বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় কৌশলে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে মা-বাবাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি লিখে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে।
উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের হস্তিশুন্ড গ্রামের আলম বেপারী (৮৭) ও মাসুদা বেগম (৭৫) দম্পত্তি এ অভিযোগ করেন।
জানা যায়, আলম বেপারীর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে কনা চিকিৎসার কথা বলে তার মা-বাবাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে সম্পত্তি লিখে নেন। বুধবার উজিরপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী বাবা-মা।
বরিশালের উজিরপুরের বাসিন্দা মো.আলম বেপারী (৮৭) ও মাসুদা বেগম (৭৫) দম্পত্তি। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছেন।
স্থানীয়, অভিযোগ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের হস্তিশুন্ড গ্রামের আলম বেপারী বর্তমানে বড় ছেলে মো. লাভলু বেপারী (৫২) সঙ্গে বসবাস করছেন এই দম্পতি। লাভলু বেপারী রিক্সা চালান। তিনি সংসার ও অসুস্থ বাবা-মায়ের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তার বড় ছেলে লাভলু বেপারী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমি ভাড়া বাসায় থাকি। আমার মা-বাবাকে প্রত্যেক মাসে ১৫০০ টাকা দিই। আমার ছোট বোন কনা আক্তার বাবা-মাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। তাদের বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে বাবা-মা অসুস্থ। আমি সামান্য রিক্সা চালক। চোখে মুখে শুধু অন্ধকার দেখি। শুনেছি ২০১৯ সালে ছোট বোন কনা আক্তার আমার বাবা আলম বেপারী মুমূর্ষু অবস্থায় থাকায় জালিয়াতি করে সম্পত্তি লিখে নিযেছে। আমাকে ও আমার বড় বোনকে ঠকিয়েছে। আমার বাবার সম্পত্তি আমরা ফেরত চাই। আমার বৃদ্ধ মা-বাবা বর্তমানে তাদের সম্পত্তির টিনশেড ঘরের পাশে, জরাজীর্ণ একটি ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করছেন।
বৃদ্ধ আলম বেপারী বলেন, কৌশলে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে আমাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে স্বাক্ষর নেন ছোট মেয়ে। ছোট মেয়ের কাছে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে আমাকে। আমার কিছু বলারও নেই। আমার নানা রোগ শোকে জর্জরিত। ওষুধ কিনে খাওয়া তো দূরে থাক তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পড়তেই পারি না। বড় ছেলে রিক্সা চালিয়ে রোজকার করে তা দিয়ে ঠিক মতো চলে না।
বৃদ্ধ মাসুদা বেগম বলেন, আমার স্বামী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে উপজেলায় নিয়ে সম্পত্তি লিখে নেয়। এখন ছোট মেয়ে বলে তোমাদের দেখতে পারবো না। তোমরা কি করতে পারবা। জমি আমি লিখে নিয়ে গেছি। এখন তোমাদের দেখলেও পারি না দেখলেও পারি। আমার বড় ছেলে ওষুধ দিয়ে, সংসার দিয়ে কিভাবে চলবে? আমার স্বামী স্ট্রোক করে তার পিছনে অনেক টাকা গেছে। প্রতিদিন ১ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। আমি প্রশাসন ও র্যাবের কাছে যেতে চেয়েছিলাম। আমার স্বামী বলেন, র্যাবের কাছে গেলে ওদের মারধর করবে। পরে আমি যাইনি। জমি লিখে নেওয়ার পর কয়েকদিন দেখেছিলো,পরে আমাদের বের করে দেয়। ছোট মেয়ে কনা বলে , মরে গেলে মাটি দিয়ে রেখে আসবো সেই জায়গাটুকু তো রাখেননি, আমাকে লিখে দিয়েছে। জীবনের শেষ লগ্নে বেঁচে থাকতে, একটু শান্তির জন্য আমার সম্পত্তি ফিরে পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করি।
এ বিষয়ে কনা আক্তারের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি।
কনা আক্তারের জামাতা সেন্টু মিয়া বলেন, ২০১৯ সালে আমার শ্বশুর শাশুড়ি আমার স্ত্রী কনা আক্তার কে, তিন লক্ষ টাকা ও তাদের সম্পত্তি লিখে দেন। আমি ওই দলিলের পরিচিত। তাদের বৃদ্ধ বয়সে দেখা শোনার কথা ছিল সেই সুবাদে সম্পত্তি ও টাকা দেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সুমন জানান, আলম বেপারী ও তার স্ত্রী মাসুদা বেগম গত এক মাস ধরে আমার কাছে এসে বলেছিলেন। আমার ছোট মেয়ে কনা আক্তার আমাদের সম্পত্তি জোর পূর্বে লিখে নিয়েছে। আমি জেনে তখন ওই বাড়িতে যাই। যে দেখি টিনশেড একটি পাকা ভবন। দুটি করে তালা মারা। পাশে একটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে তারা বসবাস করছে। এ বিষয়ে আমি কনা আক্তার কে বললে তিনি বলেন, এটি আমাদের পারিবারিক ব্যাপার।
উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো.কামরুল আহাসান জানান,অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/র.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :