জনম দুঃখিনী আমার কপাল পোড়া মা। সন্তান হারানোর শোকে পাগল প্রায় সুন্দরবনে নিখোঁজ হিলটন নাথের মা যুথিকা নাথ। তার বুকফাটা আর্তনাদ আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে উপকূলীয় এলাকা বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা গ্রাম।
গত ৭ এপ্রিল শুক্রবার আপন বড়ো ভাই সাগর নাথের সাথে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যায় হিলটন নাথ। অবৈধ ভাবে বনে মাছ ধরার অপরাধে ঐ দিন রাতেই সাগর সহ আরো দুজনকে বনরক্ষীরা আটক করলেও সেই থেকে নিখোঁজ রয়েছে যুথিকা নাথের ছোট ছেলে হিলটন নাথ।
শত খোজা খুজিঁ করেও মিলছে না হিলটনের সন্ধান। জীবত অথবা মৃত সন্তানকে ফিরে পেতে নদী এবং বন ঘুরে বেরাচ্ছেন মা যুথিকা।
হিলটনের পরিবার এবং এলাকাবাসি বলছেন, ঐ দিন রাতে বনরক্ষীদের মারধর সইতে না পেরে জীবন বাচাঁতে নদীতে ঝাফিয়ে পরে হিলটন। ঘটনা ছয় দিন পার হয়ে গেলও এখনো মিলছেনা হিলটনের সন্ধান। এদিকে গত ৭ এপ্রিল সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে নিখোঁজ হিলটন ব্যাপারে এলাকাবাসি ও তার পরিবারে মাঝে তৈরি হয় নতুন চাঞ্চল্যতা।
ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, সুন্দরবনের জোংড়া ফরেস্ট স্টেশনের ঘাটে আটকে রয়েছে একটি লাশঁ, যার পরনে রয়েছে কালো প্যান্ট, সেখানে কাজে কর্মরত কিছু শ্রমিক সেই লাশের ভিডিও তাদের মোবাইলে ধারণ করে এবং তারা বলতে থাকে এটা সম্ভাবতো সেই নিখোঁজ চিলা এলাকার হিলটনের লাশঁ। সেই ভিডিও সুত্র ধরে হিলটনের পরিবার ও এলাকাবাসি দাকোপ থানা নৌ পুলিশকে সাথে নিয়ে ঘটনা স্থলে পৌঁছালে তারা সেখানে কোন লাশঁ খুজে পায়নি। লাশের সম্পর্কে তারা ফরেস্টের কর্তরত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারা তা অস্বিকার করেন।
উপস্থিত এলাকাবাসি এবং হিলটনের মা লাশটি ফিরে পেতে এবং সন্ধান জানতে ফরেস্টের কর্মকর্তার কাছে আকুতি মিনতি করলেও তারা তা অস্বীকার করে। এক পর্যায়ে হিলটনের মা যুথিকা নাথ সন্তানের লাশটি ফিরে পেতে সকলের সামনে বন কর্মকর্তার পা জড়িয়ে ধরে সন্তানের লাশটি ভিক্ষা চাইলেও কোন সৎ উত্তর দেননি ঐ কর্মকর্তা। সন্তানের লাশ ফিরে পেতে বন কর্মকর্তার পা ধরে মা যুথিকা নাথের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ফরেস্ট ঘাটে আটকে থাকা লাশটি হিলটনের কিনা জানতে চাইলে হিলটনের চাচা স্বপন নাথ বলেন, ওটাই আমার ভাইপোর লাশ। আর যদি আমার ভাইপোর লাশ না হবে তা হলে কার লাশ, আর এই লাশ গায়েবই বা কেন হল?
চিলা ইউপি সদস্য ইশারাত ফকির জানান, আমাদের এখানকার কিছু লোক ঐ দিন সেখানে করছিলেন তারা লাশটি দেখতে পেয়ে ভিডিও করে এবং বন কর্মকতাদের জানায়। পরে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন রেখে দেয় ফরেস্টের লোকজন। কিন্তু তার আগেই তারা ভিডিও আমাদের কাছে পৌছে দেয়। ওটাই আমার এলাকার বাসিন্দা হিলটনের লাশঁ। গ্রামবাসি লাশঁটি আনতে গেলে তারা দেয়নি বরং তারা লাশটি গায়েব করে ফেলেছে। কারণ তাদের মারধরের স্বীকার হয়ে হিলটন নদীতে পড়ে মারা গেছে।
এ ব্যাপারে জোংড়া ফরেস্টের ওসি আলমগির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঐ লাশ সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। ভিডিওতে দেখা ফরেস্ট ঘাটে লাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ! ঘাট আমার এলাকার, আমিও একটি ভিডিও দেখেছি তবে আমি সরাসরি কিছু দেখিনি, আমার কাছে কেউ এ সম্পর্কে জানায়নি। জোয়ার ভাটার নদীতে অনেক কিছুই ভেসে আসে এবং চলে যায় আমি কিছুই দেখিনি এবং জানিনা।
তবে ঐ দিন ফরেস্ট ঘাটে কাজ করা তাজু শেখ নামের এক শ্রমিক অন্য একটি ভিডিও লাইভে এসে বলেন, লাশটি আমরা ভাসতে দেখে স্থানীয় ফরেস্ট অফিসে জানালে তারা লাশটি তাদের নৌকার সাথে বেঁধে মাঝ নদীতে নিয়ে যায়। এরপর আমরা আর কিছুই জানিনা।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :