উজানের নেমে আসা পানি নাটোরের গুরুদাসপুরের উপর দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই ও নন্দকুজা নদী এবং তাঁর শাখা প্রশাখা দিয়ে চলনবিলে প্রবেশ করছে। এতে করে দেরীতে হলেও প্রতিদিনই চলনবিলের নিম্নাঞ্চলসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে বিলপাড়ের মানুষের পারাপার ও মাছ ধরার প্রধান মাধ্যম ডিঙি নৌকার চাহিদা বাড়ছে। চাহিদার বিপরীতে বাড়ছে ডিঙি নৌকা তৈরী ও কেনা।
রোববার (২৩ জুলাই) সকালে সরেজমিনে চলনবিলাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চাঁচকৈড় নৌকার হাট ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষাকে ঘিরে নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্তসময় পার করছেন। হাটের দক্ষিনাংশে ২০-২৫টি কারখানায় চলছে ডিঙি নৌকা তৈরীর কাজ। বিক্রির জন্য কারখানার সামনে একটির পর একটি উঠিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
সপ্তাহের দুদিন শনি ও মঙ্গলবারে এ হাটে বিক্রি হয় শত শত নৌকা। নৌকা কেনা বেচায় নিয়োজিত ব্যবসায়ী, মিস্ত্রি ও ক্রেতার হাকডাকে মুখরিত নৌকার হাট। নৌকা ক্রয়ে সুফল পাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষ। বর্ষা মৌসুমে বিলপাড়ের কর্মহীন কৃষক ও জেলেদের মাছ ধরার প্রধান উপকরন এ নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক কাঠমিস্ত্রি। অন্যদিকে মহাজনরা আগে থেকে প্রয়োজনীয় কাঠ সংগ্রহ করে বর্ষাকে ঘিরে অপেক্ষায় থাকে নৌকা বিক্রির পসড়া সাজিয়ে।
নৌকাক্রেতা পার্শ্ববর্তী তাড়াশ উপজেলার কুন্দইল গ্রামের মজনু, নাদো সৈয়দপুর গ্রামের আহাদ আলী বলেন, তারা বিলপাড়ের কৃষক মানুষ। বর্ষা মৌসুমে তাদের হাতে কাজ থাকে না। আবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করতে হয় নৌকায়। মাছ ধরে বাড়তি আয় ও পারাপারের জন্যই তারা ডিঙি নৌকা কিনতে এসেছেন। তবে গত বছরে তুলনায় এবার নৌকার দাম বেশি।
চাঁচকৈড় হাটের ডিঙি নৌকা তৈরির কারিগর আলাউদ্দিন, বকুল হোসেন ও আমির হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডিঙ্গি নৌকার কদর থাকায় এ মৌসুমে নৌকা তৈরী করে চলে তাদের সংসার। কাঠের প্রকারভেদে নৌকার দাম কম-বেশি হয়ে থাকে বলে জানান তারা। ১২-১৫ হাত নৌকা তৈরিতে খরচ হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। ১০-১২ হাত নৌকা তৈরি করতে খরচ হয় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। প্রতিটি নৌকা ৫০০ টাকা লাভে তারা বিক্রি করছেন।
ব্যবসায়ী শিবলু ফকির জানান, এবছর বৃষ্টি কম। উজানের কিছু পানি চলনবিলে দেরিতে প্রবেশ শুরু হয়েছে। সব এলাকা এখনও প্লাবিত হয়নি। বন্যার প্রাদুর্ভাব কম। ফলে নৌকার চাহিদা কম। গত বছরের তুলনায় শ্রমিক, কাঠ ও নৌকা তৈরীর প্লেনশীটের দাম বেশি হলেও চাহিদা কম থাকায় গত বছরের দামেই বিক্রি করছেন তারা।
একুশে সংবাদ/জ.প.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :