AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

২৪ঘন্টায় তৈরীকৃত চীবর উৎসর্গের পর চীবর দান সম্পন্ন


Ekushey Sangbad
নিউটন চাকমা, রাঙামাটি
০৬:১০ পিএম, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩
২৪ঘন্টায় তৈরীকৃত চীবর উৎসর্গের পর চীবর দান সম্পন্ন

শীল, প্রজ্ঞা, মৈত্রী, অহিংসা, ও নির্বাণ লাভের আবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে লাখো লাখো পূর্ণ্যার্থীদের অংশগ্রহনের মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য সাধু সাধু সাধু ধ্বনিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বছরের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ৪৮তম কঠিন চীবর দানোৎসব রাঙামাটি রাজবন বিহারে ২৪ ঘন্টায় তৈরীকৃত কঠিন চীবরটি উৎসর্গের মধ্য দিয়ে দানোত্তম কঠিন চীবর দান সম্পন্ন হয়েছে।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাঙামাটি রাজবন বিহার মাঠ প্রাঙ্গণে লাখো লাখো বৌদ্ধ ধর্মীয় সমাবেশে পরির্বিাণ প্রাপ্ত বাংলাদেশের ধর্মীয় গুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তে স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে ২৪ ঘণ্টায় প্রস্তুতকৃত চীবর রাঙামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের হাতে চীবর উৎসর্গ করেন, রাঙামাটি সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায়। চীবর উৎসর্গের সময় ভক্তদের সাধু, সাধু, সাধু ধ্বনিতে রাজবন বিহারের সমগ্র আশেপাশে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। পুণ্যবতি সেবিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে, সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান।

এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকেলে বেইন ঘর উদ্বোধন ও চরকায় সুতা কাটার মধ্য দিয়ে রাঙামাটির রাজবন বিহারে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী ৪৮তম কঠিন চীবর দানোৎসব। রাতভর তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে, সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে চীবর বুননের কাজ। দুপুরে ভিক্ষু সংঘকে সেই চীবর দান করার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত রাঙামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনের চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়।

রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, বৌদ্ধদের যত ধরনের দান রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে পুণ্যের দান হলো কঠিন চীবর দান। এজন্য কঠিন চীবর দানোৎসবকে দানোত্তম চীবর দান উৎসব বলা হয়ে থাকে। এ বছর রাজবন বিহারে প্রায় দুইশ বেইন ও দেড় শতাধিক চরকার সাহায্যে ৬ শতাধিক দায়ক-দায়িকা চীবর বুননের কাজে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া এই বছর ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে ৭৬ জনসহ আমেরিকা, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা থেকে বহু পূর্ণ্যার্থী রাঙামাটি রাজবন বিহারের ৪৮তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করছেন।

উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সহ সভাপতি নীরুপা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তর এই ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় প্রাচীন নিয়মে। প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উৎসর্গ করা হয়। জগতে যত প্রকার দান রয়েছে তার মধ্যে এ চীবর দানই হচ্ছে সর্বোত্তম দান। এতে পূর্ণতা লাভ করা যায়।

এর আগে রাজবন বিহার প্রাঙ্গনে আগত লাখো লাখো পূর্ণ্যার্থীর সামনে রাঙামাটি রাজবন বিহারের প্রধান মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তের অমৃত কথা অডিও উপস্থাপন করা হয়। পরে আগত দায়ক দায়িকার উদ্দেশ্যে স্বধর্ম দেশনায় দেন, রাঙামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এ সময় তিনি কৌশল কর্ম, সৎ চেতনা ও সৎ জীবন নিয়ে জীবন যাপন করার জন্য হিতোপোদেশ দেন।


চীবর দান উৎস ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, রানী ইয়েন ইয়েন, সাবেক পার্বত্য উপমন্ত্রী মনিস্বপন, সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী উষাতন তালুকদার, রাজবন বিহারের কার্যনির্বাহী পরিষদেরসহ সভাপতি নিরূপা দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসাসহ দেশি-বিদেশি পূর্ণ্যার্থীরা অংশ নেন।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কঠিন চীবর দান ছাড়াও, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, কল্পতরু দান, বিশ্বশান্তি প্যাগোডার অর্থ দান, হাজার প্রদীপ দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দুই দিনব্যাপী সর্ববৃহৎ ৪৮তম কঠিন চীবর ধর্মীয় উৎসবে সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল রাজবন বিহার। বিহার প্রাঙ্গণের আশেপাশে এলাকায় হরেক রকম জিনিস নিয়ে পরশা সাজিয়ে বসেছে বসেছে দোকানীরা।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে রাঙামাটি রাজবন বিহারে চীবর দান হয়ে আসছে। এ উৎসবে যোগ দিতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে লাখো মানুষ ভিড় জমায় রাজবন বিহারে। আর এ কঠিন চীবর দান উৎসবের অন্যতম উপলক্ষ হলো পারস্পরিক মৈত্রীভাব গড়ে তোলা। আর রাতে রাজবন বিহারে ফানুস উড়িয়ে শেষ হবে এই কঠিন চীবর দান উৎসবের আয়োজন।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!