শার্শায় গবাদি পশুর শরীরে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগ দেখা দিয়েছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু গরু ইতিমধ্যে মারা গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গরু খামারীরা। রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। এরই মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গরু মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কোরবানির ঈদের আগে এই ভাইরাস গরুর ছড়িয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। একই সাথে আতঙ্কিত হচ্ছেন ক্রেতারা।
অভিযোগ রয়েছে রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করলেও দেখা যাচ্ছে না প্রাণী সম্পদ বিভাগের লোকজনদের। ফলে গ্রামের কিছু হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে গরু সুস্থ না হয়ে উল্টো আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তথ্যঅনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা উপজেলায় শতকারা ৭ ভাগের বেশি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু গরুর মৃত্যুও হয়েছে। যদিও সরকারী ভাবে লাম্পি স্কিন রোগে গরু আক্রান্ত হয়েছে বলে জানালেও গরুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছেনা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা। অনেক খামারি ও কৃষক ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরু বিক্রি করছেন কম দামে। প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের ঊর্ধগতির পরিস্থিতিতে টাকা পয়সা হাতে না থাকায় আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পশুর মালিকদের।
উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামের গরুর খামারী আঃ রশিদ জানান, তাদের খামারের একটি বড় গরুর পা ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। বড় গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ। শরীর পচে গর্ত হয়ে গেছে। সাড়ে আট হাজার টাকা খরচ করেও গরু সুস্থ হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে দেখা হয় বাগআঁচড়া এলাকার শহিদুলের সাথে। তিনি বলেন, প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে এসেও ঘুরে যাচ্ছি ডাক্তার পাচ্ছি না । খবর দিলে বাড়িতে যায় না ডাক্তার। এ অবস্থায় আমরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এসময় তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকায় ১০ থেকে ১৫ টি গরু মারা গিয়েছে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে।
রুদ্রপুর গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে ইবাদুল বলেন, তার তিনটি গরুসহ এলাকার অনেক গরু এ রোগে আক্রান্ত। এছাড়া এই গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে ভাইরাসটি হানা দিচ্ছে। শুধু শার্শা উপজেলাতে নয় পার্শবর্তী ঝিকরগাছার দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন রোগ।
গরু খামারীদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
খামারীদের কাছে এ রোগের উপসর্গের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রথমে গরুর জ্বর হয়, এর পর শরীরে গুটি বের হয়ে ফুলে যায়। ঘা হয়ে পেকে ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়। কাঁপুনিও থাকে। আর দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিতে হয় বলে অনেকেই গরু পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
প্রাণীসম্পদ বিভাগের লোকজন জানান, ‘লাম্পি স্কিন’ রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখে আক্রান্ত পশুকে পেনিসিলিন, এন্টি হিস্টামিন এবং জ্বর হলে প্যারাসিটামল দিলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিণয় কৃষ্ণ মন্ডল মুঠোফোনে জানান, এই রোগের ফলে গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি ফোড়ার মতো হয়ে পেকে পুঁজ বের হয়। একটি গরু সুস্থ হতে প্রায় দুই মাস সময় লেগে যায়।
তিনি আরও বলেন, অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টানিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি তার শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো ভাল গরুকে কামড়ায় তবে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। এ পর্যন্ত শার্শায় শতকারা ৭ ভাগ গরু আক্রান্ত হয়েছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
একুশে সংবাদ/ই.র.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :