টানা তিন দিনের ছুটি শেষে সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল ৮টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মোহম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, কাওরানবাজার, সোনারগাঁও, সাতরাস্তা, মহাখালী, বনানী, কাকলী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, গুলশান-১, গুলশান-২, লিংকরোড, প্রগতি সরণিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় যানজটের ভয়াবহ চিত্র।
যানজট থেকে বাদ যায়নি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও। মূল সড়কে নামার মুখে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে দেখা যায় গাড়িগুলোকে। কোথাও কোথাও যেন ঘুরছিল না গাড়ির চাকা।
আগারগাঁও মোড়ে গুলশানগামী মোটরসাইকেল আরোহী শরিফ বলেন, রমজান মাসে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে। বিকেলে তাই সময় থাকতে বাসায় পৌঁছানো যাচ্ছে। সকালেও ক’দিন স্বস্তিতে অফিসে এলাম। আজ চিত্র উল্টো। আগারগাঁও থেকে মহাখালী ফ্লাইওভারে উঠতেই ৩৫ মিনিট। এরপর কাকলী, বনানী, গুলশান-২ পেরিয়ে অফিসে ঢুকতে দেড় ঘণ্টা।
সড়কের অবস্থা দেখে হেঁটেই তেজগাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ইমরান আলী। মোহাম্মদপুর থেকে ছেড়ে আসা এক যাত্রী উড়োজাহাজ সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছানোর পর ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, রোজা রেখে কতক্ষণ হাঁটতে পারবো জানি না। তবে সড়কের যে অবস্থা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায়ও দেখছি না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগের শেরে বাংলা নগর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. তারেক সেকান্দার বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। অফিস টাইম ও স্কুল টাইম একই সময় হয়ে গেছে। যে পরিমাণ যানবাহন সড়কে সকাল আটটা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে নামছে তা সামাল দেয়া কঠিন। শুধু শেরে বাংলা নগর এলাকায় নয়, চারদিকে সকাল আজ বাজে গেছে। তবে সকাল সোয়া ১০টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। রাস্তা এখন সচল।
ট্র্যাফিক গুলশানের (ট্রাফিক-মহাখালী জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম রনি জানান, মহাখালী এলাকার অবস্থা ভালো না। তিনদিন ছুটি ছিল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাস বিভিন্ন জেলার গন্তব্যে ছাড়ার চাপ বেড়েছে। তাছাড়া ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে যানজট বেড়েছে।
ট্রাফিক-গুলশানের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মোমেন বলেন, রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। কিছুই করার নাই। গাড়ির পেছনে গাড়ি। এক ইঞ্চি জায়গাও তো খালি রাখার উপায় নাই। সামনের গাড়ি এগুতে না পারলে পেছনের গাড়ির তো সামনে যাবার উপায় নাই। আমাদের ট্রাফিকের সব সদস্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। যানজট বা গাড়ির চাপ কমাতে। তবে আজকে একাধিক স্থানে ভিভিআইপি মুভমেন্ট আছে। তার উপর তিনদিন পর মানুষ ঘর থেকে বেশি বের হয়েছে। তাই গাড়ির সংখ্যাও বেশি।
রমজানে ঢাকার যানজট নিরসনে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, সেবা সংস্থা, ব্যবসায়ী, দুই সিটি করপোরেশনসহ ২২টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। রমজান শুরুর আগে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, যানজট লেগেই থাকে এবং জনসমাগম বেশি এমন শতাধিক স্পট চিহ্নিত করেছে ডিএমপি। ইফতারের আগ মুহূর্তে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন ও প্রতিটি থানা পুলিশকে এ সময়ে ট্র্যাফিক সদস্যদের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে থানা পুলিশকে ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। সব ট্র্যাফিক ও ক্রাইম বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগানো হবে। এ ছাড়া ট্র্যাফিক বিভাগে ফোর্স বাড়ানো হচ্ছে। রমজানে সড়কে উন্নয়নকাজ এবং খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ওয়াসা, তিতাস, সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে সোয়া ২ কোটি মানুষ বাস করে। পুলিশ এখানে রাতারাতি যানজট সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। তাই সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
একুশে সংবাদ/ঢ.প.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :