মিছিল ও যানজট দুর্ভোগ বাড়াল ট্যাক্সিহীন শহরে
একুশে সংবাদ : রাজ্য প্রশাসনের ভূরি ভূরি আশ্বাস, হুমকিই সার। ট্যাক্সিচালক আর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকে যানজটে নাজেহাল হল কলকাতা। নাকাল হলেন কাজে যোগ দিতে বেরোনো নিত্যযাত্রীরা।
এর মধ্যেই ভবিষ্যৎ দুর্ভোগের আগাম সঙ্কেত দিল বৃহস্পতিবারের সমাবেশ। তীব্র হল সরকার আর ট্যাক্সিচালকদের টানাপড়েন। পুলিশি জুলুম বন্ধ, ২২ জন ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়া-সহ একাধিক দাবি পরিবহণ দফতরের যুগ্মসচিব অবনীন্দ্র সিংহের হাতে তুলে দেন ট্যাক্সিচালকেরা। পরে তাঁরা জানান, ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা হবে। তার মধ্যে দাবিপূরণ না হলে লাগাতার ধর্মঘটে যাবেন তাঁরা। এমনকী, পরিবহণ শিল্পের বাকি ক্ষেত্রগুলিকেও ধর্মঘটে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান ট্যাক্সিচালকেরা।
ট্যাক্সিচালক এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশকে ঘিরে এ দিন সংঘর্ষের আশঙ্কা করেছিল পুলিশ। বলা হয়েছিল, সংঘর্ষ রুখতে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাতেও অবশ্য সংঘর্ষ ঠেকানো যায়নি। ভবানীপুর চত্বরে পাঁচটি ট্যাক্সি ভাঙচুর হয়। পুলিশ জানিয়েছে, আশুতোষ মুখার্জি রোডে গাজা পার্কের কাছে এবং হরিশ মুখার্জি রোড ও নন্দন রোডের মোড়ে পাঁচটি ট্যাক্সি ভাঙচুর হয়েছে। ওই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিটুর তরফে অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরাই ওই সব ট্যাক্সি ভাঙচুর করেছে। সিটু নেতা অনাদি সাহু বলেন, “যে সব ট্যাক্সি ভাঙচুর করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ সরকার কিংবা পরিবহণমন্ত্রীকে দিতে হবে।” পাল্টা সিটুর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও। ট্যাক্সি ভাঙচুরের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা এ দিন বলেন, “ট্যাক্সি তো রাস্তায় ছিলই না। ভাঙচুরের প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে! তবে সিটু যে ভাবে অসৌজন্য দেখিয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে মানুষের অসুবিধে সৃষ্টি করে ট্যাক্সিচালকেরা কোনও কর্মসূচি নিলে আমরাও পাল্টা কর্মসূচি নেব।”
দিনের দুর্গতির চিত্র। ভবানীপুর এলাকায় ট্যাক্সি ভাঙচুর।
গত ৭ অগস্ট থেকে পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন ট্যাক্সিচালকেরা। সাত তারিখ থেকে কয়েক দফায় সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশ, আইন অমান্য কিংবা মিছিল করেছেন তাঁরা। কর্মসূচিতে যোগ দিতে ওই সব দিনে ট্যাক্সি বার করেননি চালকেরা। ফলে অঘোষিত ট্যাক্সি-ধর্মঘট হয়েছে শহর জুড়ে। এ দিনও সকাল থেকে ট্যাক্সি ছিল না রাস্তায়। অন্য দিনের মতো এ দিনও শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন এবং বিমানবন্দরে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা।
দাবিপূরণ না হলে অবশ্য আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আর অঘোষিত নয়, ঘোষিত ধর্মঘট হবে বলেই জানানো হয় ট্যাক্সিচালকদের পক্ষ থেকে। এ দিনের সমাবেশেও সাফল্য মিলেছে বলে দাবি সিটু, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি-সহ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া শ্রমিক সংগঠনগুলির। এক সিটু নেতার কথায়, “শাসক দল এবং প্রশাসনের তরফে একযোগে মাইকে প্রচার এবং চোরাগোপ্তা হুমকি দিয়ে সমাবেশ ব্যর্থ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি। পুলিশ সমাবেশ বেআইনি ঘোষণা করেও কিছু করতে পারেনি। ট্যাক্সিচালকেরা একজোট হয়ে লড়াই চালিয়েছে।”
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ দিন দুপুর দুটোর সময়ে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে জমা হতে শুরু করেন ট্যাক্সিচালকেরা। পুলিশ বেআইনি ঘোষণা করলেও পরিবহণ ভবনের উদ্দেশে মিছিল শুরু করেন তাঁরা। গণেশ অ্যাভিনিউ এবং বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে অবশ্য পুলিশ ব্যারিকেড করে মিছিল আটকে দেয়। রাস্তায় দাঁড়িয়েই সমাবেশ শুরু করে দেন ট্যাক্সিচালকেরা। ততক্ষণে মিছিলের জেরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ মধ্য কলকাতার একাধিক রাস্তা যানজটে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। দুপুর আড়াইটে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার লাগোয়া নির্মলচন্দ্র দে স্ট্রিট। কলেজ স্ট্রিটের দিক থেকে আসা নির্মলচন্দ্র দে স্ট্রিটের সব গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় গণেশ অ্যাভিনিউয়ের দিকে। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের গাড়ি ঘোরানো হয় এস এন ব্যানার্জি রোডের দিকে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে ট্যাক্সিচালকদের এই সমাবেশ।
দিনের দুর্গতির চিত্র। বিমানবন্দরে ট্যাক্সি না-পেয়ে যাত্রীদের হয়রানি। বৃহস্পতিবার।
তার আগে অবশ্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মধ্য কলকাতা এবং দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গাঁধীমূর্তির পাদদেশের সমাবেশকে ঘিরে। সমাবেশের জন্য বন্ধ ছিল মেয়ো রোড। শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের মিছিলের জেরে দুপুর পর্যন্ত গাড়ির ভিড়ে আটকে যায় জওহরলাল নেহরু রোড, মেয়ো রোড, হরিশ মুখার্জি রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। রাস্তার একপাশ দিয়ে মিছিল করার কথা থাকলেও কার্যত গোটা রাজপথ দখল করেই মিছিল করেছেন শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৯-০৮-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :