চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, শিক্ষকদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব দূর করতে হবে। এখনকার অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেই প্রক্টর, প্রো-ভিসি কিংবা ভিসি পদে প্রবেশের জন্য চেস্টা করেন। বাস্তবতার সাথে তাদের সম্পর্ক অনেক কম।
একজন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক যে শুধু ইতিহাসের শিক্ষক, এ ধরনের ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাদেরকে ইতিহাসবিদ হতে হবে। গবেষণার পরিধি বাড়াতে হবে। গবেষণা মূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমেই শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে বেঁচে থাকেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে ইতিহাস বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে `বাংলাদেশে ইতিহাস চর্চা: সমস্যা ও বাস্তবতা ` শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা বেবির সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আরিফা সুলতানা।
মুনতাসীর মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্তনে ৩ টি বিষয় বরাবরই ভূমিকা রেখেছে। সেগুলো হলো দর্শন, ইতিহাস ও সাহিত্য। এগুলোর সাথে কিন্তু বাজার অর্থনীতির সম্পর্ক নেই। তবে তাই বলে যে ইতিহাস পড়ে কেউ বেকার আছে তা ঠিক নয়। বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন যখন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চালুকরণের উদ্যোগ নেন তখন সেখানে তিনি ইতিহাস বিষয়টিকে প্রথম দিকেই সংযুক্ত করেন।
তিনি বলেন, আমি স্বাধীনতার পরে শিক্ষকতায় যোগদান করি। ইতিহাসের সাথে থেকেছি, লড়েছি। ইতিহাসকে নির্মান করতে দেখিছি। আমি যখন গবেষণা শুরু করি তখন আমার লক্ষ্য ছিল প্রত্যেক স্তরের মানুষদের কাছে ইতিহাস পৌঁছে দেয়া। এজন্য আমি মাতৃভাষায় ইতিহাস চর্চার ওপর গুরুত্ব দেই। তবে বর্তমান কালের শিক্ষকরা হীনমন্যতায় ভোগেন বাংলায় ইতিহাস চর্চা করতে। বাংলা ভাষায় ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব যদি না থাকত তাহলে আমার লেখা বইগুলো অন্যান্য ভাষায় কখনও অনুবাদ হতো না।
তিনি আরও বলেন, ইতিহাস না পড়লে মানবিক চেতনা পরিপূর্ণ হয় না। যে যে বিষয়ই পড়ুক না কেন, তাকে মানবিক বিষয়ে পড়তে ও জানতে হবে। বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধারা চলে আসছে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ ধারা পরিপূর্ণ ভাবে চালু করা উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আরিফা সুলতানা বলেন, আমরা ইতিহাসের শিক্ষক হয়েছি কিন্তু ইতিহাসবিদ হইনি। আমাদের দেশে যদিও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় সীমাবদ্ধতা আছে। তবে তাই বলে যে আমাদের দোষ নেই, তা নয়। আমরা কখনো নিজেরাও চেস্টা করিনা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবিও জানাই না। প্রতিবছর আমাদের গবেষণামূলক কার্যক্রমের জন্য অনুদান দেয়া হয়। কিন্তু আমরা সেকেন্ডারি সোর্স থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করি। আমাদের অধিকাংশের নিজস্ব মৌলিক গবেষণা একেবারেই নেই বললে চলে। এক্ষেত্রে আমাদের আত্মনিশ্লেষণ জরুরী। একই সাথে আমাদের মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করতে হবে। মেধা ও মননকে কাজে লাগাতে হবে।
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. শেখ মঞ্জুরুল হক, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এটিএম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক ড. একেএম জসীম উদ্দিন, অধ্যাপক ড. পারভীন জলি সহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ও বিভিন্ন বর্ষের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী।
একুশে সংবাদ/আ.র.আ.প্রতি/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :