র নিয়ে যে সমস্যা, সেটা পুরোপুরি সমাধান হয়েছে। যে এলাকাটি নিয়ে অভিযোগ ছিল, অর্থাৎ বাংলাদেশ যে লাইনটি টেনেছিল, তার পশ্চিম অংশের পুরোটাই ভারতের- এটা তো বাংলাদেশ স্বীকার করেছে। তালপট্টি গোড়া থেকেই তার পশ্চিমে ছিল, কাজেই বাংলাদেশ কখনোই প্রমাণ করতে পারত না যে, তালপট্টি বাংলাদেশের অংশ; রেডক্লিফের লাইন যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই সমুদ্র লাইন টানতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ এলাকার চার ভাগের তিন ভাগ আমাদের অংশে পড়েছে; মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ এলাকার ৮০ ভাগ আমাদের এলাকায় পড়েছে। এখন উচিত এ এলাকার ওপর দখল প্রতিষ্ঠা করা এবং সম্পদ আহরণের ব্যবস্থা করা। আমি তিন ধরনের সম্পদের কথা বলব। প্রথম সম্পদ হলো গ্যাস কিংবা তেল-এরই মধ্যে ভারত ও মিয়ানমার পেয়েছে তাদের অংশে; বাংলাদেশের অংশেও পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে আমাদের যে অভিজ্ঞতা আছে, সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রে, সেটি কিন্তু অগভীর সমুদ্রে; গভীর সমুদ্র আসলেই কমপ্লেক্স। সেখানে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রচন্ড ঝড় থাকে এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল ব্যাপার। কাজেই এ মুহূর্তে আমরা করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি না। তবে আমি মনে করি, আমাদের অংশীদারিত্ব থাকা উচিত। পরবর্তী সময়ে যাতে আমরা নিজেরাই করতে পারি। মালয়েশিয়া যখন তাদের উপকূলে তেল আহরণ করে, তা কিন্তু বিদেশি কোম্পানির সাহায্যে করেছে। আজকে কিন্তু তারা ক্যাপাসিটি ডেভেলপ করেছে। তারা এখন অন্য দেশেও করতে পারে। ভারত যখন করেছে, তখন বিদেশি সহায়তায় করেছে; এখন তারা বহিঃসমুদ্রে করার দক্ষতা অর্জন করেছে। আমেরিকা এখনও ব্রিটিশ টেকনোলজির ওপর নির্ভরশীল। নরওয়ের কিছু এলাকায় জাপানিরা করে। আমি বলার চেষ্টা করব, এ কাজটার ক্ষেত্রে সরকার যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং দেশীয় দক্ষতাকে যতদূর সম্ভব সদ্ব্যবহার করে, এ ব্যাপারে অগ্রসর হন। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, সমুদ্রের তলদেশে অনেক মূল্যবান খনিজ সম্পদ আছে। বঙ্গোপসাগরের নিচে আছে কী নেই আমরা জানি না; কিন্তু কঙ্বাজার উপকূলে যে কালো বালু আছে, এতে অ্যালমানাইট, মোনাজাইটের মতো অনেক দামি দামি দুষ্প্রাপ্য মেটাল রয়েছে। পৃথিবীতে এগুলোর পরিমাণ খুব কম। আমি মনে করি, এ ধরনের খনিজদ্রব্য থাকলেও থাকতে পারে। কারণ কঙ্বাজারের বালু তো এসেছে সমুদ্রের তলদেশ থেকে। এটা আমার হাইপোথিসিস। আর তৃতীয় হচ্ছে মৎস্য সম্পদ। আমরা এখন মৎস্য সম্পদ আহরণ করি উপকূল থেকে ১৫ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত। কাজেই ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যে বিস্তৃত এলাকা, যার ওপর আমাদের অধিকার জন্মেছে, এ এলাকাটিতে অতিসত্ব্বর মৎস্য সম্পদ হারভেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি মনে করি না সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটা করা সম্ভব। এটার জন্য প্রাইভেট সেক্টরকে যেতে হবে; প্রয়োজনে বিদেশিদের সহায়তা নিতে হবে। কোথায় মাছের চারণক্ষেত্র আছে, বুঝতে হবে। মাছের চারণক্ষেত্র প্রতি বছর ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে বদলায়। আমাদের উপকূলে হাঙর আসে, তিমি আসে, বহু দামি স্কুইড ও অক্টোপাস আসে। আমি তো সেন্টমার্টিনের উপকূলে সি-হর্সের কথা জানি। অর্থাৎ এ সামুদ্রিক সম্পদ যাতে আমরা টেকসই পদ্ধতিতে আহরণ করতে পারি, প্রাথমিকভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে। এটি একটি রিস্কি বিজনেস। সে পরিমাণ জনশক্তি আমাদের নেই; থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে এসে লোকজন আমাদের মাছ ধরে নিয়ে যায়। সেজন্য আমাদের নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াতে হবে। এ তিনটি হলো আমার সুপারিশ। * মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তির পর সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার, সংশ্লিষ্ট জনসম্পদ গড়ে তোলা কিংবা উচ্চশিক্ষায় এ ধরনের পঠন-পাঠন সংযোজনের কোনো লক্ষ্য করা হচ্ছে কি? ** এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার একটি মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি স্থাপন করেছে। এরই মধ্যে গভীর সমুদ্রে যে বন্দর স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর ব্যবহার এ নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি সহজ হবে। সমুদ্রে প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে এখন কনফ্লিক্ট হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কম। কার জমি দিয়ে জাহাজ আসছে, সেটা নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে। কাজেই বরিশালের কাছে যে গভীর সমুদ্রবন্দর আমতলীতে, আর সোনাদিয়ায় যে দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর- এগুলোর কাজও এখন সহজ হবে। আমি যেটুকু লক্ষ করেছি, এ উদ্দেশ্যে নেভির উদ্যোগে একটি ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠছে। অনুমান করছি, তারা মৎস্য সম্পদ আহরণ থেকে সামুদ্রিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করাবে। এ জনশক্তি মাঠে নেমে দক্ষতা অর্জন করতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লেগে যাবে। এ সময় পর্যন্ত তো বসে থাকলে হবে না; কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা যেটি লক্ষ করছি, যে বস্নকগুলো নিয়ে বাংলাদেশ কয়েকবার বিজ্ঞাপন করেছে, কিন্তু কোনোবারেই কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ মিয়ানমার ও ভারত কর্তৃক ডিসপুটেড ছিল। আমি যতটুকু জানি, সে লক্ষ্যে সরকার কাগজপত্র তৈরি করছে; টেন্ডারিং প্রসেসের দিকে যাচ্ছে। * সমুদ্রবিরোধের মতো, আমাদের অভিন্ন নদী সমস্যা, ছিটমহল সমস্যা- এগুলো নিয়ে কি আন্তর্জাতিকভাবে আমরা মোকাবিলা করতে পারি? ** নদীর ক্ষেত্রে উত্তরটি খুব সহজ। প্রথমত কার্যকর কোনো আন্তর্জাতিক আইন নেই। দ্বিতীয়ত যে আইনটি তৈরি হয় ১৯৯৬ সালে, সেটি সাধারণ পরিষদে গৃহীত হলেও আজতক কার্যকর হয়নি। ৩৫টি দেশ এটাকে মেনে নিলে আন্তর্জাতিকভাবে এটি কার্যকর হবে। সর্বশেষ মে মাসে ভিয়েতনাম মেনে নেয়ায় ৩৫টি দেশ হয়েছে। বাংলাদেশ মানেনি। তাহলে যে আইন আমি মানি না, সে আইনের কথা কেন বলেন? আর ছিটমহলের বিষয়ে আরবিট্রেশনে যাওয়া যায়। কিন্তু এখানে আরবিট্রেশনের কোনো স্কোপ নেই। কারণ ছিটমহলের সীমানা তো নির্ধারিত। যদি অনির্ধারিত থাকত, যে সীমানাটি পরিষ্কার নয়, তাহলে আইনের প্রশ্ন উঠত। যে কোনো আইনের বিষয়ে বিদ্যমান আইনের সঠিক ব্যাখ্যা করলে অনেক কিছু খুব সহজেই কার্যকর করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৭-০৮-০১৪:
Link copied!