সাভারের আশুলিয়ায় এক মাদ্রাসায় বন্ধ রুমে বক্সে ইসলামি গান বাজিয়ে পেটানোর পর ১৩ দিন থেকে নিখোঁজ রয়েছে আব্দুল মোমিন মুন্না (১২) নামে এক শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার থানায় জিডি করার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সেই পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ বলছে, তাদের ছেলে হারিয়েছে তারাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করুক। আমরাও খুঁজছি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের লোকজনও খুঁজতেছে।
রবিবার (৮ অক্টোবর) সকালে নিখোঁজ শিক্ষার্থী বাবা মো. ওমর ফারুক এসব তথ্য জানান।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টার দিকে কাইচাবাড়ি আহম্মেদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে নিখোঁজ হয় শিশুটি।
২৯ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শিশুটির মা মনিশা বেগম।
নিখোঁজ শিক্ষার্থী আব্দুল মোমিন মুন্না রংপুরের পিরগাছা থানা বলিহাট গ্রামের মো: ওমর ফারুকের ছেলে। সে পোশাক শ্রমিক পিতা মাতার সাথে কাঁইচাবাড়িতে থেকে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতো।
শিক্ষার্থীর বাবা মো: ওমর ফারুক বলেন, আমি গার্মেন্টস করি আমার স্ত্রীরও গার্মেন্টস করে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার দিকে আমার ছেলের মাদ্রাসা থেকে আবু হানিফ নামের এক শিক্ষক এসে বলে আমার ছেলে বাসায় আছে কি না? কিন্তু আমি তো ছেলেকে মাদ্রাসায় রেখে এসেছি। তার তো মাদ্রাসায় থাকার কথা। পরে মাদ্রাসার সেই শিক্ষক বলে আপনার ছেলে ব্লুটুথ ইয়ারফোন চুরি করেছে। এর জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে সে মাদ্রাসা থেকে পালিয়েছে। এরপর আমরা মাদ্রাসায় যাই সেখানে আমার ছেলে নেই। আমরা তিন চারদিন ধরে আমার ছেলেকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে না পেয়ে থানায় একটি জিডি করি।
তিনি আরও বলেন, জিডির পর মাদ্রাসার সভাপতি আবু বক্কর বাক্কা আমাদের বাসায় আসে। হুমকি দেয় জিডির কপি চায় তিনি। কপি দেইনি দেখে মারতে গিয়েছে আমাকে। অন্য দিকে পুলিশকে বললে পুলিশ বলে, আপনারা খুঁজতে থাকেন।
শিশুটির মা রেশমা বেগম বলেন, হজুর আমার ছেলেকে অনেক মারধর করেছে। আমি ছাত্রদের থেকে শুনেছি কয়েকটা লাঠি এক সাথে করে শিক্ষক আবু হানিফ কস্টেপ পেচিয়ে একটা রুমে নিয়ে সাউন্ড বক্সে ইসলামিক গান ছেড়ে আমার ছেলেকে মারধর করছে। এরপর থেকে আমার ছেলেকে আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমরা থানায় যাই। থানা থেকে পুলিশও সেই মাদ্রাসায় যায়। তদন্ত করে। কিন্তু আমার ছেলেকে পায় না। পুলিশ বলে তোমরা খোঁজো ওরাও খুঁজোক৷ আমি আমার ছেলেকে চাই, আর তাকে মারধর করা হয়েছে সেটার বিচার চাই৷
এ ব্যপারে মাদ্রাসাটির প্রিন্সিপালকে মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি যেদিন পালিয়ে যায় আমি ছুটিতে ছিলাম। আমি মাদ্রাসায় এসে শুনেছি এমন ঘটনা। আমাদের শিক্ষক ছেলেটিকে মেরেছে বিষয়টি আমি শুনেছি। সেটারও ব্যবস্থা আমরা নেবো। আগে ছেলেটিকে খুঁজে পাই। আর ছেলেটির পরিবারের সাথে আমাদের সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসাটির সভাপতি আবু বক্কর বাক্কা বলেন, একটা ইয়ারফোন নিয়ে এই কান্ড হয়েছে। পরে শিক্ষকরা তার বিচার করছে মারছে। এরপর থেকেই শিশুটি কোথায় গেছে আমরা তাকে খুঁজতেছি। পুলিশও খুঁজছে।
শিশুটির পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না আমরা শুধু জিডির কপি চাইতে গেছিলাম।
বিষয়টি নিয়ে জিডি তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকির বলেন, আমি ঘটনার বিস্তারিত জানতে মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলেছি। এছাড়া আশেপাশের বিভিন্ন থানায় এই শিশুটির তথ্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সবাইকে খুঁজতে বলেছি।
মাদ্রসা কর্তৃপক্ষ পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আরেকটি আলাদা জিডি হয়েছে৷ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জিডি কপিটি চেয়েছিলো ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে। সেটি দেইনি দেখে কথা কাটা কাটি হয়েছে।
একুশে সংবাদ/ন.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :