সারা দেশের ন্যায় উত্তরের শীত প্রবণ জেলা পঞ্চগড়েও তীব্র তাপদাহ বিরাজ করছে। জেলায় প্রায় ৮ মাস ধরে কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আটকে গেছে মানুষের জীবন জীবিকা। অব্যাহত খরায় মারাত্নক সংকট তৈরী হয়েছে পঞ্চগড়ের কৃষিতে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৮ মাস ধরে এ জেলায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে হুমকিতে পড়েছে এ জেলার কৃষি অর্থনীতি।
বিশেষ করে চলমান তাপদাহে মাটি শুকিয়ে মরে যাচ্ছে এ সময়ের অর্থকরী ফসল কাঁচা মরিচ, বাদাম, ভুট্টা, টমেটো। দীর্ঘ মেয়াদী বৃষ্টিপাতের অভাবে মরে যেতে বসেছে এসব ফসলের ক্ষেত। এদিকে দেশের দ্বিতীয় চা অঞ্চল পঞ্চগড়। মৌসুমের সর্বোচ্চ উৎপাদনের সময় এখন। বৃষ্টির অভাবে মরে যাচ্ছে চা বাগান। এদিকে চা পাতার মূল্য কমে যাওয়ায় লোকশানের আশঙ্কায় চা বাগানে সেচ দেয়া বন্ধ রেখেছে চাষিরা। চাষিরা বলছেন, প্রাকৃতিক এ দুর্যাগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
শুধু পঞ্চগড় নয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও তীব্র তাপদাহ আর কাঁচা চা পাতার মূল্য নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উত্তরের পাঁচ জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিরা। তারা বলছেন, অনাবৃষ্টির কারণে সেচ দিতে হচ্ছে বেশি। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরতাপে মাটি শুকিয়ে লাল হয়ে গেছে। চাষিরা বলছেন, গত বছরের ভাদ্র মাসে শেষ বৃষ্টি হয়েছিল। তারপর আর বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ফলে পানির স্তর নেমে গেছে অনেক নিচে। সেচের পানি জমিগুলো ধরে রাখতে পারছে না। এজন্য সেচ বেশি দিতে হয়। খরচ বেড়ে গেছে। অনেক ক্ষুদ্র চাষি টাকার অভাবে বাগানে সেচ দিয়ে পানি দিতে পারছে না। এমন অবস্থায় এবারে চা উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সদর উপজেলার অমরখানা এলাকার চা চাষি শাহিন আলম জানান, ৪৫ দিন পরপর কাঁচা চা পাতা তুলি। এ ৪৫ দিনে আগে দু থেকে তিনবার সেচ দিয়ে পানি দিতে হতো। খরার কারণে এ বছর ৪৫ দিনে পানি দিতে হচ্ছে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার। প্রতি একর চা বাগানে পানি দিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকা।
হাফিজাবাদ এলাকার চা চাষি আকবর আলী জানান, অনাবৃষ্টির জন্য এক একর জমি থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা পাওয়া যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা কেনে মাত্র দশ টাকা দরে। এক একর জমি থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকা পাই। সেচ খরচ, সার কিটনাশক, মুজুরিসহ এক একর জমিতে খরচ পড়ে ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে চা বাগানের যত্ন নিতে পারছি না। চা বাগান মরে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দীর্ঘ ৮ মাস ধরে পঞ্চগড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। তবে এই জেলায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, বিগত ৩০ বছরেও এমন বিপর্যয় আসেনি। ভৌগোলিক কারণে এই জেলায় বালি পাথরের আধিক্য বেশি থাকার কারণে সেচ ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি বৃষ্টিপাতের অভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ দিতে পারছেন না চাষিরা।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমির হোসেন জানান, কাঁচা চা পাতার দাম কমে যাবার কারণে অনেক চাষি চা বাগানে সেচ দিচ্ছে না। তারা লোকশানের আশঙ্কা করছেন।
পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লামনিরহাট ও দিনাজপুর) বর্তমানে নিবন্ধিত ৯টি ও অনিবন্ধিত ২১টি বড় চা-বাগান (২৫ একরের ওপরে) রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৫৩টি নিবন্ধিত ও ৬ হাজার ৩০২টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তনের চা-বাগান আছে।
গত মৌসুমে পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। চা চাষের জন্য ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সবচেয়ে সহনীয়। বর্তমানে এ এলাকায় এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :