ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উপ-উপাচার্য হয়েও পরিবহন প্রশাসক পদ আঁকড়ে ধরেছেন অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী। ‘উপাচার্যের আস্থাভাজন’ হওয়ার কারণে সেই পদে এখনো পরিবর্তন আসছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এদিকে উপ-উপাচার্য পরিবহন প্রশাসক থাকায় দপ্তরটির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণেও দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে বলে দপ্তরটির সূত্রে জানা গেছে। তারাও চান পরিবহন দপ্তরে পৃথক একজন এবং সময় দিতে পারবেন এমন কাউকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হোক।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরিবহন প্রশাসক পদ থেকে পদত্যাগ করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের পর ৩০ সেপ্টেম্বর পদটিতে আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলীকে পরিবহন প্রকশাসক হিসেবে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ নিয়োগ দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মো. নসরুল্লাহ। পরবর্তীতে তিনি ২ ডিসেম্বর উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। তবে এই পদে নিয়োগ হওয়ার পরেও তিনি পরিবহন প্রশাসক পদ ছাড়েননি। উপাচার্যও গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরটিতে তাকে পরিবর্তন করেননি।
পরিবহন দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, উপ-উপাচার্য ও পরিবহন প্রশাসক একই ব্যক্তি হওয়ায় দপ্তরটিতে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ব্যস্ততার কারণে দপ্তরটির সার্বিক কল্যাণে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। ফলে কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দ্রুত সমাধান বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই দপ্তরে সতন্ত্র ব্যক্তি দায়িত্বে থাকলে দীর্ঘসূত্রিতা থেকে রেহাই পাবে দপ্তরটি। ফলে পরিবহন সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যাবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তর। একদিন পরিবহন না চললে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে স্বতন্ত্র লোক প্রয়োজনে। তা না হলে পরিবহনের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। ড. একাকুব আলী প্রো-ভিসি হিসেবে থাকার পরেও পরিবহন দপ্তর আঁকড়ে ধরে রাখা বেমানান। ভিসির আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তিনিও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, বিভিন্ন সময় ডিন, বিভাগীয় সভাপতি সহ বিভিন্ন দায়িত্বে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা কাজ করেছেন। তবে আমারা জানামতে পরিবহন দপ্তরে এমন ঘটনা ঘটেনি। দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা এড়াতে সেখানে স্বতন্ত্র ব্যক্তি প্রয়োজন।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, পরিবহন ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর দুটি পদ একরকম না। পরিবহন প্রশাসনের একটি অর্গান। আর ভিসি, প্রোভিসি, ট্রেজারার প্রশাসনিক প্রধান। সুতরাং এরকম দায়িত্ব পাওয়ার পর পরিবহনের দায়িত্বটা ডেলিগট করা উচিত ছিল। এটি না ছাড়ার দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথমত প্রশাসনিক ব্যর্থতা, দ্বিতীয়ত অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে৷ আমি ইতোপূর্বে ইবিতে এমনকি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন রেকর্ড দেখিনি। পরিবহনের সাথে অনেক বিষয় সম্পৃক্ত।দুটি জায়গায় দায়িত্ব পালন করা মানে একইরকম কাজ না করা। আমরা তো সুপারম্যান না। আমি স্পতত বক্তব্য হচ্ছে, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত পদটিতে নতুন কাউকে দেওয়া উচিত।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, এর আগে অনেকেই ২/৩ পদে দায়িত্ব পালন করেছে। আমি যে প্রথমবার এমনটা না। আমরা ওই দপ্তরের জন্য যোগ্য লোক পাচ্ছি না। আওয়ামীপন্থী যারা ফ্যাসিস্টের দোসর তারাই রয়েছে ২৬১ জন শিক্ষক। তারা বাদে বাকি যারা আছে বিভিন্ন দপ্তরে সেট হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। নানা লোকে নানা অভিযোগ দেবে, নানান কথা বলবে ওসবে কান দেওয়া যাবে না।
এদিকে অতি দ্রুত পরিবহন প্রশাসক পদে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মো. নসরুল্লাহ।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :