স্বামীর মৃত্যুর পর বাংলাদেশি যুবকের প্রেমে পড়েন ভারতের মুম্বাইয়ের মহারাষ্ট্র থানার শাসরিনগরের মো. ইউনুস শেখের মেয়ে রহিমা (৪৯)। অবশেষে প্রেমিকের বিয়ের আশ্বাসে অবৈধপথে চলে আসেন বাংলাদেশে। কিন্তু প্রেমিক তাকে বিয়ে করেননি। সঙ্গে আনা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হারিয়ে গত আড়াই মাস ধরে দিন কাটাচ্ছেন সরকারি নিরাপদ আবাসনে (সেফহোমে)। এখন নিজ দেশে ফিরতে চান এ নারী। কিন্তু পাসপোর্ট, ভিসা না থাকায় পড়েছেন আইনি জটিলতায়।
এ বিষয়ে ফটিকছড়ি থানার এসআই নাজমুল হক বলেন, ‘ফটিকছড়ির যুবক নাসিরউদ্দিনের প্রেমে পড়ে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধপথে বাংলাদেশে আসেন ভারতীয় নারী রহিমা। আসার সময় অনেক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে আসেন তিনি। জাতীয় জরুরি সেবার-৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে তাকে গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টায় নাসিরের বাসা থেকে উদ্ধার করি আমরা। তিনি বিয়ে করতে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন দাবি করে নাসিরসহ তিনজনকে আসামি করে ২৬ এপ্রিল মামলা করেন। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরেক আসামি দেশের বাইরে চলে গেছে। ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে ভারতীয় দূতাবাসকে জানিয়েছি। বর্তমানে তিনি আদালতের নির্দেশে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদে অবস্থিত সরকারি সেফহোমে আছেন।’
মামলার এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেন, নাসিরউদ্দিন আমার সঙ্গে ভারতের স্থানীয় এলাকায় শ্রমিকের কাজ করত এবং আমার স্বামীর পরিচিত ছিল। আমার স্বামী তিন বছর আগে মারা যায়। এর পর আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে নাসির বলে, বাংলাদেশে এলে দুজন সুখে সংসার করব। তার কথামতো ভারতে আমার বাড়িঘর বিক্রি করে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হই। ২১ লাখ টাকা ও আমার ব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসি। এর পর কুমিল্লা থেকে বাসে ফটিকছড়ির গ্রামের বাড়িতে আমাকে নিয়ে আসে নাসির।’
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত আমাকে একটি রুমে আটকে রাখা হয়। নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় নাসির। ওই সময় ভারতে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য চাপ দেয়। পরে বিষয়টি ভারতে থাকা মেয়েকে জানালে সে জাতীয় জরুরি সেবার-৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পরামর্শ দেয়। সেখানে কল করলে ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। এ সময় নাসিরের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা, সাত ভরি স্বর্ণ এবং ১৫ ভরি রুপা উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার আসামিরা হলেন- ফটিকছড়ি উপজেলার জাফরনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের ছেলে নাসিরউদ্দিন (৩৪), তার ভাই নাজিমউদ্দিন (৩০) এবং মা রওশন আরা বেগম (৫৮)। এর মধ্যে নাজিম এখন দেশের বাইরে আছেন। বাকি দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফটিকছড়ি থানার ওসি কাজী মাসুদ ইবনে আনোয়ার বলেন, ‘প্রেমের টানে নাসিরউদ্দিনের হাত ধরে অবৈধপথে বাংলাদেশে এসেছেন ওই নারী। যার হাত ধরে এসেছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই নারীকে নির্যাতন করেছে। মামলার তদন্ত চলছে। ওই নারী কখন ভারতে ফিরবেন, তা আদালতের আদেশের ওপর নির্ভর করছে।’
চট্টগ্রাম আদালতে ভুক্তভোগী ওই নারীকে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে মানবাধিকার সংস্থা বিএইচআরএফ। সংগঠনটির মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘ভারতীয় নারী বাংলাদেশে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি নিজ দেশে ফিরতে চান। আমরা বিষয়টি আদালতকে জানিয়েছি। আদালতের আদেশের ওপর নির্ভর করছে তার দেশে ফেরা।’
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :