কালাই উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী এখনও উপজেলার ১০টি হিমাগারে ০৭ লাখ ৫০ হাজার বস্তা আলু মজুত রয়েছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময় প্রকারভেদে ৮ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে আলু কেনা পড়েছিল। হিমাগারের ভাড়া, বস্তার মূল্য, পরিবহন খরচসহ এসব আলু হিমাগার থেকে বের হচ্ছে ১৬ থেকে ২১ টাকা কেজি দরে। অথচ এই আলু পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায় এবং খুচরা বাজারে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের বেঁধে দেয়া পাইকারি দাম ২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও মজুতদারদের লাভ থাকবে কেজি প্রতি ১০-১১ টাকা। তারপরও তারা খুশি নন। হিমাগার থেকে আলু বের করা বন্ধ রেখে খুচরা বাজারে তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। এমন আশঙ্কা খুচরা সবজি বিক্রেতাদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষকরা হিমাগারে যে পরিমাণ আলু রাখেন তা খুবই অল্প। তারা বেশীরভাগই বীজ আলু রাখেন আর সিংহভাগ আলুই রাখেন বড় ব্যবসায়ীরা। সময় বুঝে সিন্ডিকেট করে হিমাগার থেকে বেশি দামে আলু বিক্রি করেন তারা, যা বর্তমানেও অব্যাহত রেখেছেন। এরইমধ্যে সরকার আলুর দাম বেঁধে দিয়েছেন এবং প্রশাসন বাজার তদারকি জোরদার ও অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি হিমাগারে অভিযান চালিয়ে বেশী দামে আলু বিক্রির অভিযোগে জরিমানাও করেছেন। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না বললেই চলে।ফলে খুচরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
গত শনিবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে বেঁধে দেয়া দাম কেউই মানছেন না।বেশি দামেই আলু বিক্রি হচ্ছে। দেশী পাকরি (লাল) প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, স্ট্রিক ৫০ টাকা, ডায়মন্ড (সাদা) ৫৫ টাকা, ফাঁটাপাকরি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার পাইকারি ২৭ টাকা ও খুচরা ৩৬ টাকা কেজি দাম বেঁধে দিয়েছেন। এই দামে আলু বিক্রি করলেও পাইকারি ও খুচরা ব্যাবসায়ীদের লাভ থাকবে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে ৫০-৬৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হচ্ছে।
কালাই হাটের সবজি ব্যবসায়ীরা বলেন,বাজারে এখন সহজে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকারভেদে যে আলু ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে কিনতে হত সেই আলু নাকি ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হবে। প্রশাসনের লোকজন প্রায় দিনই হিমাগারে আসেন তাই মজুতদাররা আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। অথচ পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু হিমাগারে আছে। যাও পাওয়া যাচ্ছে তা পরিমানে কম। আবার দামও বেশী। তাই বেশী দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যখন আলু বের করবেন তখন একটু দাম কমতে পারে। এখন যেসব আলু বিক্রি হচ্ছে সেগুলো কৃষকদের।
হিমাগার কর্তৃপক্ষরা জানান, সরকার দাম বেঁধে দেয়ার পরেও আলুর দাম বেশি ছিল। যেদিন থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের অভিযান শুরু হয়েছে সেদিন থেকে ব্যবসায়ীরা আর আলু হিমাগার থেকে বের করছেন না। ২/১টা হিমাগারে আলু বের করা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে না। অনেকেই আলু সরিয়ে অন্যত্র মজুত করছেন। এখনও হিমাগারে সংরক্ষণের ৪৫ শতাংশ আলু মজুত আছে। এরমধ্যে ১০ শতাংশ বীজ আলু বাকি সবই খাবার আলু।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন,হিমাগার থেকে মজুতদাররা আলু বের করে বিক্রি করছেন না। এতে খুচরা বাজারে দাম কমানোও সম্ভব না। যেসকল মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রেখেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/স.উ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :