AB Bank
ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কালাইয়ে কোরবানীকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা


কালাইয়ে কোরবানীকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন হাট-বাজারে টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামার পল্লী। বেড়েছে  কামারদের ব্যস্ততা। আগামী ২৯ জুন পবিত্র ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রকৃতি বর্ষার আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে ঈদুল আজহা উপলক্ষে নানা পণ্যের বাজার পাগলা ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

 

স্থানীয়ভাবে একাধিক সূত্রে জানা যায়,ঈদুল-আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার কামার দোকানগুলোতে মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা। এ উপজেলায় ১টি পৌরসভাসহ ০৫ ইউনিয়ন রয়েছে। পৌর এলাকার পুরাতন কালাই বাজার,পাঁচশিরা বাজার ও আঁওড়া মন্ডব বাজারসহ ইউনিয়নগুলোর বড় প্রতিটি বাজারেই আছে কামারের দোকান। তবে উপজেলার মধ্যে একমাত্র পুনট বাজারেই আছে প্রায় ৫০টি কামারশালার একটি কামারপল্লী। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সেখানে লোহা আর হাতুড়ির শব্দে এখন আকাশ-বাতাস মুখরিত। সারাক্ষণ যেন ঢুং,ঢাং ও টুং টাং শব্দে মুখর কামার দোকানের আশপাশের এলাকা। বিশাল শিল্পের সঙ্গে জড়িত কামার সম্প্রদায়ের লোকজন লৌহ ও স্টিলসহ বিভিন্ন ধাতবদ্রব্য দিয়ে পশু জবাইয়ের প্রয়োজনীয় দেশীয় হাতিয়ার তৈরির মাধ্যমে পূর্ব পুরুষদের এ পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন তারা। এ পেশার মানুষ সারা বছর কমবেশি লোহার কাজ করলেও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্ম ব্যস্ততা। ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে তাদের রকমারি কর্মযজ্ঞ।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানায় কর্মকাররা। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প। শান দেয়া নতুন দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। দোকানের ভিতরে চলছে কাজ। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখে মুখে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। তবু থেমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কাজের ব্যস্ততা।

 

কার্মকাররা জানায়,দা আকৃতি ও লোহাভেদে ৩০০ থেকে ৫০০টাকা, ছুরি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, হাড় কোপানোর চাপাতি প্রতিটি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা,হাসুয়া-বটি ২৫০-৩০০ টাকা,বড় ছুড়ি বিক্রি  হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত এবং পুরানো দা, বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবন-পানি দিতে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। দা,বটি, ছোরা, চাকু‍‍`র পাশাপাশি মাংস বানানোর কাজের জন্য গাছের গুঁড়ির চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক। নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই কাজ করছে বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী জাত পেশার কারিগর কর্মকাররা।

 

কালাই পৌর এলাকার কামারপাড়ার শ্রী মিলন কর্মকার জানান, বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। কিন্তু কোরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। দিন-রাত কাজ করেও অবসর পাওয়া যায় না।

 

পুনট বাজারের মনিরঞ্জন কর্মকার বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করছি। ঈদকে সামনে রেখে পাইকারী দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এই সময়ে আমাদের কদর বেশ ভালই থাকে। তবে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে সেই রকম কাজের চাপ না থাকলেও আশা করছি ঈদে চাহিদা আরো বাড়বে।এই সময়টাতে আগে থেকেই চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হতো। কারিগররা আরো জানায়, কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুরির চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

 

পুনট বাজারের আরেক কর্মকার শ্রী নারায়ন বলেন,সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সারা দেশেই কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। সরকার যেন এ শিল্পে ভর্তুকি দিয়ে তাদের বেঁচে থাকার একটা সুব্যবস্থা করে দেয়।

 

কালাই উপজেলার ব্যবসায়ী শ্রী বিকাশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দা,বটি,ছোরা,চাকুর পাশাপাশি মাংস বানানোর কাজের জন্য গাছের গুঁড়ির চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছরের খোরাক তারা জোগাড় করেন।

 

কালাই হিন্দুপাড়ার ব্যবসায়ী সুজন মহন্ত কর্মকার জানায়, এখন ব্যবসায় মন্দা চলছে। কোরবানী ব্যতিত বছরের অন্যান্য মাসগুলোতে আমরা কোনমতে দিন পার করছি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ায় ঋণ পরিশোধে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একারণে অনেকেই বাপদাদার আদি পেশা বদলিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।

 

একুশে সংবাদ/আ.স.প্র/জাহা

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!