মুজিববর্ষ উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় মাত্রাই ইউনিয়নের কাঁটাহার গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য দেয়া একটি ঘর বন্ধকীর অভিযোগ ওঠেছে। এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকায় এরকম একটি ঘর বন্ধকী রেখেছেন নয়াবালী আলী মন্ডল নামের এক ব্যক্তি। আনরেজিস্ট্রার্ড স্ট্যাম্পে মাসফুর আলম( মাসুম) নামে এক ব্যক্তির কাছে তিনি ঘরটি বন্ধকী রাখেন।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া উপহারের ঘর বন্ধকীর অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের কাঁটাহার গ্রামের নয়াবালী মন্ডল ছেলের ঋণের দায় পরিশোধ করতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার বরাদ্দকৃত ঘর বন্ধক রেখেছেন।
কালাই উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাত্রাই ইউনিয়নের কাঁটাহার গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। একটি ঘর নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল এক লাখ একাত্তর হাজার টাকা। পাশাপাশি ঘরের জন্য জমি বরাদ্দ আছে ২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত চার ধাপে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সুবিধাভোগী ১৭৮ পরিবারের মাঝে জমিসহ ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে।
কালাই উপজেলার তফশিলে বর্ণিত ০২ (দুই) শতক জমি সরকারের কাছ থেকে কালাই সাবরেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করা দলিলে ঘর পেয়েছেন মাত্রাই ইউনিয়নের কাঁটাহার গ্রামের নয়াবালী মন্ডল। প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া একটি ঘর তার ছেলে ফেরদৌস আলী মন্ডলও পেয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে নয়াবালীর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, নয়াবালী মন্ডল ও তার ছেলে ফেরদৌস মন্ডলসহ কাঁটাহারে মোট ৫৮ জন উপকারভোগী ঘর পেয়েছেন। যাদের নামে ঘর দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই নিজস্ব বাড়ি থাকায় উপহারের ঘরে ওঠেননি। তবে যারা সেখানে বসবাস করেন, তারা সবাই মিলে একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নতুন মসজিদ নির্মাণ কমিটির সেক্রেটারি থাকাবস্থায় নয়াবালীর ছেলে ফেরদৌস মন্ডলের কাছে নতুন মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত ৯০ হাজার টাকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের লোকজন তার কাছে গচ্ছিত রাখেন।
নতুন মসজিদের কাজ শুরু করতে চাইলে তার কাছে গচ্ছিত টাকা উত্তোলনের জন্য বলা হলে তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর আশ্রয়ণ প্রকল্পের লোকজন মসজিদের কাজের টাকার বারবার চাপ দিতে থাকলে সে অন্য কোনোভাবে টাকার সংকুলান করতে না পারাতে ফেরদৌস তার বাবা নয়াবালীর নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ঘর মাসফুর আলম (মাসুম) নামে এক ব্যক্তির কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বন্ধকী রাখেন। ঘর বন্ধকী রাখার পর নয়াবালী তার ছেলের ঘরের বারান্দায় টিনের বেড়া দিয়ে বসবাস করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরটি এখন মাসুম নামের ওই ব্যক্তির দখলে রয়েছে। রেজিস্ট্রি করে ঘর হস্তান্তরের দলিল না হলেও তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে এক মাস আগে ঘর মাছুমের কাছে বন্ধকী রাখা হয়েছে। মাছুম ওই ঘরে এখন আলু রেখেছেন।
এদিকে,ফেরদৌস মন্ডল এক সাক্ষাতকারে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর আমি বন্ধক রেখেছি, এ কথা সত্য। মসজিদ নির্মাণের গচ্ছিত টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে আসার সময় রাস্তায় পরে যাওয়ার কারণে টাকাগুলো হারিয়ে ফেলেছি,বলে ফেরদৌস জানান। এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের লোকজন বারবার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকায়,তিন মাসে কোনোভাবেই টাকা সংগ্রহ করতে না পারার জন্যই মূলত বাবার ঘরটি আমি বন্ধক রেখেছি। এই ঘর বিক্রি করা বা বন্ধক রাখা আইনত অপরাধ, তা আমার জানা ছিল না।
অপরদিকে,বরাদ্দকৃত ঘর বন্ধকী নেওয়া ব্যক্তি মাসফুর আলম মাছুম এর সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ কালে তিনি জানান যে, আমি ছোট বেলা থেকে কাঁটাহার গ্রামে থেকে বড় হয়েছি। সেই থেকে ফেরদৌসের সাথে আমার পরিচয়।ফেরদৌস ঋণে পড়েছে,মসজিদ নির্মাণের টাকা দিতে পারছে না বলে,সে তার কষ্টের কথা আমাকে ব্যক্ত করলে, আমি ফেরদৌসের ঋণ পরিশোধ বাবদ এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছি।এবং মাছুম আরো বলেন,ফেরদৌস যদি আমার টাকা ফেরত দিতে না পারে তাহলে তার বাবা নয়াবালী মারা গেলে আমাকে( মাছুম) ফেরদৌসের বাবা নয়াবালীর সরকারি বরাদ্দকৃত ঘর আমার কাছে হস্তান্তর করবে,মর্মে পঞ্চশ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লেখাপড়া করে নিয়েছি। উল্লেখ্য যে,মাসফুর আলম মাছুমের আসল বাড়ী বগুড়ার জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামে।সে মৃত: তনোয়ার হোসেনের ছেলে।মাছুম ট্রাক পরিবহনের একজন কর্মী।
কালাই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ঘর বন্ধকীর বিষয়টি আমরা সরেজমিনে গিয়ে নিশ্চিত হয়েছি। নয়াবালীর ছেলে ফেরদৌস এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের লোকজন সাথে আলাপকালে ঘর বন্ধকীর বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। ঘর বন্ধকীর বিষয়ে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নেব।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা তিথি বলেন,আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি করা বা বন্ধকী রাখা আইনত অপরাধ। যাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র তারাই ঘরগুলোতে বসবাস করতে পারবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্ত করে ঘর বন্ধকীর প্রমাণ পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মুজিব শতবর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার আইনগতভাবে কেউ ক্রয়-বিক্রয় করতে বা বন্ধকী রাখতে পারবে না।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :