রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে সেই চাঞ্চল্যকর গৃহবধু মিনু বেগম হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ ও র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি দল।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকাল ১১ টায় রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জি. এম. আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিহতের শাশুড়ি বালিয়াকান্দি উপজেলার তেতুলিয়া (মধ্যপাড়া) গ্রামের কুদ্দুস শেখের স্ত্রী জহুরা বেগম ও স্বামী উজ্জল শেখ।
এসময় জি. এম. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের মিনু বেগমের (২৭) সাথে ১০ বছর পূর্বে তার আপন চাচাতো ভাই একই গ্রামের মো. কুদ্দুস শেখের ছেলে উজ্জ্বল শেখের (৩০) সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মিনু বেগমের স্বামী উজ্জল শেখ মধুখালী একটি পাটকলে শ্রমিকের কাজ করে। বিবাহের পর মিনু বেগমের গর্ভে সন্তান না আসায় তার স্বামী উজ্জল শেখ দ্বিতীয় বিবাহ করে। মিনু বেগমের গর্ভে সন্তান না আসায় আসামিরা মিনু বেগমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। গত ৫ আগস্ট রাতে মিনু বেগমের স্বামী উজ্জল শেখ কর্মস্থল হতে বাড়ীতে আসে এবং স্ত্রীর সাথে মোবাইল নিয়ে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে উজ্জল শেখ তার প্রথম স্ত্রী মিনু বেগমকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে পাশের রুমে তার মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এবং নানী শাশুড়ীকে ডেকে তোলে। তারা মিনু বেগমের মাথায় পানি ঢালে, কিন্তু ততক্ষণে মিনু বেগম আর বেঁচে নেই।
পুলিশ সুপার বলেন, যখন দেখে মিনু বেগম আর বেঁচে নেই তখন ছেলেকে আইনের হাত থেকে বাঁচাতে উজ্জলের বাবা তাদের বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর মরদেহ গুম করার পরিকল্পনা করে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্বামী উজ্জল শেখ, শ্বশুর মো. কুদ্দুস শেখ ও শাশুড়ি জোহরা বেগম মরদেহটিকে তাদের টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকের ভেতর ফেলে দেয়। সেপটিক ট্যাংকের বাটিও আটকিয়ে দেয়।
শ্বশুর পুত্রবধূ মিনু বেগমকে তারা যে হত্যা করল এটা যেন কেউ সন্দেহ না করতে পারে এর জন্য তারা বালিয়াকান্দি থানায় মিনু বেগম নিখোঁজ সংক্রান্তে একটি অভিযোগ করে এবং অন্যান্যদের কাছে রটিয়ে দেয় মিনু বেগমের সাথে অপর একজনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল এই জন্য সে বাড়ী হতে অন্যত্র পালিয়ে গেছে।
উক্ত বিষয়টি নিয়ে মিনু বেগমের মা গত ৮ আগস্ট বালিয়াকান্দি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে গত ১৯ আগস্ট আসামী উজ্জল শেখের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে পচা গন্ধ বের হলে প্রতিবেশীরা পুলিশকে সংবাদ দিলে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সেপটিক টাংকের ভেতর থেকে গৃহবধূ মিনুর পচাগলা লাশ উদ্ধার করে। থানা পুলিশ মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। পরে মিনুর মা বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার সাহার সার্বিক তত্ত্বাবধানে বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য চেষ্টা করে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অন্যতম আসামি জহুরা বেগমকে তারা গ্রেপ্তার করে। অপরদিকে আসামি উজ্জল শেখকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি দল। গ্রেপ্তারকৃত আসামি প্রাথমিকভাবে অন্যান্য আসামিসহ এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
একুশে সংবাদ/জ.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :