কাফনের কাপড় জড়িয়ে জীবন-মরণ লড়াইয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত নকল নবীশরা চাকুরী জাতীয়করণের দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ৩৩জন নকল নবীশ অসুস্থ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদেরমধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।
বৈষম্য ঠেকাতে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সহ গত ১০ দিন ধরে আমরণ অনশনে নিজেদের জীবন বাজি রেখেছেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত নকল নবীশরা(এক্সট্রা মোহনার)। এরআগে ৩৪দিন যাবত দাবি আদায়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহনার (নকল নবীশ) এসোসিয়েশন ও বৈষম্যবিরোধী নকলনবিশ দাবি আদায় পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১ দফা দাবিতে সারা দেশের নকলনবিশ সদস্যরা ১০ম দিনের কর্মসূচি পালন করছেন।
আমরন অনমনে থাকা বেশ কয়েকজন নকল নবীশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মহান জাতীয় সংসদ সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ নকল নবীশদের চাকুরী জাতীয়করণের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর অনেক সরকারের পালাবদল ঘটলেও নকল নবীশদের দাবি-দাওয়া আদৌ পূরণ করেনি কেউ। সারা দেশে প্রায় ১৬ হাজার ২৪৬ জন নকলনবিশ রয়েছেন। অনশনে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, চাকরি জাতীয়করণের এই আন্দোলন ১৯৮২ সাল থেকে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ অক্টোবর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ৩৪ দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। বর্তমানে অনশন কর্মসূচি পালনকালে ৩৫ জন নকলনবিশ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নকলনবিশ নেতারা।
অনশনে অংশ নেয়া ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত রূপন কুমার জানান, বিগত সরকারের আমল হতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি সেই বৈষম্য থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে নকলনবিশদের চাকরি জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে, অতি দ্রুতই আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করে প্রজ্ঞাপণ জারি করবে। একই কথা বলেছেন অনমনে অংশ নেয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত চৈতন্য চন্দ্র দেবনাথ এবং জাহাঙ্গীর আলম, এনামুল হাসান, মাসুদ রানা, রুবেল, আজীজুল হক, সেলিনা বেগমসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলার সর্বস্তরের নকল নবীশগণ। এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহনার (নকল নবীশ) এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এর সঙ্গে।
তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত ১৬ হাজার ২৪৬ জন এক্সট্রা-মোহরার/নকল নবীশদের জাতীয়করণের দাবিতে ১৯৮২ সাল হতে আন্দোলন চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই দফায় নকল নবীশদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২০ অক্টোবর থেকে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বর্তমানে আজকে পঞ্চম দিন হলো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছি, অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন তাই স্যালাইন দিয়ে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন,স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মহান জাতীয় সংসদ সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ নকল নবীশদের চাকুরী জাতীয়করণের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর অনেক সরকারের পালাবদল ঘটলেও নকল নবীশদের দাবি-দাওয়া আজও পূরণ করেনি বলে অনশন করেনি তাই আমরা আমরণ অনশন কর্মসূচি করতে বাধ্য হয়েছি।
কথা হয় সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল আমিন সরকার এর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিগত প্রতিটি সরকারকে নকল নবীশদের চাকুরী জাতীয়করণের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। একাধিকবার আশ্বাস দিলেও নকল নবীশদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হয়নি। তাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এক্সট্রা মোহরার/নকল নবীশদের চাকুরী দ্রুত জাতীয়করণের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করে আমাদের ভাগ্য বদলে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বৈষম্য বিরোধী নকল নবিশ দাবি আদায় পরিষদ কর্তৃক ‘৫৬১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত নকল নবীশদের চাকরি জাতীয়করণের’ দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্যে দেন বৈষম্য বিরোধী নকল নবিশ দাবি আদায় পরিষদের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা আমাদের চাকুরি স্থায়ীকরণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৩২ দিন যাবত অবস্থান ধর্মঘট পালন করছি। আমাদের দাবি মেনে না নিলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, আইজিআর অফিস, তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের সামনে আমরণ অনশন করা হবে। আর যদি সরকার দাবি মেনে নেয় তাহলে শনিবার আবার সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসুচি স্থগিত করা হবে। তিনি বলেন, নকল নবীশরা সরকারি কোন বেতন ভাতা পান না। সমাজের মানুষ জানে তারা সরকারি চাকরি করেন। কিন্তু বাস্তবে নকল নবীশরা জমির দলিলের এক পৃষ্ঠা বালামে লেখলে মাত্র ২৪ টাকা মঞ্জুরি পায়। প্রকৃতপক্ষে এক পৃষ্ঠা বালাম লেখার জন্য জনগণের কাছ থেকে সরকার রাজস্ব নেয় ৪০ টাকা। সেখান থেকে নকল নবীশদের দেয়া হচ্ছে ২৪ টাকা। বাকি ১৬ টাকা রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে। নকল নবীশদের টাকা দিয়েই তাদের চাকরি জাতীয়করণ করা সম্ভব। নকল নবীশদের দীর্ঘদিনের দাবি চাকরি জাতীয়করণ করা হোক। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার অভাবে আমরা আজও অন্ধকারেই রয়ে গেছি। তাই আমি আমাদের চাকুরী স্থায়ীকরণ করার জন্য, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :