রেশম সুতার উৎপাদন হুমকির মুখে
একুশে সংবাদ : রেশম খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়লেও উৎপাদন কমছে। সেই সাথে কমেছে সুতার উৎপাদন। আগে যেখানে রেশম সুতার উৎপাদন ছিল ৫০ টন। সেখানে বর্তমানে উৎপাদন নেমে গেছে ৩০ থেকে ৪০ টনে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এভাবে উৎপাদন কমে গেলে অবিষ্যতে হুমকির মুখে পড়বে এ শিল্পটি।
সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে দেশে রেশম সুতার উৎপাদন ৯০ টন পর্যন্ত উঠেছিল। ওই সময় ৫২ লাখ ডিম উৎপাদন হতো। এখন হয় দুই থেকে তিন লাখ। রেশম উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য রেশম চাষিদের অনাগ্রহকে দায়ি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অনাগ্রহের কারণ হিসেবে চাষিরা দাম না পাওয়া কে দায়ী করেছেন।
তবে এ শিল্পের উন্নয়নে এ বছর বাজেটে রেশম খাতে অনুন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয় ৯ কোটি ৫০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। যা গত বছর এই বরাদ্দ ছিল নয় কোটি ২০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বছর শেষে এ বরাদ্দ সংশোধিত হয়ে দাড়ায় আট কোটি ৯০ লাখ ৪৬ হাজার টাকায়।
রেশম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রেশম উন্নয়নে রেশম উন্নয়ন বোর্ডে দুটি প্রকল্প রয়েছে। এ দুটিতে মোট বরাদ্দ দুই কোটি ৯৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে এক্সটেনশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব সেরিকালচার ইন পাবলিক অ্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর প্রকল্পে এ বছর বরাদ্দ রয়েছে এক কোটি ৭৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সফার অব সাসটেইনেবল সেরিকালচার থ্রু আপ গ্রেডিং দ্যা রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ক্যাপাসিটি অব বিএসআরআই প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে এক কোটি ১৯ লাখ টাকা।
রেশমের উৎপাদন কমার বিষয়ে রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক স্বপন চন্দ্র পাল বাংলামেইলকে বলেন, ‘রেশম উৎপাদন কমার ক্ষেত্রে মানহীন গুটি দায়ী। এর জন্য চাষিরা দাম কম পাচ্ছে। মান সম্মত গুটির দাম কেজি প্রতি ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। ১০০ পলু ডিম থেকে ৬০ কেজি গুটি পাওয়ার কথা। ভালোভাবে যত্ন না নেয়ায় অনেক ক্ষেত্রে গুটি হয় ১০ থেকে ২০ কেজি। এই গুটিও মান সম্মত হয় না। গুটির মান কমে গেলে সুতা উৎপাদনও কম হয়।’
চাষিরা গুটির দাম না পাওয়ার কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মান সম্মত গুটি উৎপাদিত না হওয়ায় চাষিরা দাম পাচ্ছে না। এছাড়া উন্নত মানের গুটির সমস্যাও রয়েছে। ২০০৩ সালে রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট আলাদা হয়ে যায় রেশম বোর্ড থেকে। ২০১৪ সালে তারা আবার রেশম উন্নয়ন বোর্ডের অধিন চলে আসে। ২০০৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কোনো নতুন জাতের রেশম ডিম তারা মাঠে ছাড়ে নি। বর্তমানে তাদের দুটি জাতের রেশম ডিম মাঠে পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। গরম সহনশীল জাতের এ ডিম উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডির সহকারি অধ্যাপক কামরুজ্জামান ‘সাসটেইনেবল সেরিকালচার ইন নর্থ ওয়েস্ট বাংলাদেশ : এক্সপ্লোরিং প্রটেনশিয়াল ফর ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড উইমেন ইমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক একটি পকল্প নিয়ে কাজ করছেন।
উন্নত রিলিং থাকলে সুতা বেশি উৎপাদন হতো সেই সাথে চাষিরাও ভালো দাম পেতো। ৯০ এর দশকে রাষ্ট্রিয় নীতির কারণে রেশম উৎপাদন পিছিয়ে পড়ে। সে সময় দেশের বাজার খুলে দেয়া হয়। দেশি গুটির দাম না পেয়ে চাষিরা এসময় গুটি পুড়িয়ে দেয়।
তার মতে, ‘রেশম উৎপাদন এখন এমন এক পর্যায়ে রয়েছে একে রেশমের শেষ পর্যায় বলা যেতে পারে। এ অবস্থার পেছনে প্রধান কারণ, রিলিং বা সুতা কাটার ক্ষেত্রে কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই রেশম উৎপাদন বাড়াতে সুতা কাটার আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে চাষিরা দাম ভালো পাবে। চাষের ক্ষেত্রেও তাদের আগ্রহ ফিরবে।’
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/৩০-০৮-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :