প্রতিদিন ব্যস্ততম মহাসড়ক দিয়ে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে, ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তার আইল্যান্ড টপকে, সুযোগ বুঝে দ্রুতগতির পরিবহনের সামনে দিয়েই দৌড়ে পার হচ্ছেন পথচারীরা। অনেককেই আবার হাতের ইশারায় চলমান গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায়।
রাজধানীর মহাখালীতে এমন চিত্র প্রতিনিয়ত দেখা যায়। ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করা গাড়ির সামনে দিয়ে হাত ইশারা করে পারাপার হচ্ছে পথচারীরা। চলন্ত গাড়ি থামিয়ে দলবেঁধে অথবা ফাঁক-ফোকর বুঝে সড়কের মাঝপথ দিয়ে মহাসড়ক পার হচ্ছেন পথচারীরা। অথচ ওপরে সুন্দর একটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। কিন্তু সেখান দিয়ে যাচ্ছে না পথচারীরা। এরইমধ্যে কোন রকমে পিছিয়ে নেই বাস চালকরাও, রীতিমত দেখা যায় নির্দিষ্ট স্থানে বাস না থামিয়ে মহাসড়কের যেখানে সেখানে, মহাসড়কে উপরে, মাঝপথে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে।
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে কেন নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন এক পথচারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাতে সময় কম তাই তাড়াতাড়ি করে পার হলাম। পরে এমনটা হবে না। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার বিষয়ে এক নারী বলেন, এখান দিয়ে দ্রুত আসা যায়। ব্রিজে উঠতে সময় লাগে, ওঠাও ঝামেলার। কিছুদূর ঘুরে আসতে হয়। যদি দুর্ঘটনা ঘটে যেত জানতে চাইলে বলেন, কী আর করার এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী মহাসিন বলেন, গাড়ি যখন চলাচল করে তখন তো পার হই না। গাড়ি না থাকলে পার হই। ছোটবেলা থেকে পার হতে হতে অভ্যাস হয়ে গেছি।
রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, বেলিরোড, শাহাবাগ, ফার্মগেট, বিজয়সরণি, আসাদগেটসহ অনেক এলাকাতেই এমন চিত্র দেখা গেছে।
পথচারীদের অভিযোগ, দিনের বেলায় প্রচন্ড রোদের তাপের কারণে অনেকে এইসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে না। আবার রাতে ফুটওভার ব্রিজে লাইটের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তখন এটি ভবঘুরে, মাদকাসক্তদের দখলে থাকে। এছাড়া রাতে ছিনতাইকারীদের ভয়ে অনেকে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে চান না বলে অনেকেই জানান।
এসময় এক কলেজ ছাত্রী বলেন, পড়াশোনা করার কারণে প্রতিদিনই এই রাস্তা পার হই, আজ হাতে সময় কম তাই নিচ দিয়ে আসলাম। কিন্তু ওপর যে ফুটওভার ব্রিজটি রয়েছে সেটাতে প্রায় সময় কিছু বখাটে ছেলে আড্ডা মারতে দেখা যায় সে কারণে মাঝে মধ্যে ফুটওভার ব্রিজে উঠিনা।
ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে শিশুসন্তান নিয়ে পার হচ্ছেন রাহেলা। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিচ দিয়ে পার হচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়ের স্বল্পতার কারণে নিচ দিয়ে আসা। সময়ের মূল্য বেশি নাকি জীবনের মূল্য বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনের মূল্য বেশি জেনে শুনে এমনটি করেছি কারণ, স্কুলের সময় প্রায় শেষ। আর করবো না।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুটওভার ব্রিজের যে উচ্চতা থাকা প্রয়োজন মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজগুলোর উচ্চতা তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বিভিন্ন এলাকার ফুটওভার ব্রিজগুলো পথচারীরা ব্যবহারে উৎসাহ পান না।
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসস্ট্যন্ড এলাকায় মানুষের জীবনের ঝুঁকি কমানোর জন্য ২০২০ সালে রোড সেফটির আওতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করে।
এ বিষয়ে পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, জনগণ যে পরিমাণ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করার কথা, সে পরিমাণ ব্যবহার করছেন না। ফুট ওভারব্রিজের নিচে দাড়িয়ে জোরপূর্বক যাত্রীদের ব্রিজ ব্যবহার করতে বাধ্য করা প্রতিদিনের কাজ। তারপরও জনগণকে সচেতন করতে চেষ্টা করছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :