পিরোজপুরের কাউখালীতে দরিদ্র এক দিনমজুর পরিবার সদ্যজাত যমজ তিন শিশ লালন পালনে চরম বিপাকে পড়েছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানো এ পরিবারে এক সাথে তিন শিশুর সুস্থ ও নিরাপদ জীবনে বেড়ে ওঠা নিয়ে শকিংত পরিবারটি।
উপজেলার সয়না-রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বেতকা গ্রামের দিনমজুর নুর মোহাম্মদের কন্যা মিলি বেগমের ঘর আলোকিত করে একসঙ্গে জন্ম নিয়েছে ছেলে সন্তান। একসঙ্গে তিন ছেলে সন্তান পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছিলেন হতদরিদ্র পরিবারটি। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই তাদের সে আনন্দে ভাটা এখন পড়েছে। দিনমজুর পরিবারের তিন সন্তানের দুধ যোগাতেই নাভিশ্বাস উঠছে পরিবারটির। চিকিৎসা খরচ নিয়েও বিপাকে পরিবারটি। এ নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে তাদের। সন্তানদেও সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চেয়েছেন অতিদরিদ্র মিলি- ইউছুফ দম্পতি।
জানা গেছে, প্রসূতি মিলি বেগম (২৮) গত ২ মে বরিশাল মেট্রোপলিটন ক্লিনিকে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে একসাথে তিন সুস্থ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। পরিবারে নতুন সদস্যের আগমনে খুশিতে আত্মহারা ইউছুফ-মিলি দম্পতি। সন্তানদের নাম রাখেন ঈসা, মুছা ও ইয়াছিন। এখন তিন সন্তানকে লালন-পালন করতে যে খরচ, তা তিনি রোজগার করতে পারেন না। পাঁচ মাস বয়সী ওই তিন শিশুর লালন-পালন ও চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এখন পরিবারটি। এ ছাড়া পাঁচ বছর বয়সী বায়েজিদ নামে আরো একটি পুত্রসন্তান রয়েছে তাদের। দরিদ্র পরিবারটির ঘরে চার সন্তানকে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সামর্থ্য নেই তাদের।
স্থানীয়রা জানান, বিয়ের পর থেকে অধিকাংশ সময়ই মিলি তার দরিদ্র বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। তার স্বামী পটুয়াখালীর বাউফলে নিজ বাড়িতে থেকে দিনমজুরের কাজ করে । তিনি মাঝে মধ্যে কিছু খরচের টাকা পাঠান। এমনিতেই সংসারে অভাবের শেষ নেই। তার ওপর আরো তিনটি যমজ শিশুসন্তান নিয়ে দরিদ্র পরিবারটি এখন দিশেহারা।
গৃহবধূ মিলি বেগম বলেন, আল্লাহ আমার ঘরে ফুটফুটে তিনটি পুত্র সন্তান দিয়েছেন। এই তিনটি সন্তান জন্মের সময় ধার দেনা করে আমরা এখন খুব বিপদে আছি। এদের মুখের দিকে তাকালে মায়া লাগে। ওদের পরিচর্যা ও পুষ্টিকর খাবারের ঠিকমত দিতে পারছি না। আমাদের সামর্থ্য নেই তাদের পরিপূর্ণ খাবারের ব্যবস্হা করার।
দিনমজুর ইউছুফ মিয়া বলেন, যমজ তিন সন্তান লালন-পালনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকার মতো লাগে। এর ওপর পাঁচ বছর বয়সী ছেলেসহ আমাদের নিজেদেরও তো পেট আছে। আমি দিনমজুরের কাজ করে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় করি। আবার সবসময় কাজও থাকে না আমার। একন আল্লায় জানে কেমনে ওদের বাঁচাবো।
স্থানীয় সমাজসেবক আবদুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলার দক্ষিণ বেতকা গ্রামের দিনমজুর একটি পরিবার যমজ তিন সন্তানদের ভরণপোষণ নিয়ে কষ্টে আছে জানতে পেরে আমি কিছু সহায়তার চেষ্টা করেছি। দরিদ্র মিলির বাবার বাড়িতে গিয়ে শিশুদের জন্য নগদ কিছু অর্থ, পোষাক ও খাবার দিয়ে আসি। কিন্তু এটি যথার্থ নয় পরিবারটির জন্য। মানবিক ও বিত্তবানদেও সহায়তা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা বলেন, হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া যমজ তিন শিশু নিয়ে তার মা আমার কাছে এসেছিলো। আপাতত ব্যক্তিগতভাবে বাচ্চাদের জন্য কিছু নগদ অর্থ দিয়েছি। এই শিশুদের জন্য সহায়তা করতে পেরে আমি আনন্দিত। এই শিশুরা যাতে সমাজের অন্য শিশুদের মতো সমান সুযোগ পেয়ে বড় হতে পারে সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ/ব.আ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :