রাজশাহীর তানোরে পূর্ব বিরোধের জের ধরে রাতের আধারে ৪০০ টির মত আম গাছ দূর্বৃত্তরা ভেঙ্গে উপড়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন (ইউপির) বনকেশর মরাপাড়া ধানী জমির মাঠে ঘটে ঘটনাটি।
এঘটনায় গাছের মালিক চকপাড়া গ্রামের আল আমিন গত মঙ্গলবার বিকেলের দিকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তবে অভিযোগে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ৪০০ টি মত আম্রুপালি জাতের গাছ রোপন করা ছিল। সব গাছ উপড়ে মাঝখান ভেঙ্গে পার্শ্বের খালে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে এলাকার জনসাধারনের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই সাথে গাছ হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবি উঠেছে।
গাছের মালিক আল আমিন জানান, গত মঙ্গলবার ভোর ৬ টার দিকে আমার মা কারেন্টে শট লাগে। বাড়ি থেকে জ্ঞানশূন্য অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করে। মাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে আব্দুল্লাহ নামের এক শ্রমিক মোবাইল করে বলে আল আমিন জমিতে একটাও আমের গাছ নেই। আমি শুনেই হতবাক হয়ে পড়েছি। মাকে হাসপাতালে নিব নাকি গাছ উপড়ে ফেলা দেখব। শেষে চিন্তা করলাম আগে মাকে নিয়ে হাসপাতালে যায় পরে দেখা যাবে। বিকেলে এসে থানায় অভিযোগ করে জমিতে এসেছে। জমি নিয়ে সাবেক মেম্বার জয়নালের সাথে বিরোধ আছে। যেহেতু গাছ ভাঙ্গতে উপড়াতে কাউকে দেখিনি এজন্য অভিযোগে কারো নামও উল্লেখ করিনি।
মঙ্গলবার শেষ বিকেলের দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির চকপাড়া গ্রাম পার হয়ে উত্তরে বনকেশর মরাপাড়া ধানী জমির মাঠ। ওই মাঠে সাড়ে তিন বিঘা উঁচু নিচু জমিতে রোপন করা ছিল। জমিগুলো ঘাষ বের হয়ে আছে। এক জমিতে ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে ছিল ৫ টির মত গাছ। বাকি সব গাছ পার্শ্বের খালে ফেলা হয়েছে। খালের কসড্রাম দিয়ে স্রোত বইছে। কয়েকটি গাছে পাতা দেখা যায়। মাটির রাস্তায় স্থানীয় অনেক বাসিন্দারা ছিল। তারা বলেন এটা কেমন কাজ। গাছ ভেঙ্গে উপড়ে ফেলা কোন স্বাভাবিক জ্ঞানের কাজ না। যারা বিবেকহীন তাদের দ্বারাই এমন কাজ কর সম্ভব। জমি নিয়ে বিরোধ, গাছ কেন উপড়ে ভেঙ্গে ফেলবে।
আলআমিন আরো বলেন, নওগাঁ জেলা থেকে ভালো জাতের ৪০০ টি আম্রপালি গাছ কিনে চলতি মাসের ১৩ জুলাই মাঝারি সাইজের গাছগুলো রোপন করেছিলাম। ৪০০ টি গাছের দাম দেড় লাখের উপরে। ভাড়া গাছ রোপনসহ প্রায় ২ লাখ ৩০/৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আব্দুল্লাহ নামের যুবক জানান, আমি প্রতিদিন ভোর বেলায় জমির রোপন করা ধান দেখতে আসি। গত মঙ্গলবার ভোরে এসে দেখি একটাও আম গাছ নেই। আমি সাথে সাথে আল আমিনকে জানায়।
গাছ রোপনকারী শ্রমিক বাচ্চু,সাকিল, মজির ও মারুফ জানান, বৃষ্টি হওয়ার পর গাছগুলো রোপন করা হয়েছিল। গাছ রোপনের পর কয়েকদিন বৃষ্টি হয়। যার কারনে গাছগুলোর গোড়া মজবুত হয়ে উঠেছিল। দেখতেই ভালো লাগছিল। কিন্তু রাতের আধারে সব গাছগুলো উপড়ে এবং মাঝখান ভেঙ্গে খালে ফেলে দেয়।
আল আমিনের বড় ভাই সোহেল জানান, আমি বিগত ২০২২ সালে এলটি কেস নম্বর ২৬/২০২২ মুলে পার্মিশন পেয়ে মাঝি কিস্কু ও ফুল মনি কিস্কুর কাছ থেকে সাড়ে তিন বিঘা জমি কিনে নিয়েছি।
কিন্তু বিগত ১৯৭৪ সালে জালিয়াতি ভাবে পার্মিশন করে ইসমাইল নামের এক ব্যক্তি কিনে, তার কাছ থেকে খাইরুল কিনেন, তার কাছ থেকে জয়নাল মেম্বার কিনে নেয়। একই জমির দুবার এলটি কেস হয়না। তাদের কোন এলটি কেস না পাওয়ার কারনে অনুমোদন বা পার্মিশন দেয়। এমুলে আমি কিনেছে। জমি নিয়ে জয়নালের সাথে বিরোধ চলছে।
তবে সাবেক মেম্বার জয়নাল জানান, আম গাছ কে বা কারা তুলেছে আমি শুনেছি। জমি নিয়ে বিরোধ চলছে এটা সঠিক।কিন্তু গাছের বিষয়ে অজানা।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, অভিযোগ হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশেসংবাদ.কম/সা.হ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :