এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহকারীদের অধীর অপেক্ষার পর অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত রুই জাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে।
রোববার (১৮ জুন) দিবাগত রাত ১২ টার পর থেকে ষষ্ঠ জো এর শেষের দিকে মা মাছ নদীতে পুরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে।
রাত সাড়ে ১২ টার পর থেকে নাপিতের ঘাট, আমতুয়া এবং আজিমের ঘাটসহ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ডিম সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে অমাবস্যার শেষ জো শুরু হয়। শনিবার ১৭ জুন সকালের দিকে বজ্রসহ বৃষ্টির শুরু হলে ডিম সংগ্রহকারীরা আশান্বিত হন এবং তারা অনুমান করেছিলেন শনিবার দিবাগত রাতের যেকোনো সময় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। তবে তাদের সে ধারনা সঠিক হয়নি। পরে রবিবার দিবাগত রাতে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে। তবে ইতোমধ্যে পরপর পাঁচটি জো (ডিম ছাড়ার সময়) শেষ হয়ে গেলেও মা মাছ পুরোদমে ডিম না ছাড়ায় অনেক ডিম সংগ্রহকারীরা ধারনা করেছিলেন এবার হালদা নদীতে হয়তো মা মাছ আর ডিম ছাড়বে না। তবে তাদের সে ধারনা ভুল প্রমান করে মা মাছ আজ ডিম ছাড়ে পুরোদমে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা নদীতে রবিবার দিবাগত রাতে পুরোদমে ডিম ছাড়ে মা মাছ। নদীতে মাছের ডিম ছাড়ার পাঁচটি জো/তিথি এর মধ্যে চলে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশের জন্য ডিম আহরণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা নদী পাড়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় করছিলেন গত বেশ কয়েকদিন ধরে। অবশেষে আজ ডিম ছাড়ায় সবাই উৎসবের আমেজে ডিম সংগ্রহ করছে।
হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম জানান, হালদা নদী মিঠা পানির মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল, এবং কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং প্রজননের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারসমূহ অনুকূলে না থাকায় এতোদিন পুরোদমে ডিম ছাড়েনি তবে আজ অনুকূল পরিবেশ তৈরী হওয়ার পুরোদমে ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় মা মাছ।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্প জাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার ষষ্ঠ জো অর্থাৎ অমাবস্যার জো শুরু হয়। এই জোতে বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নেমে ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে এই প্রত্যাশায় তারা নদীর পাড়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে অধীর অপেক্ষায় ছিলেন। তখন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন এই জো ডিম ছাড়ার শেষ ভরসা।
একুশে সংবাদ/আ.ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :