পেঁয়াজ সংরক্ষণে ‘মডেল ঘর’নির্মাণ করা হচ্ছে রাজবাড়ীতে। সঠিক সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। কৃষকদের এই সমস্যা সমাধানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করে দিচ্ছে। পেয়াজ উৎপাদনে দেশের প্রসিদ্ধ জেলা রাজবাড়ী। দেশে চাষ করা মোট পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদিত হয় এখানে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট গবেষণা করে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘরের নকশা বানিয়েছে। কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা, কংক্রিটের সমন্বয়ে বানানো এই ঘরে তিন স্তরের মাচা রয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পেছনে দেয়া হয়েছে ছয়টি তাপনিয়ন্ত্রণ ফ্যান। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা রয়েছে ত্রিপল। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এসব ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হবে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এসব ঘরে পাঁচজন কৃষক তাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের করমচাঁদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক লুৎফর রহমানের বাড়ির ওঠানের একপাশে মডেল ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এবছর ৬০০ মন পেঁয়াজ পেয়েছি। সব পেঁয়াজ একসঙ্গে বিক্রি করা সম্ভব না। এজন্য নিজেদের মত করে সংরক্ষণ করি। কিন্তু এক দেড় মাস পর থেকেই পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়। আমরা টিনের ঘরে মাচা করে রাখি। টিনের গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই মডেল ঘরও টিনের। এই ঘরে পেঁয়াজ রেখেছি। ঘরটিতে আলো বাতাস প্রবেশ করে। আবার ফানের ব্যবস্থা আছে। এজন্য এখনই বোঝা যাচ্ছে পেঁয়াজ পচবে না।
একই গ্রামের কৃষক আলিমুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রধান অর্থকরী ফসল পেঁয়াজ। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা নিয়েই চিন্তা। নিজেদের মত করে রাখি। দেখা যায় ছয় মাস পর ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এই মডেল ঘর দেখতে এসেছি। ইচ্ছা আছে আগামী বছর আমি নিজেই এই আদলে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘর নির্মাণ করবো। আমি কালুখালী উপজেলাতেও খবর নিয়েছি। যারা গত বছর এই ঘরে পেঁয়াজ রেখেছিল তাদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়নি। সাত থেকে আট মাস পেঁয়াজ ভালো ছিল। তবে সরকার যদি এই মডেল ঘর গ্রামে গ্রামে আরও বেশি পরিমাণ করে দিত তাহলে আমাদের বাইরের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হত না।
রাজবাড়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা মো. রাজীব খান বলেন, একটি মডেল ঘরে ৩০০ মন পেঁয়াজ রাখা যাবে। পাঁচজন কৃষকের জন্য একটি ঘর করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য এই ঘর দেখে চাষিরা এই মডেলে ঘর নিজেরা নির্মাণ করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবে। তাহলে তাদের পেঁয়াজ নষ্ট হবে না। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে কৃষক পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছে। বাঁকি ১৫টি ঘরের কাজ কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে। আগামী অর্থ বছরে আমরা পাংশা উপজেলায় ৩০টি এই মডেল ঘর নির্মাণ করবো।
একুশে সংবাদ/য.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :