লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে পৌরসভার বাইপাস সড়কের রামগঞ্জ টাওয়ার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ২ সন্তানের জননী মরিয়ম বেগম (৩৫) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে রামগঞ্জ থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাইপাস সড়কের রামগঞ্জ টাওয়ারের নীচতলা লিফটের রুমের পেছন থেকে এই লাশ উদ্ধার করা হয়। সংবাদ পেয়ে রামগঞ্জ থানা ওসি তদন্ত মোঃ রফিকুল ইসলাম ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত মরিয়ম রামগঞ্জ উপজেলার ২নং নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মালেক হাজী বাড়ির মনির হোসেনের (মনু মিয়ার) দ্বিতীয় স্ত্রী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাওয়ারের ৪র্থ তলায় ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির অফিস। ৫ম তলায় ছাদ আছে কিন্তু পরিত্যাক্ত। লিফটের পাশে নির্জন ও অন্ধকার একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে, যা নিচতলা পর্যন্ত।
নিহতের স্বজনরা জানান, মরিয়ম বেগম বেলা ১১ টার দিকে ৪ বছরের শিশু সন্তানকে সাথে নিয়ে বাড়ী থেকে রামগঞ্জে পৌরসভার বাইপাস সড়কের রামগঞ্জ টাওয়ারে চতুর্থ তলায় ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোঃ লিঃ এ নিজ নামের বীমার বাৎসরিক প্রিমিয়ামের টাকা জমা দিতে আসেন। সেখানে বীমা কর্মকর্তাদের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে তাকে চতুর্থ তলা থেকে ৫ম তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। ৫ম তলা থেকে ওই কর্মকর্তারা ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন স্বজনরা।
নিহতের মরিয়মের স্বামী মনির হোসেন জানান, আমার স্ত্রী মরিয়ম বেগম রামগঞ্জ ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ এর লিটন মাধ্যমে ২০২১ইং সনে ১৫ বছর মেয়াদী একটি বীমা করেন। সকালে ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির লিটন মোবাইল করে আমার স্ত্রীকে বীমার টাকা জমা দিতে আসতে বলে। পরে দুপুর ১২টার সময় আমার স্ত্রী বাড়ী থেকে সন্তানকে (৪) সাথে নিয়ে রামগঞ্জ টাওয়ারের ৪র্থ তলায় বীমা কোম্পানির অফিসে উক্ত বীমার তৃতীয় প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেয়ার জন্য আসে। বেলা সাড়ে ৩টায় অফিস থেকে আবু নাসের নামের একজন মাঠকর্মী মোবাইল করে আমার স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ও সন্তানটি কান্নাকাটি করছে এ খবর দেয়। আপনি অফিসে আসেন। আপনার বাচ্চাকে নিয়ে যান। এ খবর পেয়ে আমি অফিসে ছুটে আসি। পরে বীমা কোম্পানীর লোকজনসহ আমার স্ত্রীকে খুজতে থাকি।
মনির হোসেন আরো জানান, বীমা কোম্পনির মাঠকর্মী লিটন প্রায় তার স্ত্রীকে মোবাইল করে বিভিন্ন কথা বলতো। মরিয়মের লাশ দেখতে পায়। মৃত মরিয়মের সন্তান (৪) টাওয়ারের পরিত্যক্ত ৫ম তলার লিফটের পাশে একটি সুড়ঙ্গ দেখিয়ে বলেন, স্যার আমার মাকে এখান দিয়ে পেলে দিয়েছে। এখন আমি আমার মাকে খুঁজে পাই না। আমার স্ত্রী মরিয়মের লাশ দেখতে পায়।
রামগঞ্জ টওয়ারের ম্যানেজার মোঃ মহিউদ্দিন সাগর জানান, ইন্সুরেন্স অফিসের লোকজন বেলা ২টায় একটা বাচ্চা আমাদের পাওয়া গেছে। তার মা তাকে ফেলে রেখে গেছে বলে জানায়। পরে আমি মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড জাকির হোসেনকে পুরো বিল্ডিংয়ে খুড়ে দেখার জন্য নির্দেশ দেন। সিকিউরিটি গার্ড কোথাও না পেয়ে টাওয়ারের আন্ডার গ্রাউন্ডের গাড়ি পার্কিংয়ের লিপ্টের রুমে মরিয়মের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে রামগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
বীমা কোম্পানির মাঠকর্মী আবু নাসের বলেন, লিটন সাড়ে ১২টার দিকে গ্রাহক মরিয়মের টাকা জমা দেয়। পরে বাচ্ছাটি রেখে গ্রাহক চলে যায়। কিছুক্ষণ পর লিটনও চলে যায়। পরে লিটন আবার ফিরে এসে ৩টার সময় চলে যায়। বাচ্ছটি হাঁটা-চলা করতে থাকে। কিন্তু অনেকক্ষণ পর বাচ্ছাটি কান্নাকাটি করছে দেখে আমি মোবাইল করে মরিয়মের স্বামীকে জানাই। তার স্বামী আসলে জানতে পারি নিচতলায় ওই গ্রাহকের লাশ পাওয়া গিয়েছে।
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ রামগঞ্জ শাখার ইনচার্জ মোঃ মনির হোসেন জানান, আমি কোম্পানীর জুম মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। মরিয়ম সম্ববত দুপুর ১২টার দিকে আমাদের ক্যাশিয়ার আবদুল্লাহির রহিমের কাছে টাকা জমা দিয়ে এর পরের ঘটনা আমি জানিনা। বিকাল প্রায় সাড়ে ৪টার দিকে মার্কেটের ম্যানেজার আমাকে ফোন করে মার্কেটের নীচে যেতে বলেন। অন্য লোকজনসহ আমি আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে দেখতে পাই মরিয়ম বেগমের লাশ লিফ্টের পিঁছনের একটি নির্জন স্থানে পড়ে আছে। সাথে সাথে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
রামগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, রামগঞ্জ টাওয়ারের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে মরিয়ম বেগম নামের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :