বাগেরহাটের জেলার বৃহত্তর একটি উপজেলা মোরেলগঞ্জ। এই জেলায় দুটি মাত্র প্রতিবন্ধী সেবা সাহায্য কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে একটি মোরেলগঞ্জে। মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের শেখ আবু নাসের সড়কের একটি ভাড়া বাড়িতে স্থাপিত এই প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে সপ্তাহের পাঁচ দিন থেরাপি সুবিধাসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। এটা এই উপজেলা ও পাশ্ববর্তী শরনখোলা উপজেলার মানুষের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। ২০১১ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে মোরেলগঞ্জে এই প্রতিবন্ধী সেবা সাহায্য কেন্দ্রটি চালু হয়।
কিন্তু "নুন আনতে পান্তা ফুরোয়" বাংলা প্রবাদ বাক্যের মতই বর্তমান অবস্থা এই সেবা কেন্দ্রটির, কারন বিধিমালায় এই কেন্দ্রটিতে সার্বক্ষনিক একজন কনসালট্যান্ট ফিজিওথেরাপি ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটা নেই,ডাক্তার ছাড়াই চলছে এই প্রতিবন্ধী সেবা সাহায্য কেন্দ্র। সেবাকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সারা দেশে এ ধরনের সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করছে। মোরেলগঞ্জে ১১ ধরনের রোগীদের বিনা মূল্যে ১০ ধরনের সেবা দিয়ে আসছে এই সেবাকেন্দ্রটি। ২০১১ সালে মোরেলগঞ্জে কাজ শুরুর পর থেকে কয়েক হাজার নিবন্ধিত ব্যক্তিকে থেরাপি সেবা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ জন এখানে থেরাপি সেবা নেন। প্রতিবন্ধিতার ধরন নির্ণয়, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, পুনর্বাসন, শ্রবণ, দৃষ্টি ও ভাষা শিক্ষণ, অটিজমবিষয়ক সেবা, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সেবা দেয়া হয় এখানে।
এই কেন্দ্রটিতে ১২ টি পদের বিপরীতে কর্মকর্তা, কর্মচারী রয়েছে মাত্র ৬ জন। কনসালটেন্টের অভাবে অনেকটা ভেস্তে যেতে বসেছে প্রতিবন্ধীদের জন্য নেয়া সরকারে উদ্যোগ। দিনের পর দিন ডাক্তারের অনুপস্থিতির কারনে সেবাপ্রার্থী রোগীরা পড়েছেন চরম বিপাকে এই কেন্দ্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে বাত ব্যাথা থেকে শুরু করে সকলপ্রকার পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগী এবং প্রতিবন্ধীদের সেবায় এখানে বিনামূল্যে উন্নতমানের থেরাপী চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সরকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এখানে কর্মরত টেকনিশিয়ান ও অনন্য স্টাফরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন,কিন্তু ডাক্তারের অভাবে এই কেন্দ্রটির চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিপূর্ণ নয়। অর্থাৎ নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল- বিষয়টি অনেকটা এমন। ফিজিওথেরাপিস্ট, কাউন্সেলিস্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিপূর্ণ নয়।নেই কোন মহিলা টেকনিশিয়ান এর ফলে মহিলা রোগীদের থেরাপি নিতে এসে নানা সমস্যায় পরতে হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের সহায়ক (হুইলচেয়ার র্যাম্প) ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ইকুইপমেন্ট ও আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতির যথেষ্ট অভাব,কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রোগীদের বহন করার জন্য নেই কোন পরিবহন ব্যবস্থা,প্রচার-প্রচারণাও নেই।ধারণা করা হচ্ছে মোরেলগঞ্জ -শরনখোলা এলাকার প্রায় ৬০% লোক এই কেন্দ্র সম্পর্কে সচেতন নন।
এই কেন্দ্রটিতে সেবা নিতে আসা একজন জানান আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু আমি নিজেও জানতাম না, আমাদের জন্যই এই উপজেলায় সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র করা হয়েছে। সম্প্রতি জানতে পেরে এখানে থেরাপি দিতে আসছি।এখানে থেরাপি দিতে আসলে এখানকার স্টাফরা সঠিকভাবে থেরাপি দিতে সহযোগিতা করে।পক্ষাঘাতগ্রস্থ এক রোগী বলেন,ডাক্তার না থাকার কারণে এখানে কর্মরত থেরাপি সহকারী ও টেকনিশিয়ানদের সহযোগিতায় থেরাপি দিচ্ছি,তারা আন্তরিকতার সাথেই থেরাপি দিচ্ছে। তবে সঠিক ভাবে চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য এই কেন্দ্রটিতে একজন ডাক্তারের খুবই প্রয়োজন। এখানে এক একধরনের প্রতিবন্ধী রোগীর ভিন্ন ভিন্ন থেরাপির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই কেন্দ্রে সব ধরনের থেরাপি দেয়া সম্ভব হয় না থেরাপিস্টের অভাবে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে কর্মী হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সম্পৃক্ততা জরুরী ছিল কিন্তু এখানে তাদেরও নিয়োগের ব্যবস্থা নেই।
স্থানীয়রা বলেন, রেডিও, টিভি, পত্র-পত্রিকা, মাইকিং, হ্যান্ড বিল, পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালালে এই কেন্দ্র সম্পর্কে সকলেই জানতে পারবে। সব ধরনের থেরাপি এই কেন্দ্রটিতে নেই। আবার সহায়ক উপকরণ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ সময় সাপেক্ষ ও জটিল ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বারবার কেন্দ্রে এসে খোঁজ নিতে হয়। বছরে দুই-একবার অনেক ঘোরাঘুরির পর তা পাওয়া যায়। উপকরণ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ হওয়া দরকার ছিল। এই কেন্দ্রের কর্মচারীদের ব্যবহার এবং চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে স্থানীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বলেন, চিকিৎসা সেবা দেয়ার বিষয়ে এখানে অনেকেই আন্তরিক, তবে ডাক্তার,থেরাপিস্ট জরুরি দরকার।
মোরেলগঞ্জ প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা কায়কোবাদ বলেন, এই কেন্দ্রটিতে টেকনিক্যাল পদ শূন্য থাকায় এখানে থেরাপি নিয়ে ব্যক্তিদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানে নিয়মিত একজন ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট দরকার।
এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক সুলতান বলেন প্রতিবন্ধী সেবা সাহায্য কেন্দ্রের সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নেয়া হয়, যদি কেউ সেবা পেতে হয়রানির স্বীকার হয় তাহলে আমাকে অবহিত করবেন। জরুরী ভিত্তিতে একজন কনসালটেন্ট ফিজিওথেরাপি এখানে নিয়োগ দেয়ার জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হবে।
একুশে সংবাদ.কম/ফা.হ.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :