রাজধানী ঢাকার খুবই সন্নিকটে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের অবস্থান। মাটি, আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় কালীগঞ্জের চাষীরা মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছে। উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের ভিটি বাঘুন গ্রামে ব্যাপক সারা ফেলেছে মো. জামির হোসেনের মাল্টা বাগান। জমির উচু শ্রেনীর হওয়ায় মাল্টা চাষের জন্য উপযুক্ত।
সরেজমিনে জামির হোসেনের মাল্টা বাগান ঘুরে দেখা যায়, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রায় ৭ বিঘা জমিতে ২০২০ সালে মাল্টা চাষ শুরু হয়। সরকারী ভাবে ৩শ টি ও পরে ১৮০ টি চারা দেয়। কাটিং কলমের মাধ্যমে চারার পরিমান বৃদ্ধি করে বর্তমানে বাগানে ৭ শত বারি-১ জাতের মাল্টার চারা রয়েছে। বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় মুহূর্তেই। সবুজ পাতার মাল্টা গাছে সবুজ রংয়ের শত শত মাল্টার দোল দেখে চোখ ফেরানো দায়।
চাষী জামির হোসেন জানান, ২০২০ সালে প্রথম ধাপে সরকারী ভাবে মাল্টার বাগান শুরু করি। বর্তমানে ৭শত মাল্টা গাছ রয়েছ। গত দুই বছর গাছের সাইজ ছোট থাকায় তেমন ফলন হয়নি। এবার গাছ বেশ বড় হওয়ায় মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বছরের শুরুতে মার্চ মাসের দিকে গাছে মুকুল আসে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফলন শেষ হয়ে যায়। প্রথমে এক বিঘা জমিতে ছোট বাগান করি। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ফল চাষের উপর উপজেলা, জেলা ও রাজধানীর খামারবাড়ি হতে ফল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যাপকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করি। সে কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের মো. মোমরুদ খানের পূত্র।
বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত মো. শরিফুল বলেন, বারি-১ জাতের মাল্টা ফলের সাইজ বড় হলে ৪ টায় কেজি গয়। সাইজ ছোট হলে ৬ থেকে ৭ টায় কেজি হয়। খুচরা প্রতি কেজি ৮০ হতে ১০০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে চারা গাছে পর্যাপ্ত পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। গাছে বছরে ৩ বার সার প্রয়োগ করতে হয়। টিএসপি,পটাশ, ইউরিয়া এবং বোরন সার একসাথে মিশিয়ে গাছের চার পাশের মাটিতে প্রয়োগ করতে হয়।
স্থানীয় মৈশাইর বাজারের ফল কিনতে আসা জহিরুল ইসলাম জানান, বারি-১ (পয়সা মাল্টা) সবুজ মাল্টা খেতে খুবই রসালো ও সুস্বাদু। মাল্টা চাষের ফলে এলাকার কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। দেশে মাল্টা চাষের ফলে বিদেশী মাল্টার আমদানি কমবে। এক কথায় বলা যায় আমের রাজ্যে মাল্টা চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে এলাকাবাসীর।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম জানান, লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রাসারণ,ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে উপজেলায় প্রায় ১৭ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে বারি-১(পয়সা মাল্টা) জাতের পরিমান বেশী।
গাজীপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, বারি-১(পয়সা মাল্টা) জাতের মাল্টা আকারে বড় এবং খুবই সুস্বাদু। কালীগঞ্জ অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি হতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মাল্টার সিজন। মাল্টা চাষে অত্র এলাকার মানুষজনের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থকরী ফসল চাষে কৃষি বিভাগ উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ এবং উপকরণ সহযোগিতা প্রদান করছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :