কমলা চাষ করে ভাগ্য ফেরাতে চান বগুড়া পৌর এলাকার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোবরধনপুর গ্রামের ফনির মোড়ের আব্দুল আজিজ প্রামানিক। যে জমিতে তিনি এতোদিন আদার চাষ করতেন সেই জমিতে এখন শুরু করেছেন কমলা চাষ। তার সন্তানের অনুপ্রেরণায় তিনি কমলার চাষ শুরু করেছেন।
পোল্যান্ডে চাকরীরত সফটওয়্যার প্রকৌশলী সন্তানের ইচ্ছায় কমলা চাষ শুরু করেন দুই বছর আগে। সন্তান বিদেশে চাকরিতে চলে গেলে তিনি সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে কমলা চাষের হাল ছাড়েননি । কমলার চারা লাগানোর সময় আশপাশের অনেকে তাকে উৎসাহ দেয়ার বদলে পাগল বলেছে। এ্ মাটিতে কেমন করে কমলা চাষ হবে এমন প্রশ্ন অনেকের।
তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে সমতল ভূমিতে সুমিষ্ট কমলা ফলাতে হয়। যারা এখন একদিন তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেছিল তারা এখন কমলার বাগান করতে তার কাছে ছুটে আসছে। তিনি কমলা চাষের পাশাপাশি কমলার চারাও তৈরি করছেন। বগুড়ার আনাচে কানাচে কমলা চাষ ছড়িয়ে দিতে চান আজিজ।
প্রায় ২ বিঘা জমিতে নানা জাতের কমলা গাছ লাগিয়েছেন তিনি। গাছে গাছে নয়, যেন কমলা ধরেছে পাতায় পাতায়। কমলার ভারে নুইয়ে পড়ছে কমলার গাছ। পাকা-আধা পাকা কমলায় বাগান এক অপরুপ সাজে সেজেছে। তার বাগানে ২শত গাছে দার্জিলিং, চায়না,মাল্টা ধরেছে।
চারা রোপণের দুই বছর পর এবারই গাছে ফল এসেছে। অনেকে কমলার বাগান দেখতে এবং কমলা কিনতে আসছেন। কমলা বিক্রি করতে বাজারে যেতে হয় না। বাগানে বসেই কমলা বিক্রি করেন।
যারা তাকে নিরুৎসাহিত করেছিল তারাও কমলার চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চায়। অনেক শিক্ষিত যুবকও এগিয়ে আসছে। দুই বছর কমলা বাগানের পরিচর্যা করেছেন ভালো ফলাফলের আশায়। ফলও পেয়েছেন হাতে নাতে। শুরুতে কম ফলন পেয়েছেন। কিন্তু আগামী মৌসুমে ফলন বেশি হবে এমনটি জানালেন হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুর রহিম।
তিনি জানালেন, গাছ যত বড় হবে ফলনও ততো বাড়বে সুমিষ্ট হবে। এ পর্যন্ত তিনি ১৮০ টাকা কেজি দরে ইতোমধ্যে প্রায় ৫মণ কমলা বিক্রি করেছেন। ৫মণ কমলা বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। এখনও গাছে যে কমলাআছে তা বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় হবে। শুরুতে কমলা চাষের জন্য তার পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়েছে ৩ লাখ টাকা। গাছের বয়স বাড়লে কমলার ফলন বাড়বে ,ফলও মিষ্টতা বাড়বে বলে জানান হর্টিকাল সেন্টারের কর্মকর্তারা।
আগামী বছর প্রতিগাছ থেকে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি কমলার ফলন পাওয়ার আশা করছেন আব্দুল আজিজ। আগামী বছর শুধু কমলা বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন এমনটি আশা তার। কমলা বাগানে তিনি সাথী ফসলও করছেন। আদা, রশুন, পেয়াজ, মরিচ চাষ করেছেন। এ ফসল থেকে আসবে অতিরিক্ত অর্থ। এ জমিতে এক সময় শুধু আদা চাষ করতেন।
আব্দুল আজিজ জানান, তিনি ইউটিউব থেকে চাষ পদ্ধতি শিখে প্রতি গাছে ২ হাজার টাকা খরচ করেছে। আগামী বছর তার বিনিয়োগের সব টাকা উঠে আসবে এবং লাভের মুখ দেখবে। প্রথম অবস্থায় প্রতি গাছে ৩০/৪০ কেজি ফলন এসেছে। আগামী বছর প্রতি গাছে ১৫০/২০০ কেজি ফলন পাবে এমন আশা করছেন। ক্রেতারা তার বাগান থেকে কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
তার ছেলের অনুপ্রেরণায় দুই বছর আগে চুয়াডাঙ্গা ভারত-বাংলদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে চারা সংগ্রহ করে কমলা চাষ শুরু করেন।
জেলা হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচাক আব্দুর রহিম জানান, অনেকে মনে করেন, পাহাড়ী অঞ্চলের ফল কমলা। অনেকে মনে করে সমতল জমিতে কমলা হয়না। তিনি বলেন, এক্ এক ধরনের কমলা এক এক জমিতে হয়ে থাকে। মাটি ভালো হলে সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে ভালো ফলন আসবে আমাদের দেশের মাটিতে। ধীরে ধীরে বগুড়ায় কমলা চাষ বাড়ছে। জেলায় এ পর্যন্ত ২ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে চায়না কমলা বেশি।
তিনি আরো বলেন, আব্দুল আজিজের বাগানের কমলা সম্পূর্ণ বিষ মুক্ত ও সুমিষ্ট। গাছের বয়স যতোই বাড়বে ফলের উৎপাদনও বাড়বে। ফল আরো মিষ্টি হবে। এখানে সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন কীট নাশক ব্যবহৃত হচ্ছে না।
আব্দুল আজিজ জানালেন, আগামীতে কমলা বাগান আরো সম্প্রসারিত করার ইচ্ছা আছে। দেশে কমলা চাষ বৃদ্ধি পেলে বিদেশ থেকে আমদানি কমে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে ।
একুশে সংবাদ/ বা.স.স/ রখ
আপনার মতামত লিখুন :