দানশীল ব্যক্তিকে সকলে ভালবাসে
একুশে সংবাদ : পার্থিব দুনিয়ায় মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় বান্দাদের যেসব সদ্গুণাবলী অবলম্বন করার যোগ্যতা দিয়েছেন, ‘দানশীলতা’ সেসবের অন্যতম। এটি বান্দার মহত্ গুণাবলীর একটি, মানুষ ও শ্রষ্টার ভালবাসা অর্জনের অন্যতম পন্থা। দানশীল ব্যক্তিকে সকলে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে। এটি বান্দার প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত। কারণ ধন থাকলেই দান করা যায় না। দান করতে হলে মন থাকা চাই। তা না হলে পৃথিবীতে ‘কারুণের’ ইতিহাস সৃষ্টি হতো না। আর তাই প্রবাদে বলা হয়— “আল্লাহ দিয়া ধন বুঝে মন, কাইড়া নিতে কতক্ষণ।” দানের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহপাক কালামে পাকে ঘোষণা করেন, “ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যা উপার্জন করো এবং আমি ভূমি থেকে যা তোমাদের জন্য উত্পন্ন করে দেই, তা থেকে যা উত্কৃষ্ট তা ব্যয় করো।” (সূরা বাকারা: ১৬৭)।
দানশীলতার প্রতিশব্দ হলো উদারতা, বদান্যতা, মহত্ব ইত্যাদি। ইংরেজীতে যাকে বলে বেহবত্ড়ংরঃু. অন্যের প্রতি দয়াপরশ হয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে নিজ মন থেকে তাদেরকে কিছু দেয়াই হলো দান। প্রকৃত দানশীল ব্যক্তি উপযুক্ত পাত্রে, নিজ অন্তর থেকে কোনরূপ ‘রিয়া’ ব্যতিরেকে উত্তম মাল অতি গোপনে দান করে থাকেন। দান করার পর উক্ত গ্রহীতার নিকট দানের কোনো বিনিময় আশা করেন না বা লোকের নিকট বলে বেড়ায় না। এটিই হলো উত্তম দানশীলতার নমুনা।
ধনদৌলতের প্রকৃত মালিক আল্লাহ। তিনি তা তাঁর বান্দাদের সাময়িক ভোগের জন্য দিয়েছেন। ধনদৌলত মানুষের জীবনধারণের অবলম্বন মাত্র। নশ্বর এ পৃথিবীতে মানুষের জীবন, ধনদৌলত সবই ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহ তাঁর বান্দার মন পরীক্ষা করার জন্যই সম্পদ দিয়ে থাকেন। ‘দানে বাড়ে ধন, যদি থাকে মন।’ দান করতে হবে মন উজাড় করে। রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অথবা পার্থিব লাভের আশায় দান-খয়রাত করলে তা আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা আমাদের সম্পদের সাময়িক মালিক বানিয়েছেন। তাই তার শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে দান করতে হবে। আর দান করলে সম্পদ পুত-পবিত্র হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ধনসম্পদ তোমরা ব্যয় করো তা তোমাদের নিজেদের জন্য। তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণেই ব্যয় করে থাক। আর তোমাদের সম্পদের যে উত্কৃষ্টটুকু ব্যয় করো, তা পূর্ণ করে দেয়া হবে। তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।” (বাকারা: ২৭২)। সমাজের বিত্তবানরা জনহিতকর কাজ যেমন মক্তব-মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, বিদ্যালয় স্থাপন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ বা সংস্কার, হাসপাতাল নির্মাণ, লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা, বিশ্রামাগার, ওজুু-গোসলখানা নির্মাণ, খাল খনন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় প্রদান, হতদরিদ্র, পথশিশু, পঙ্গু, অন্ধ, অক্ষম এবং অসহায় লোকের পুনর্বাসন, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ইত্যাকার হিতকর কাজ করতে পারেন। দানের ফজিলত ও বরকত প্রদানের ঘোষণা দিয়ে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, “ যারা নিজের ধন-ঐশ্বর্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজ, যা সাতটি শীষ উত্পাদন করে। প্রত্যেক শীষে রয়েছে একশত শস্যকণা, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়।” (রাকারা: ২৬১)।
আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন দানশীলতার অনন্য প্রতীক। তিনি কখনো কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। হাদীসের ভাষ্যমতে, “রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা ও সর্বাধিক সাহসী।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেয়া সর্বাধিক সাহসের কাজ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলেই কেবলমাত্র তা সম্ভব হয়।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৯-০৮-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :