ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ২৪ বছর আগে বিলুপ্ত লাফা বেগুন ফিরে পাচ্ছে যৌবন। গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুনের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। বেগুনের আকৃতি গোল কিন্তু দেহ মসৃণ নয়। ডেউ খেলানো খাঁজ কাটা। দেশের ঐতিহ্যবাহী এ বেগুনের নাম লাফা বেগুন। অনেকেই একে গোল বেগুন বলে ডাকে। বড়া ও ভাজির জন্য প্রসিদ্ধ ও সুস্বাদু এ লাফা বেগুন। এক সময়ে এই উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় লাফা বেগুনের চাষ হতো। একটি বেগুনের ওজন হতো ২/৩ কেজি পর্যন্ত। কোন প্রকার সার প্রয়োগ ছাড়াই এ বেগুন উৎপাদন হতো।
বেগুন চাষী ছামিদ ও হাফিজ উদ্দিন বলেন, বিলুপ্ত হওয়া এই লাফা বেগুনের বীজ অনেক কষ্ট করে ইসলামপুর থেকে এনে এক একর পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে আমরা চাষ করেছি। প্রায় ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত বিক্রি করেছি প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মত। চলতি মৌসমে বাজারে ৪ হাজার ৮শ’ ৫ হাজার পর্যন্ত ১ মণ বেগুন বিক্রি করছি। দর ভাল থাকায় আশা করছি, সর্ব মোট প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার উপরে বেগুন বিক্রি করতে পারব।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৭শ’ ৫০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের বেগুনের চাষ হচ্ছে। উপজেলার চরআলগী, টাঙ্গাব, দত্তের বাজার ও সালটিয়া ইউনিয়নে বেগুনের চাষ হয়ে থাকে। এই ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১৬শ’ পরিবার বেগুন চাষে সুফল ভোগ করবে। চরআলগী ইউনিয়নের লাফা বেগুন বাংলাদেশের ঐতিহ্য এটাকে আমরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি বলে জানান উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম তুহিন।
কৃষক রিপন ও গোলাম হোসেন বলেন, লাফা বেগুন চাষের জন্য উন্নত বীজ না থাকায় এর বিকল্প হিসেবে আমরা ভোলানাথ ও ইসলামপুরী বেগুনের চাষাবাদ করছি। ইসলামপুরী ও ভোলানাথ বেগুন দেখতে অনেকটা লাফা বেগুনের মত দামও ভাল। তবে খাওয়ায় স্বাদ কম। এবার চরআলগী ইউনিয়নের হাফিজ উদ্দিন ও ছামিদ মিয়া ২৪ বছর পর লাফা বেগুনের চাষ করে গফরগাঁও তথা ময়মনসিংহের ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
লাফা বেগুন এর অপর চাষী জীবন মিয়া জানান, বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে দু-একজন চাষী লাফা বেগুনের চাষ করেন। আগের মত আর এখন লাফা বেগুনের চাষ হয়না। ভরা শীত মৌসুমে চলে লাফা বেগুনের চাষ। রাতের শেষ প্রহরে মাটির অলট-পালট করে দিতে হয়। প্রতি সপ্তাহে অল্প সেচ দিতে হয়। এ জাতের বেগুন গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ রস টেনে নেয়। কৃষক জীবন মিয়ার দাবী জরুরী ভিত্তিতে লাফা বেগুনের ভাল বীজ সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা বলেন, চলতি রবি মৌসুমে আমরা কৃষকদেরকে আগাম সবজিসহ লাফা বেগুনের চাষে সব রকম সহযোগিতা করে আসছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছে এক ইঞ্চি জমিও অনবাদি রাখা যাবে না, বর্তমানে কৃষি বিভাগ চরাঞ্চলে অনাবাদী জমিসহ সব জমিতেই ফসল চাষ করার জন্য বিনামূল্যে বীজ, সারসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতিউজ্জামান বলেন, গফরগাঁওয়ের আবহাওয়া ও মাটি বেগুন চাষের জন্য উপযোগী। আশা করছি, চলতি রবি মৌসুমে বেগুন চাষ আমাদের লক্ষ্য মাত্রা এবং উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
একুশে সংবাদ/ত.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :