হরতালের সময় সংঘর্ষে নিহত শ্রমিকলীগ নেতার দাফন সম্পূর্ণ

বিএনপির হরতালকে কেন্দ্র করে লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগরে সংঘর্ষে নিহত শ্রমিকলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের দাফন সম্পূর্ণ হয়েছে। সোমবার (৩০) অক্টোবর বিকেল সাড়ে তিনটায় সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের বেড়পাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পূর্ণ হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত রবিবার (২৯ অক্টোবর) হরতালকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বাফার গোডাউন লোড-আনলোড শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা রাজু ও আওয়ামীলীগ কর্মী বিপ্লব, বাবলু মিয়াসহ কয়েকজন আওয়ামিলীগ নেতাকর্মী আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত জাহাঙ্গীর আলম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নিহত শ্রমিকলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের মরদেহ সোমবার(৩০অক্টোবর) দুপুর ১৩ টায় ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

নিহত শ্রমিকলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী আফরোজা বেগম(৪০) বলেন, বিএনপির গুন্ডারা আমার স্বামীকে খুন করেছে। আমার সন্তানগুলো এতিম হয়ে গেলো আর আমি বিধবা। হত্যার সাথে জড়িত সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি তার। নিহতের মা জাহানারা(৬০) বলেন, আমার ছেলে কারো ক্ষতি করে না। তার দোষ সে হাসিনার দল করে। ছেলে হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

জাতীয় শ্রমিকলীগের লালমনিরহাট জেলা আহবায়ক জহুরুল ইসলাম টিটু বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা মহেন্দ্রনগরে অবস্থানরত আওয়ামিলীগ নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা করেছে। হামলায় অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। এরমধ্যে শ্রমিকলীগ নেতা জাহাঙ্গীর রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এই হামলা ও হত্যাকান্ড পরিকল্পিত ভাবে ঘটিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেও অভিযোগ তার। টিটু বলেন, এখনো দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দ্রুতই জাহাঙ্গীর হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আনদোলন করা বলেও হুমকি দেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা জানান, বিএনপির ডাকা হরতালে নেতাকর্মীরা শান্তিপুর্ন ভাবে কর্মসুচি পালন করছিল। কিন্তু আ‍‍`লীগের কর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে কার আঘাতে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়েছে তা তিনি জানেন না।

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মতিয়ার রহমান বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু সন্ত্রাসীদের গডফাদার। দুলুর নির্দেশনায় হামলা করে নির্মমভাবে আমাদের শ্রমিকলীগ নেতা জাহাঙ্গীরকে খুন করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। মৃতের দাফন সম্পন্নের পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আহবান করে তিনি আরো বলেন, অবিলম্বে হত্যাকান্ডে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হোক।

লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মোঃ ওমর ফারুক বলেন, ‘রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত জাহাঙ্গীর আলীর লাশের ময়না তদন্ত শেষে সোমবার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মামলা রুজু করা হবে। বিএনপির হরতালে নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে তারা হত্যার ঘটনায় জড়িত আছে কি না এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি ওসি।

নিহত শ্রমিকলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের চাচা মাওলানা লুৎফর রহমানের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত জানাযায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ মতিয়ার রহমান, জেলা যুবলীগের সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবির, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাশেদ জামান বিলাশ, জেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের আহবায়ক জহুরুল ইসলাম টিটুসহ জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয়।

একুশে সংবাদ/বিএইচ