মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য কত বিচিত্র কাজ করতে হয় । তেমনই এক ব্যতিক্রম পেশা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা। পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ শেষে তা বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে সংসার। আর এই ডিম বিক্রি করে দুবেলা-দুমুঠো খাবারের জোগাড় করছেন ফরিদপুর জেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের আজমল বেড়া গ্রামের মুহিত ব্যাপারী।
শীত ও বর্ষার সময় মূলত এক শ্রেণির লাল বড় পিঁপড়া বিভিন্ন গাছের মগ ডালের পাতা ও গাছের খোরলের (গর্ত) মধ্যে বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে থাকে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আম, জাম, মেহগনিগাছ সহ বিভিন্ন গাছ থেকে বাঁশের আগায় জাল দিয়ে ঠোঙা তৈরি করে এসব ডিম সংগ্রহ করা হয়। সারাদিন ঘুরে ৬০০-গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন কেউ কেউ। পরে সেগুলো মৎস্য চাষিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন মুহিত ব্যাপারিসহ এই পেশায় জড়িত অনেকে।
মুহিত ব্যাপারী জানান, সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশিয় গাছ গুলোতেই লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে পিঁপড়ার দল। পরে সেখানে তারা ডিম পারে।
বড় বাসা থেকে ১’শ থেকে দেড়শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষের দিকে ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কের সাথে করতে হয়। এটি সাধারণত মাছের খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। ডিম আস্ত না রাখলে মাছ তা খায় না।
মুহিদ ব্যাপারী আরো জানান, লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম প্রতি কেজি ৮’শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করে থাকেন। সাধারণ সৌখিন মাছ শিকারীরা তার কাছ থেকে এই ডিম ক্রয় করে থাকেন। এই ডিম মাছেদের খুব প্রিয় খাবার। বরশিতে আটা-ময়দা-পাউরুটি, একানির মতো আধারের সঙ্গে লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম দেয়া হলে বড় মাছেরা সহজে টোপ গেলে।
এজন্য যারা সৌখিন মাছ শিকারি বা টিকিট কিনে হুইল বর্ষি দিয়ে মাছ শিকার করে তাদের কাছে পছন্দের টোপ হলো পিঁপড়ার ডিম। পানির নির্দিষ্ট স্থানে আধার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা রয়েছে জেলেদের কাছেও। এই জন্য অনেক সময় জেলেরা তাদের কাছ থেকে ডিম কিনে থাকেন।
কলেজ ছাত্র সন্দীপন চক্রবর্ত্তী বলেন, জানান, প্রকৃতি বা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা ঠিক নয়। এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। গাছের মগ ডালের পিঁপড়ার ডিম বা পিঁপড়া বনের
পাখ-পাখালির খাদ্য। তাদের খাদ্য ঘাটতি হলে পাখিদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিতে পারে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :