AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ডাক পিয়নের অসুখ হয়েছে | শামীম রুনা


Ekushey Sangbad

১১:৩৫ এএম, আগস্ট ৩০, ২০১৪
ডাক পিয়নের অসুখ হয়েছে | শামীম রুনা

একুশে সংবাদ : মাঝে মধ্যে এমন একটি দিন আসে সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠা মাত্র মনটা খুব চনমনে হয়ে যায়। দুই শালিকের দেখা মিলুক কী না মিলুক, মনে হয় আজ দিনটি ভালো যাবে। আনন্দের একটি ঘটনা ঘটবে। তবে কি হলুদ অথবা নীল খামে আমার কাছে আনন্দলোকের চিঠি আসবে! বহু দিন মাস বছর হয়ে গেল আমাকে কেউ চিঠি লেখে না। আমি মনে মনে একটি অলৌকিক চিঠির প্রতীক্ষা করি আর গুন গুন করি— “আজ তোমার চিঠি যদি না পেলাম হায় তবে ভেবে নেবো ডাক পিয়নের অসুখ হয়েছে।” আমার মনে হচ্ছে, সব ডাক পিয়নের বুঝি অসুখ হয়েছে, তা না হলে ওরা আমার জন্য একটি চিঠিও নিয়ে আসে না কেন? কত রকমের চিঠি তো আছে। এক মানুষের চিঠির জন্য আরেক মানুষের প্রতীক্ষা, সন্তানের চিঠির জন্য বাবা-মা’র এক বুক স্নেহভরা প্রতীক্ষা, কিংবা স্বামীর চিঠির জন্য স্ত্রী’র ভালোবাসার কাঙাল অপেক্ষা; তেমনি ভাই’র চিঠির জন্য বোনের অভিমানী প্রতীক্ষা অথবা বন্ধুর চিঠির অপেক্ষা, চিঠি আরো কতো রকমের অপেক্ষা যে মানুষকে করতে শিখিয়েছিল! চিঠি হয়তো সব সময় আনন্দের ছিল না তারপরও চিঠির প্রতীক্ষা মানুষ যুগ যুগ ধরে করে আসছে। একটি চিঠি কতটা ভালোবাসা ধরে রাখতে পারে তা বুঝতে পারি যখন পড়ি— “চিঠিটা তার পকেটে ছিল / ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা..” ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’ অবস্থা এখন আমাদের প্রত্যেকেরই। আমরা সবাই মনে মনে আনন্দময় এক চিঠির প্রতীক্ষায় আছি; আমাদের কেউই চিঠি লিখছে না। হয়তো, আমরা চিঠি লিখতে ভুলে গেছি! চিঠি লেখা আর চিঠি পড়ার মাঝে যে অপার আনন্দ তা চিঠি না লিখে বা না পড়ে বোঝানো যাবে না। কিন্তু চিঠি লেনদেনের এই আনন্দ মাধ্যমটি আজ মুমূর্ষু অবস্থায়। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমরা চিঠির মতো একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে অপরকে নিজের মানসিক কী পারিবারিক-সামাজিক অবস্থা জানাতে চাই না। তারচেয়ে মোবাইলে এক-দু মিনিট কথা বলে নেওয়া অনেক ভালো। যখন মোবাইল কোম্পানিগুলো হরেক রকম কথা বলার জন্য হরেক অফার হরদম আমাদের নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রেখেছে। অন্য পক্ষের সাথে কথা বলতে না চাইলে আরো ভালো উপায়, একটি এসএমএস পাঠিয়ে দেওয়া। চিঠির যুগে এরকম ম্যাসেজকে চিরকুট বলা হতো। আজ সব চিরকুটের কথা না বলি, সব চিঠির কথা না বলি; আজ বলি শুধু প্রেমপত্র বা প্রেমের চিঠির কথা... আজ যারা সাশ্রয়ী সেলুলার ফোনে পারদর্শী তারা কি ভাবতে পারে নিজ হাতে লেখা ছোট একটি চিরকুট প্রেমপর্ব সূচনায় হৃৎপিণ্ডের গতি কত বাড়িয়ে দিত! এই চিরকুটের ওপর অনেক সময় প্রেমের পরিণতি নির্ভর করতো, ছোট্ট চিরকুট প্রেমের ভিত্তি ছিল। এসএমএসের সাথে চিরকুটের এখানে কোনো ক্লেশ নেই, এসএমএসও পালস্ রেট বাড়িয়ে দিতে পারে। গোল বাঁধতো তখনই যখন এই চিরকুট কাঙ্ক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য অন্য কত জনের কাছে গিয়ে কাকুতি মিনতি করতে হতো! কত জনকে চটপটি-আইসক্রিম-চাইনিজ খাওয়াবার প্রতিশ্রুতি দিতে হতো! একটি চিরকুট পৌঁছানোর পেছনে যত খরচ হতো একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আজকাল একটি হ্যান্ডসাম মোবাইল সেট কেনা যাবে। তারপরও তো টেনশন কমতো না, চিরকুট ঠিক মতো ঠিক মানুষের কাছে পৌঁছালো কিনা, নাকি জাঁদরেল বাবা-মা-কী বড় বোন— কার হাতে গেল সেটা নিয়েও কি কম টেনশন! এই টেনশনের সময়টা যে কী! এই টেনশন অনেকটা সে রকম, অনেকে পায়ে দড়ি বেঁধে কয়েকশ’ ফুট উপর থেকে লাফ দেয় না? তারপর সচিৎকার নিচে নামবার মতো দম বন্ধ এক অবস্থা, ঠিকঠাক ল্যান্ডিং-এর পর সবার দিকে মাথা উঁচু করে গর্বভরে তাকানোর মতোও ছিল নির্বিঘ্নে সব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। চিরকুটের যেখানে এই অবস্থা সেখানে রাত জেগে লেখা একটি দীর্ঘ প্রেমের চিঠি কী রকম সম্মোহনক্ষমই না ছিল! প্রেমের দীর্ঘ চিঠি নিয়ে কত-শত গান আছে— ‘চিঠিগুলো অনেক বড়ো হবে, পড়তে পড়তে সকাল দুপুর রাত্রি হয়ে যাবে..’ কিংবা ‘লিইখ্যা চিঠি রাতের বেলা লণ্ঠনও জ্বালাইয়া, কাল সকালে ডাকে চিঠি দিমুরে পাঠাইয়া..’— এখন চিঠি লেখাও হয় না, পাওয়াও হয় না, আর ডাক পিয়নও আসে না দুয়ারে। পরিচিত একজনের কাছে গল্প শুনছিলাম, কিশোরী বেলায় প্রেমপত্র পেয়ে তার মনের অবস্থা কী রকম হয়েছিল। দুপুরে পাওয়া প্রেমপত্র পড়ার সুযোগ পেয়েছিল মধ্যরাতে। কয়েকবার সে চিঠি পড়ে মুখস্ত করে তা কোথায় লুকিয়ে রাখবে ভেবে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চিঠিটি পুড়িয়ে ফেলে। এরপর! এরপর সেই পোড়া ছাই পানিতে গুলে পান করে নিয়েছিল। কঠিন প্রেমিকা!! বর্তমান যুগে কি আর প্রেমপত্র পুড়িয়ে পান করবার চান্স আছে? আসে তো মোবাইলে সব এসএমএস। পান করতে হলে পুরো মোবাইলটাই গিলতে হবে। আর এটা হবে রোমিও’র বিষ পানের চেয়েও কঠিন। চিঠির পরিবর্তে মডার্ন টেকনোলজি, নিত্য দিনের উন্নত বিজ্ঞান ব্যবস্থা কত রকম সুযোগই না দিচ্ছে। কনভারশনের জন্য চ্যাটিং অপশন। কত-কত জানা অজানা মানুষের সাথে এফবিতে পরিচয় হচ্ছে, কনভারশন হচ্ছে। চাই যদি ওয়েভ ক্যামে লাইভ ছবিও দেখে নেওয়া যায়। এক সময় পত্রমিতালী বলে একটা ব্যাপার ছিল— সেটা এখন প্রাগৈতিহাসিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল মানুষের অত সময় কোথায় একটি চিঠি লিখে কর গুনে গুনে উত্তর পাবার অপেক্ষা করবার। আসলে এখন চিঠিও নাই, প্রতীক্ষার মধুরতা সুযোগও নাই। স্কুলের ব্যাকরণ বইগুলোতে এখনো দেখি, অমুকের কাছে পত্র লেখো, তমুকের কাছে ঐ বিষয়ের বর্ণনা দিয়ে পত্র লেখো— বর্তমান যুগের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাগৈতিহাসিক ওই পদ্ধতি কেনো যে এখনো শিখাচ্ছে! তারচেয়ে বরং ‘রাইট আ এসএমএস ইউর.. ..ফর.. ..’ শিক্ষা দিলে পারে। মনের ভাব জানানোর প্রিয় একটি উপায় চিঠি থেকে আমরা নিজেদের কত সহজে দূরে সরিয়ে নিচ্ছি। নিজেদের ক্রমশ যন্ত্র নির্ভর করে নিচ্ছি। যন্ত্রের ওপর নিজের দখলদারিত্ব বাড়াতে গিয়ে আদপে আমরা নিজেদের সৃজনশীলতা আর কল্পনাশক্তি হারিয়ে ফেলছি না তো! ভুলে যাচ্ছি না তো অপেক্ষার স্বাদ! একুশে সংবাদ ডটকম/আর/৩০-০৮-০১৪:
Link copied!