ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বিধবা নারীকে কুপিয়ে জখম ও বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে আপন দেবরের বিরুদ্ধে। গুরুতর আহত বিধবা ভয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে গোসাইপুর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। পারুল তার ছেলে মেয়ে নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিধবা নারীর নাম পারুল বেগম। তিনি উপজেলার বিদ্যাকুট ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ হোসেনের স্ত্রী। ছয় বছর আগে তার স্বামী মারা যায়। পারুল বেগমের স্বামীর রেখে যাওয়া বসত বাড়ীসহ জমি বিভিন্নভাবে দখলের পায়তারা শুরু করে তার দেবর আমির হোসেন। প্রতিবাদ করলেই পারুল বেগমকে মারধর ও প্রাণ নাশের হুমকি দিতেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতব্বর ও ইউপি সদস্যদের অবগত করলে কোন সুরাহা হয়নি।
সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পারুল বেগম তার বাড়ির সামনের সীমানায় সরিষা পাড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে আমির হোসেন ও স্ত্রী মোছেনা বেগমসহ তার পক্ষের লোকজন এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে এবং তার গলায় থাকা (আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা মূল্যের), স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চুলের মুঠি ও পরনের কাপড় ধরে টেনে হেঁচড়ে মাটিতে ফেলে শ্লীলতাহানি সহ লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেই ক্ষান্ত হননি হত্যার উদ্দেশ্যে দা দিয়ে মাথায় কোপ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
এ সময় পারুল বেগমের চিৎকারে আশপাশ থেকে লোকজন এসে দেবর আমির হোসেনের কবল থেকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নেওয়ার পর প্রাণ ভয়ে ছেলে মেয়েসহ পার্শ্ববর্তী গোসাইপুর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
এ ঘটনায় বাসুর আবুল হোসেন ও আবুল কাশেম মিয়া বাদী হয়ে আমির হোসেন, কাউসার মিয়া, মোহছেনা বেগম তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় বর্তমানে আমির জেলে আছে। মামলা নং- জি আর ৩৬/২৩ ও T-৩০৩/২৩।
আবুল হোসেন মিয়া বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী পারুল বেগমের মাথায় দায়ের কোপে কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয় এবং আমি উক্ত ঘটনায় নবীনগর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করেন। তিনি আরও বলেন, আমির হোসেন আমার আপন ছোট ভাই, আমি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকি, বাড়িতে এসে দেখি আমার বাড়ির স্থাপনা ভেঙে ১০ হাত জায়গা দখল করে আমার সীমানায় গাছ রোপণ করেন, আমি বাধা দিলে মারমুখী আচরণ করেন।
আবুল কাশেম বলেন, স্থানীয় বাজার হতে বাড়িতে ফেরার পথে মনিপুর নৌকাঘাটের দক্ষিণপার্শে আসামাত্র আমির হোসেনের স্ত্রী মোছেনা বেগম আমার দাড়ি ধরে টানা হেঁচড়া করেন, উপস্থিত মানুষজনের সহায়তায় এ যাত্রায় রক্ষা পায়। মামলা উঠিয়ে না নিলে আমাকে প্রাণে হত্যা করিয়া সম্পত্তি দখল করিয়া নিবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে থাকেন। আমি আমার পরিবার নিয়ে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর গফুর জানান, বাড়ির সীমানা নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে অনেকদিন ধরে জগড়া বিবাদ চলছিল। গত ২৩ তারিখ পারুল তার সীমানায় কাজ করতে গেলে তার উপর অতর্কিত আক্রমণ করেন আমির হোসেন ও তার লোকজন। পরবর্তীতে তারা মামলা করলে মোহছেনার স্বামী আমির হোসেনকে গ্রেফতার করে। আমির হোসেন বর্তমানে জেলে আছেন এবং অন্যান্য আসামিরা জামিনে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, আমির হোসেন তার শ্বশুরবাড়ির ও এলাকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মৃত সৈয়দ হোসেন ও তার ভাইদের সম্পত্তি দখলের জন্য দির্ঘদিন ধরে পায়তারা করে আসছে। তার অসৎ আচরণে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে গেলে এই মহিলা অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন, তাই মান-সম্মানের ভয়ে কেউ কথা বলতে চাইনা।
পারুল বেগম বলেন, আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করছেন, তাদের অত্যাচারে বাবা হারা ছেলেমেয়েদের নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিবাদী মোহছেনা বলেন, আমরা তাদের উপর আক্রমণ করিনি জায়গা সম্পত্তি ও দখল করিনি আমাদের জায়গায় আমরা গাছ রোপন করেছি তারা আমার স্বামীকে মিথ্যে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
একুশে সংবাদ.কম/আ.হ.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :