মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচল ও দুর্ঘটনা এড়াতে উদ্যানের ভেতর রেললাইনের দুই পাশের ৪৩টি গাছ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ গাছগুলো কাটার জন্য বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বনের এসব গাছগুলো।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি স্থানীয় বন ও রেল বিভাগ লাউয়াছড়া উদ্যানে সরেজমিন ঘুরে এই ৪৩টি গাছ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে আসে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে লাউয়াছড়া বনের রেললাইনের দুই পাশে রেলপথের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ২৫ হাজার গাছ কাটার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ পরিকল্পনা শোনার পরই কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে বৃক্ষ না কাটার জন্য প্রতিবাদ হয়। স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিক এবং সাপ্তাহিক ১১টি পত্রিকার সম্পাদকরা যৌথ স্মারকলিপি দেন জেলা প্রশাসকের কাছে।
এ সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে গবেষক, লেখক, পরিবেশবাদিরা নানাভাবে প্রতিবাদ করেন। পরে ওই বছরের আগস্ট মাসে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় লাউয়াছড়া উদ্যানের রেললাইনের দুই পাশের গাছ নির্বিচারে কাটার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কেবল ঝুঁকিপূর্ণ হলেই গাছ কাটা হবে। নির্বিচারে লাউয়াছড়ায় গাছ কাটা যাবে না।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফিরোজ সালাউদ্দিন। এসভায় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান, বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হক, রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরমান হোসেন প্রমুখ। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে জানা যায়, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাছ গণহারে কাটা যাবে না।
রেল বিভাগের চিঠিতে দুর্ঘটনা এড়াতে লাইনের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রেললাইনের দুই পাশের ৫০ ফুট করে গাছ কাটার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। বলা হয়, রেললাইনের পাশে কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা জরিপ করে ওই গাছ অপসারণ করবেন। এ জন্য রেলওয়ে ও বন বিভাগের প্রতিনিধি এবং কমলগঞ্জের ইউএনও কিংবা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। চলতি বছর আবার লাউয়াছড়া বনে গাছ উপড়ে পড়ে ট্রেন দূর্ঘটনার শিকার হয়। ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল প্রচন্ড ঝড়ে লাউয়াছায় রেললাইনে গাছ পড়ে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। লাইন থেকে গাছ অপসারণের প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনার কিছুদিন পরই বনের লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি সংলগ্ন তিন কিলোমিটার রেলপথের দুই পাশে ৪৩টি গাছ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষক ও পরিবেশবিদরা বলেন, রেলওয়ের এ সিদ্ধান্তটি প্রকৃতিবিরোধী এবং পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন। লাউয়াছড়ার যদি একটি গাছও কাটা হয় তাহলে তা হবে বন্যপ্রাণীদের জন্য হুমকি স্বরূপ। মারাত্মক ক্ষতি হবে বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের।
একুশে সংবাদ/এ.ম.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :