খুলনার কয়রা উপজেলা সদর থেকে ৪ নম্বর কয়রার দিকে যেতে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর। ১ বছর ৮ মাসে মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সড়কটিতে খানাখন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টিতে বেহাল সড়কটি কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
শুধু এ সড়কটি নয়, দীর্ঘদিন ধরে কয়রা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ২০টি সড়কের সংস্কারকাজ মাঝপথে বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন লক্ষাধিক মানুষ। বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চলমান এসব সড়ক সংস্কারকাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি)। চলমান ২০টি সড়কে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার পিচঢালাই করা হবে বলে জানা গেছে।
আবদুল কাদের নামের গোবরা এলাকার একজন ভ্যানচালক বলেন, কয়রার অধিকাংশ সড়কের সংস্কারকাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে আছে। এসব সড়কে খানাখন্দের কারণে অনেক সময় ভ্যান উল্টে যায়। ভাঙা খোয়া এলোমেলো হয়ে উঠে থাকায় চলাচল করা কঠিন।
কয়রা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কমলেশ কুমার সানা বলেন, উপজেলা সদরের পাশেই ছয়টি সড়কের কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে আছে। এ কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তা ছাড়া যেকোনো দুর্যোগে সড়কগুলো উপজেলা সদরের প্রতিরক্ষা বাঁধ হিসেবে কাজ করে। এ জন্য সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা খুবই জরুরি। সড়কটির সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
কয়রা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের (১ কোটি ৬০ হাজার টাকা) আওতায় চলছে দুটি সড়কের কাজ। এর মধ্যে শাকবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৬ নম্বর কয়রা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের একটি সড়ক রয়েছে। ৮১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দের এ কাজটির মেয়াদ গত বছরের ১৮ আগস্ট শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পুনরায় সময় বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে বিভিন্ন সময়ে কয়রা উপজেলার ১৯টি সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারদের কাছে এগুলোর কার্যাদেশও দেওয়া হয়। এর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র তিনটি সড়কের। ১০টি সড়কের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সংস্কার কাজ মাঝপথে এসে থমকে রয়েছে। কয়রা সদরের আইট-নলপাড়া ও মহারাজপুর ইউনিয়নের হায়াতখালী-গিলাবাড়ী সড়কের সংস্কারকাজ ঠিকাদার শুরু না করায় কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সুপারিশ করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী।
মাঝপথে এসে থমকে রয়েছে দুর্যোগ ঝুঁকি বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় থাকা কয়রা-গোবরা সড়ক ও উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) উন্নয়ন প্রকল্পের কপোতাক্ষ মৎস্য হ্যাচারিসংলগ্ন সড়ক, দেউলিয়া বাজার সংযোগ সড়ক ও মদিনাবাদ তহশিল কার্যালয়সংলগ্ন সড়ক।
কয়রা সদরের দেউলিয়া বাজার থেকে কাশিরাবাদ ভায়া উত্তরচক মাদ্রাসা সড়ক সংস্কারের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। সড়কটির কিছু অংশ খুঁড়ে রাখা ও কিছু অংশে ইটের খোয়া বিছানো হয়েছে। তবে সংস্কারকাজ কবে শেষ হবে বলতে পারছেন না কেউ।
উপজেলার গোবরা এলাকার দুর্যোগ ঝুঁকি বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সড়কটিতে আরসিসি গাইড নির্মাণের পর তা দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়। এরপর ইটের খোয়া ও বালুর আস্তরণ দেওয়া হয়েছে। ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা চুক্তি মূল্যের সড়কটির মেরামতের কাজ পেয়েছে মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্স অ্যান্ড মেসার্স রাজু ইন্টারন্যাশনাল (জেভি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজের মেয়াদ শেষ।
উপজেলার মদিনাবাদ তহশিল অফিসসংলগ্ন সড়ক, কপোতাক্ষ মৎস্য হ্যাচারিসংলগ্ন সড়ক, শাকবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সড়ক, ৪ নম্বর কয়রা সড়ক, গোবরা-মদিনাবাদ সড়কসহ অধিকাংশ সড়কে পিচঢালাইয়ের কাজ বাকি।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, ভাঙাচোরা সড়কের কারণে এত দিন তাঁরা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। সংস্কারকাজ দেরি হওয়ায় সেই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে বৃষ্টিতে অধিকাংশ সড়কের বালুর আস্তরণ সরে গেছে। দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সড়কগুলোতে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে তাতে পানি জমে এবং শুকনা মৌসুমে ওড়ে ধুলা।
গোবরা এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, গোবরা থেকে সদর পর্যন্ত সড়কটিতে খানাখন্দের কারণে চলাচল করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এক বছর ধরে এভাবে রাস্তাটা পড়ে আছে, কোনো কাজ হচ্ছে না। কী কারণে কাজ বন্ধ, কিছুই বুঝতে পারছেন না।
৬ নম্বর কয়রা এলাকার বাসিন্দা রেয়াসাদ আলী বলেন, ‘প্রতিদিনই আমাদের শাকবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশের সড়ক ধরে উপজেলা সদরে যেতে হয়। সড়কটি খুঁড়ে দীর্ঘদিন ধরে খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মানুষ এই সড়কে চলাচল করে। আমাদের কষ্টের শেষ নেই।’
কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী মো. দারুল হুদা বলেন, অধিকাংশ সড়কে পিচঢালাই কাজ বাকি। বিটুমিনের প্রধান শত্রু পানি। বৃষ্টির মধ্যে কাজ করলে পুরো টাকাই জলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও বর্ষার কারণে পিচঢালাইয়ের কাজ করা যাচ্ছে না।
খুলনা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিসুজ্জামান বলেন, সড়কগুলোর কাজ যথাসময়ে শেষ করতে ঠিকাদারদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অনেক ঠিকাদার কাজ শেষ করতে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। সময় বাড়ানোর পরও যাঁরা কাজ শেষ করেননি, সেই ঠিকাদারদের কার্যাদেশ ও জামানত বাতিল হবে। তবে আগামী অক্টোবরের মধ্যে অনেক সড়ক ব্যবহারের উপযোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
একুশে সংবাদ/ই.হ.প্র/জা
আপনার মতামত লিখুন :