ইলিশ আছে ঠিকই, কিন্তু দাম নাগালের বাইরে!
একুশে সংবাদ : দিন ফুরুলেই বাংলা নববর্ষ--পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর এই উৎসবে নাগরিক বাঙালি ফিরে যেতে চায় তার ঐতিহ্যের কাছে। মাছে-ভাতে বাঙালি চায় তার প্রিয় মাছ ইলিশ। ইলিশ ছাড়া যেনো বর্ষবরণটাই স্রেফ পান্তা হয়ে যায়। আর ইলিশের এই ব্যাপক চাহিদাকেই সুযোগসন্ধানি অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর কাজে লাগান। ব্যতিক্রম হয়নি এবছরও। বরং গত কয়েক বছরের তুলনায় ইলিশের দাম এবার আরও আকাশছোঁয়া। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সময় সংবাদের প্রতিবেদন।
ঢাকা : শেষ মুহূর্তে ইলিশ মাছ কেনার জন্য বাজারে ক্রেতাদের ভীড়। তবে শুক্রবারের চেয়ে আজ শনিবার ইলিশের দাম আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, বৈশাখী উৎসবের কারণেই ইলিশের দাম বাড়তি। শান্তিনগর বাজার ঘুরে আমাদের প্রতিনিধি ফারাহ্ তানজি জানিয়েছেন, ঝাঁকে ঝাঁকে সাজানো রূপালি ইলিশ। আকার অনুযায়ী হাঁকানো হচ্ছে দাম। আছে ক্রেতাদের ভিড়ও। বাংলা নতুন বছরের প্রথম সকালকে পান্তা ইলিশে উদযাপন করতে বাজারের এসেছেন অনেকেই। তবে, দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেছে অসন্তোষ। ক্রেতারা বলছেন, পহেলা বৈশাখে স্বজন-পরিজনরা ইলিশ খেতে চান। প্রতিবছরই কেনার চেষ্টা করি। এবারও এলাম। কিন্তু দাম তো গত যে কোনো বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ৮ হাজার টাকা হালি (৪টা) চাচ্ছেন! মনে হচ্ছে, এবার কেনা সম্ভব হবে না।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দামটা বেশি। তারা বলছেন, আমদানি কম, কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি। প্রায় সবাই-ই তো ইলিশ কিনতে চান। এ কারণেই দাম একটু বেশি। পহেলা বৈশাখের কারণেও দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তারা।
তবে অন্যান্য দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে আগের দামেই। বাজারে রুই বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি আড়াইশ টাকায়, শিং ৭৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০, চিংড়ি পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে চারশো থেকে ৫০০ টাকায় ,আর কই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ টাকায়।
রাজশাহী : পহেলা বৈশাখকে সামনে রাখে রাজশাহী মহানগরীর বাজারে ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সরবরাহ ভালো থাকার পরও দাম নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ক্রেতাদের। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও ছোট ইলিশ সাড়ে ৩শ', মাঝারি ইলিশ মাঝারি ইলিশ ৬শ' ও বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮শ' টাকা কেজি দরে। এতে সাধ থাকলেও সাধ্য নেই দশায় পড়ে হতাশা প্রকাশ করছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, দুয়েকদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
চাঁদপুর : ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রম ঘোষণা করায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে এখন মাছ ধরা বন্ধ। যে কারণে নদীতে জেলেরা জাল ফেলতে পারছেন না। এতে মাছ ব্যবসায়ীরা অনেকটা অলস সময় পার করছেন। এ অবস্থায় বাংলা নববর্ষে দেশের কোথাও যাচ্ছে না চাঁদপুরের সুস্বাদু রূপালী ইলিশ।
সিলেট : বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সিলেটের সবচে বড় মাছের আড়ৎ কাজীরবাজারসহ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না ইলিশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা হরতালে বাইরে থেকে মাছ না আসায় ইলিশের এই চরম সংকট। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের ওমান থেকে আমদানি করা মাছ ইলিশ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি আবদুল আহাদ।
তিনি সময় সংবাদকে জানিয়েছেন, আড়ৎ-এ তিন মাস আগে হিমায়িত ইলিশ মজুদ রাখা হয়েছে। তবে এসব ইলিশের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। আর এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা মধ্যপ্রাচ্যের ওমান থেকে আমদানি করা এক ধরনের মাছকে ইলিশ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। পাইকারি এই মাছের কেজি ১৫০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকায়!
ফলে পহেলা বৈশাখে ইলিশের স্বাদ নেয়ার আশায় ক্রেতারা খুচরা বাজারে না পেয়ে পাইকারি বাজারে ভিড় করলেও সেখান থেকেও তাদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।
স্বাধীনতার পর ইলিশের এমন আকাল কখনো দেখেননি বলে জানিয়েছেন সিলেটের ক্রেতা-বিক্রিতা সবাই।
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :