ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অভ্যন্তরের থানা সরিয়ে না নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বরাবর ম্মারকলিপি দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় উপাচার্যের সভাকক্ষে এ প্রসঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে থানা স্থাপন প্রসঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পৌঁছে দিতে উপাচার্য বরাবর একটি আবেদনপত্র ও বিশিষ্টজনের অভিমত সংবলিত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কপি সহ স্মারকলিপি দেন।
এসময় তারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত থানার যৌক্তিক গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তারা ইবি থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করার জন্য উপাচার্যকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদনের অনুরোধ জানান।
স্মারকলিপিতে তারা বলেন, দেশের গৌরব, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাতটি ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় দীর্ঘ দিন ধরে ইবি থানার কার্যক্রম চলে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকার মানুষের মতামত না নিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই থানাকে সরিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে দুর্গম ঝাউদিয়ায় নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। অথচ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানানো হয়নি। অবৈধ সরকারের এক তরফা সিদ্ধান্ত বাতিল করে ও মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে পছন্দমতো জায়গায় ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা’ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।
এসময় কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশিদুজ্জামানের সঞ্চালনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল হাসান লাবু, সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দীক, উপ-রেজিস্টার জাহাঙ্গীর আলম, ড. শহীদুল ইসলাম, এস এম আসাদুজ্জামান মিল্টন, নুরুন্নবী বাবু, আনিচুর রহমান, আলমগীর হোসেন, এস আর শিপন, অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন ও যুগ্ম-আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশিদুজ্জামান বলেন, ঝাউদিয়ার লোকজনের জন্য আলাদা পুলিশ ক্যাম্প হতে পারে। কিন্তু সেটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা সরিয়ে নিয়ে কোনোভাবেই নয়। এই থানাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সকলের জন্যই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমরা চাই ইবি থানা যেন এখান থেকে কোনোভাবেই স্থানান্তরিত না হয়৷ আমরা আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য যেকোনো ধরনের কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি৷
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দীক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে অরক্ষিত করে আমরা অন্য কারো নিরাপত্তার কথা ভাবতে পারিনা। আগামীতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে যাতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কায় না পড়ে সেজন্য আমরা এই থানা অন্য কোথাও নিতে দিব না৷ আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিবেন।
এ বিষয়ে ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য থানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই থানা এখানেই রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এছাড়া এ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করলে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও বেশি এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আমার কোনো এখতিয়ার নেই। তবুও আপনাদের সকলের সহযোগিতায় আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করবো।
এরআগে দুপুর দেড়টায় কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশিদুজ্জামানের কক্ষে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, গত ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর নিকার কমিটির সভায় ঝাউদিয়াকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর সম্মতিতে থানা স্থানান্তর করে এখানে পুলিশ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। সে সময় প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানানো হয়নি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :