দাবি আদায়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটকে তালা দিয়েছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষের দাবিতে রোববার বিকেল ৪টার সিডিউলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহনকারী কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহগামী বাস আটকে আন্দোলন করেন তারা। এতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে আটকে পড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার পরেও এমন ঘটনাকে প্রশাসনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা। এর দায়ভার হিসেবে সকলেই আঙুল তুলছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের দিকে। সবশেষে এক ঘন্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে ফটকের তালা খোলেন তারা।
ক্যাম্পাস সূত্রে, রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রেনিকক্ষ বরাদ্দ নিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাংগীর আলম। একপর্যায়ে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সিদ্ধান্তে শ্রেণিকক্ষ অর্ধেক-অর্ধেক ভাগাভাগির সিদ্ধান্ত হলে ইতিহাস বিভাগ তা মানলেও আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানেনি। তারা নিজেরা তৃতীয় তলার অর্ধেক ও বাকি অর্ধেক ডিন অফিসের জন্য বরাদ্দ এবং ইতিহাস বিভাগকে চতুর্থ তলায় যাওয়ার আহ্বান করেন। কিন্তু ইতিহাস তা না মেনে তৃতীয় তলার অর্ধেক নেওয়ার দাবি জানায়। একপর্যায়ে তারা উদ্ভুত সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য উপ-উপাচার্য এয়াকুব আলীকে তোপের মুখে ফেলেন।
পরবর্তীতে বিকেল ৪ টায় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিকেলের সিডিউলের বাস আটকে রেখে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন করেন। পরবর্তীতে এক ঘন্টা পর দাবি আদায় হলে ফটক ছাড়েন তারা। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের ভেতরে আটকে পড়া বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মেরুদন্ডহীনতার কারণে বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই অবরুদ্ধ করতে পারে না।
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আব্দুল আজিম বলেন, শহরে থাকা আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই টিউশনি থাকে। দুইদিন পরপর কিছু শিক্ষার্থী এসে তাদের নিজেদের দাবি আদায়ে ফটকে তালা দিয়ে সবাইকে বিপাকে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব নিয়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় বারবার এসব ঘটে।
ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, কিছু শিক্ষার্থীর নিজেদের দাবি আদায়ে সকলকে আটকে রাখার কোনো মানেই হয় না। প্রশাসনিক দুবর্লতার কারণেই তাদের নিষেধাজ্ঞা কেউ মানেনা। প্রশাসনের কাছে দাবি দাওয়া নিয়ে তারা ফটক না আটকে প্রশাসন ভবনে তালা দিতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, প্রশাসনকে বিপদে ফেলার জন্য কোন একটি কুচক্রী মহল এর পেছনে কাজ করছে। এজন্য সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান করা দরকার।
নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে প্রধান ফটকে তালা দেওয়ার বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এর কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে পারেননি। প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার পরও এমনটা করা দুঃখজনক। আগামীকাল আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি বসবো। তারপর সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
এরআগে, গত ৩০ নভেম্বর শনিবার যুগান্তরে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দাবি আদায়ে হাতিয়ার, পান থেকে চুন খসলেই প্রধান ফটকে তালা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরে ২৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি আদায়ে প্রধান ফটক আটকাতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেসময় ফটকে আটকালে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :