ঐতিহ্যবাহী সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে দিনের পর দিন উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের বিপর্যয়ের কারণে প্রতিষ্ঠানটির গলার কাটায় পরিণত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিত না থাকা, শিক্ষার্থীদের সচেতনতার অভাব, অবকাঠামোগত সমস্যা, শিক্ষক সংকটকে দায়ী করছেন কলেজ প্রশাসন।
সম্প্রতি প্রকাশিত এবছরের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে এ বছর পাশের হার ৮০.০৯ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৪২ জন। জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৫ জন এবং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ জন ও মানবিক বিভাগ থেকে ৪ জন পেয়েছেন। এ বছর ২১২৫ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছেন ১৭০২ জন। অর্থাৎ অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২৩ জন।
গত বছর সোহরাওয়ার্দী কলেজের পাশের হার ছিল ৮০.৪৪ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ জন। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪০৬ জন। ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সোহরাওয়ার্দী কলেজের পাশের হার নেমে আসে ৮৭.৬৮ শতাংশ এ এবং জিপিএ ৫ পায় ১১৯ জন। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২৪ জন।
২০২১ সালের (সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত) উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার ছিল এসে ৯৬.৭৩ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পায় ৯৫ জন। এবছরও অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০১ জন।
ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে কলেজটির উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, "উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পারিবারিক ও জীবন জীবিকা নির্বাহের কারণে বেশিরভাগই ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারে না। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের একাধিকবার দায়িত্ব দিয়েও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে পারেননি। ক্লাসে শিক্ষক পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের আনুপাতিক হারে শিক্ষকদের দায়িত্ব ভাগ করে মনিটরিংসহ একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আশানুরূপ সাফল্য আসেনি। উচ্চ মাধ্যমিকের আশানুরূপ ফলাফল পেতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার বিকল্প নেই।"
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে কলেজকে আকর্ষণীয় করতে বিভিন্ন ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা করা, নির্ধারণ রুটিন ব্যবহার করে ইন্টারমিডিয়েটের ক্লাসগুলো চলমান অবস্থায় স্নাতকের ক্লাসগুলো বন্ধ রাখাসহ একাধিক পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে অত্র কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের কলেজে যারা ভর্তি হয় তাদের বেশিরভাগই মাধ্যমিকের ফলাফল থাকে মাঝামাঝি ধরনের। সেক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন এখানকার শিক্ষকেরা। ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে অবকাঠামোগত সমস্যা, ক্লাসরুম সংকট, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক সংকটকেও দায়ী।"
তিনি আরও বলেন, "এই প্রতিষ্ঠানের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে আজ থেকেই আমার দায়িত্ব শুরু হল। আমি এই প্রতিষ্ঠানের ফলাফলের আশানুরূপ মানোন্নয়নের ব্যাপারে কাজ শুরু করবো এবং এই ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকের আন্তরিক সহায়তা একান্ত কাম্য।"
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :