ফরিদপুরের বোয়ালমারীর চাঞ্চল্যকর যৌতুকের জন্য স্ত্রী জিয়াসমিন হত্যার ঘটনার প্রধান হত্যাকারী স্বামী বক্করকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ১০।
রোববার (৮ অক্টোবর) রাত ১০টায় ফরিদপুর জেলার সালথা থানা এলাকার সোনারপুর বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার বক্কর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সাতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
র্যাব জানায়, রবিবার আনুমানিক রাত সাড়ে ১০ টায় র্যাবের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলার সালথা থানা এলাকায় সোনারপুর বাজার এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে আসামি বক্কার শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, বক্কার শেখ এর সাথে জিয়াসমিনের ১৫ বছর পূর্বে পারাবারিক সম্মতিক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের ১২ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান ও ৪ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি বক্কার শেখের সাথে জিয়াসমিনের বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে যৌতুকের জন্য জিয়াসমিনকে বিভিন্নভাবে শারিরীক নির্যাতন ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২২ তারিখে বক্কার শেখ জিয়াসমিনকে মারাত্বকভাবে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখম করে। যার ফলে জিয়াসমিন আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ যাবৎ চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
জিয়াসমিন সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পর স্বামী বক্কার শেখ পুনরায় তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কুপরামর্শ ও সহযোগীতায় জিয়াসমিনের হাত-পা বেঁধে ঘরের ভিতরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে এবং তার মাথার চুল কেটে ফেলে। পরবর্তীতে বক্কার শেখ জিয়াসমিনের বাবাকে ফোন করে বলে যে, যদি সে তার মেয়ের সুখ-শান্তি চায় তাহলে সৌদিআরবে যাওয়ার জন্য তাকে যৌতুক হিসেবে ছয় লক্ষ টাকা দিতে হবে। অতঃপর গত সেপ্টেম্বরের ২৯তারিখ জিয়াসমিন তার বাপের বাড়ীতে গিয়ে তার বাবাকে নির্যাতনের ঘটনা খুলে বলে এবং তার স্বামীকে সৌদিআরবে যাওয়ার জন্য যৌতুক হিসেবে উক্ত টাকা না দিলে ঐ বাড়ীতে তার আর সংসার করে হবে না।
উক্ত ঘটনা শোনার পর জিয়াসমিনের বাবা তাকে বলে যে, তার সহায়-সম্পত্তি যা কিছু আছে সব বিক্রি করে হলেও সে জিয়াসমিনের স্বামীকে তিন লক্ষ টাকা ব্যবস্থা করে দিবে এবং এই কথাটি জিয়াসমিন যেন তার স্বামীকে জানায়।
পরেরদিন মাঝ রাতে ১টার দিকে ওই এলাকার আশপাশের লোকজন জিয়াসমিনকে বাবাকে ফোন করে জানায় যে, বক্কার শেখ ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকের দাবিতে তার মেয়েকে বেধড়ক মারধর করছে। সংবাদ প্রাপ্তির পর তার বাবা পরিবারের কয়েজনকে নিয়ে রাত ৩টার দিকে বক্কার শেখের বাড়ীতে পৌঁছালে সেখানে গিয়ে দেখতে পায় যে ওই বাড়ীতে কেউ নেই। অতঃপর তারা স্থানীয় ও আশপাশের কয়েকজন লোকসহ ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় তার মেয়ে জিয়াসমিনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্বক জখমের চিহ্ন ও গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় জিয়াসমিনের মৃত দেহের অর্ধেক শরীর চৌকির নিচে এবং অর্ধেক শরীর চৌকির বাহিরে পড়ে আছে।
পরবর্তীতে পুলিশকে সংবাদ দিলে বোয়ালমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মিডফোর্ট স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
হত্যাকান্ডের পর মৃত জিয়াসমিনের পিতা আজিজার মোল্যা (৫১) বাদি হয়ে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানায় বক্কার শেখ ও তার পরিবারের আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে হত্যার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর থেকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।
র্যাব-১০ এর কোম্পানী অধিনায়ক লেঃ কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার জানায়, যৌতুকের জন্য নির্মমভাবে স্ত্রীকে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি বক্কারশেখকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
একুশে সংবাদ/স.চ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :