জামালপুরে বন্যা পরিস্তিতির অবনতি,বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা
একুশে সংবাদ : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা, ঝিনাই ও সুবর্নখালী নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার বন্যা পরিস্থির চরম অবনতি হয়েছে।পানি বন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।
সরিষাবাড়ী পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডসহ উপজেলার সাতপোয়া, পোগলদিঘা, কামরাবাদ, পিংনা, ভাটারা ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া ডোয়াইল, মহাদান ও আওনা ইউনিয়নের সামান্য অংশ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
উপজেলার প্রায় ৮০টি গ্রামের পানিবন্দী পরিবারের সদস্যরা ঘরবাড়ি ছেড়ে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী নিয়ে উঁচু রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ।
অন্যদিকে পৌর এলাকার শিমলাপল্লী, তাড়িয়াপাড়া, চাদ শিমলা, শিমলা বাজারের ঐতিহাসিক গণময়দান, ইস্পাহানী এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানকার পানিবন্দী অসহায় পরিবারের সদস্যরা রেলস্ট্রেশন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রেসক্লাবে রাত যাপন করছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যাকবলিত ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে।
পাশাপাশি পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি যমুনার করালগ্রাসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েক দিনে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীর পাড় অস্বাভাবিক ভাঙ্গতে শুরু করেছে।
অমাদের জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গত চার দিনে পিংনা ইউনিয়নের বাশুরিয়া গ্রামের ২৫টি, চর বাশুরিয়া গ্রামের ৪৫টি, রাধানগর গ্রামের ২০টি, কুমলিবাড়ী ও পানিবাড়ী গ্রামের ৭৫টি ঘর-বাড়ীসহ কয়েক হাজার একর ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গ্রামগুলোর বিশাল এলাকা জুড়ে প্রতিদিন ভাঙ্গন এলাকা বেড়েই চলেছে। ভাঙ্গন কবলিত প্রায় দুই শতাধিক পরিবার রাস্তা, উঁচু বাঁধ ও স্কুলের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। অস্বাভাবিক ভাঙ্গনে তীরবর্তী এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষ উৎকন্ঠার মধ্যে বাস করছে।
যমুনা নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়েছে বাসুরিয়া শামসুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয় ও বাসুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ। বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য এবং খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় অর্ধলক্ষ বন্যাদুর্গতদের মাঝে মাত্র দুটি ইউনিয়নে অতি সামান্য সরকারী সাহায্য মিললেও সিংহ ভাগ অসহায় মানুষের পাশে কেউই দাড়ায়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির এ চরম অবনতিতে তারাকান্দি-ভুয়াপুর সড়ক বাধ পিংনা ইউনিয়নের রাধা নগর এলাকায় সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্যার পানির তীব্র স্রোতে যে কোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারছে বলেও গ্রামবাসী আশঙ্কা করছে। তারা বলছে, এই সড়কটি ভেঙ্গে গেলে ভুয়াপুরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ফলে যমুনা সার কারখানার উৎপাদিত ইউরিয়া সার উত্তর বঙ্গের ১৬ জেলায় পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে । তারা বলেন, ইতোমধ্যে পিংনা ইউনিয়নের ৪টি মৌজা যমুনা ভাঙ্গনে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এলাকার ৪ হাজার হেক্টর রোপা-আমন ধান ও ৫ শত হেক্টর শাক-সবজি, মরিচ ৩শত, ৮ হেক্টর বীজতলা জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে বন্যায় ৪শত হেক্টর শাক-সবজি, ৪শত হেক্টর মরিচ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত বন্যার পানি সরে না গেলে রোপা আমন সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, বন্যায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
একুশে সংবাদ ডটকম/এফরান/০১.০৯.০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :