রাজধানী জুড়ে গ্যাসের জন্য হাহাকার চলছে। কোথাও চুলা জ্বলছে না। যে এলাকায় চুলা জ্বলছে সেটাও নিভু নিভু। বাসাবাড়িতে রান্না করতে না পারায় স্বল্প আয়ের মানুষকে বেশি দামে হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও গভীর রাতে মিটমিট করে চুলা জ¦ললেও রান্না করতে পারছেন না গৃহিনীরা।
সরজমিনে জানা গেছে, রাজধানীর ডেমরা-যাত্রাবাড়ি, কদমতলী-টিকাটুলি,ওয়ারীসহ ১০টি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কোথাও দিনে চুলা জ্বলছে না। গভীর রাতে এমনকি রাত ২টা, ৩টার সময় চুলা জ্বললেও গ্যাসের চাপ খুবই কম। সাধারণ মানুষ তো বটেই যাদের বাসায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং শিশু রয়েছে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। তিতাস গ্যাস কোম্পানি কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে রাখছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাঝরাতে গ্যাসের চাপ থাকলেও সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।
কথা হয় যাত্রাবাড়ির বউবাজার মসজিদ গলির বাসিন্দা ও ৪৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মো: শরিফ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ২/৩ মাস যাবত বাসার লাইনে গ্যাস নেই। গ্যাস সংকট মহা মারি আকার ধারণ করেছে। ঘরের মহিলারাই মহা সংকটে কারণ রান্না কাজতো তাদের করতে হয়। কোনো ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগে গ্যাস বন্ধের আগে জানিয়ে দিতো তিতাস। এতে বিপাকে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
একইকথা বলেছেন, উত্তর যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা মো: বাদল। তিনি বলেন, সিলিন্ডার গ্যাস কিনে বাসায় রান্না করা হচ্ছে। লাইনে কোনো গ্যাস নেই প্রায় ৬ মাস ধরে। কিন্তু প্রতিমাসে সরকারকে গ্যাসের বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। বউ বাজারের বাসিন্দা মো: বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে প্রতিমাসে বিল দিচ্ছি। বিনিময়ে তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারনা করছে। এটা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। আশা করছি সরকার আমাদের দিকে নজর দেবেন।
দনিয়া এলাকার বাসিন্দা আলী আহমেদ মিয়াজী বলেন, গত ৪-৫ দিন যাবৎ লাইনের গ্যাস নেই। রাত ১১টার পর মাঝে মধ্যে আসে ভোরে চলে যায়। রান্না করতে অতিরিক্ত সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে জনজীবনে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একইকথা বলেছেন শনির আখড়ার বাসিন্দা শাহানাজ আক্তার। তিনি বলেন, খুব অশান্তি মধ্যে আছি। সারা রাত্রি অপেক্ষা থাকি কখন গ্যাস আসবে। ডেমরার সারুলিয়া এলাকার গৃহিণী ফারজানা বেগম বলেন, আগে গ্যাস না থাকলে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হতো। এখন ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস থাকে না। আগে সামান্য গ্যাস থাকলে চুলা জ্বালিয়ে টুকটাক কাজ চালানো যেত। এখন চুলাই জ্বলছে না। রাত ১০টা-১১টার পর গ্যাস আসে, আবার ভোরে চলে যায়। বাচ্চাদের খাবার-দাবার তৈরি নিয়ে খুব ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
ওয়ারী এলাকার বাসিন্দা নুর জাহান বলেন, প্রতিদিন ভোরে উঠে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে। সকাল সাতটার গ্যাস থাকে না। অনেক সময় বাধ্য হয়ে ইলেকট্রিক চুলায় রান্নার কাজ করতে হচ্ছে। রান্না বাদ এখন যে গ্যাস তাতে গরমপানি আর গরম হয় না।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ কে একাধিকবার ফোন করলে তিনি রিসির্ভ করেননি। তবে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করারশর্তে বলেন, গ্যাসের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :