আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে উৎসবের আমেজে মেতে উঠেছে মাদারীপুরবাসী। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা আজ শনিবার মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় একটি নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ভাষণ দেবেন। শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে কালকিনিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এসব এলাকার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী কি কি প্রতিশ্রুতি দেবেন, তা নিয়েও সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই এলাকার মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী সভা উপলক্ষে মাদারীপুরের কালকিনিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো একাধিক প্রস্তুতি ও মতবিনিময় সভা, প্রচার–প্রচারণা ও মিছিল করেছে। কালকিনি উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা-উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলছে মাইকিংও।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা তিনটায় গোলাপগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে কোটালীপাড়ায় একটি জনসভা শেষে সড়ক পথে কালকিনি আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কালকিনি উপজেলা শহরের সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন তিনি। এ সময় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাও থাকবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কালকিনি সফর ঘিরে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। একাধিক সাধারণ ভোটার জানিয়েছেন, জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কী ভাষণ দেবেন, তা নিয়ে সবার মনে কৌতুহল রয়েছে। তিনি কালকিনি, ডাসার ও মাদারীপুরের একাংশ মিলে মাদারীপুর-৩ আসনের উন্নয়নে ভবিষ্যতে কী কী করবেন কিংবা তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কী হতে পারে, তা জানতেও মানুষের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী যেহেতু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম, তাঁকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করবেন কি না—সেটা নিয়েও ভোটারদের মনে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা। তিনি বলেন, ‘মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম আগমন ঘটবে। এই কারণে এখানকার মানুষ অত্যন্ত উৎফুল্ল। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীর এই জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগ ও আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সবাই মিলেমিশে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি যে দিকনির্দেশনা দেবেন, তা সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে মেনে চলবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন সরদার বলেন, ‘আশা করছি, জনসভায় এক লাখ লোকের সমাগম ঘটবে। প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও অনেক মানুষ আসবে। বৃহস্পতিবার থেকে আমাদের মাইকিং শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত।’
কালকিনি, ডাসার ও সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম।
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আয়োজন করা হলেও সেখানে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম ও তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন। এ ব্যাপারে তাহমিনা বেগম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখানে আসবেন, এর চেয়ে সুখবর আর কিছুই হতে পারে না। তাঁকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে যেহেতু আমি নির্বাচন করছি, ওই জনসভায় গেলে আমার বহু কর্মীও জনসভায় আসবেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় থাকার ইচ্ছা থাকলেও মাদারীপুর-৩ আসনের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার থাকা হচ্ছে না।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত যে, প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আসছেন। তিনি সারা দেশেই প্রচারণা করছেন। তবে কালকিনিতে তিনি সশরীরে জনসভায় বক্তব্য দেবেন। তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছোটকন্যা শেখ রেহানাও থাকবেন। কালকিনির জনসভায় শেখ হাসিনার তার নির্দেশিত কথাই এদেশের মানুষ পুনরায় নৌকায় ভোট দিবেন। আমরা যারা নৌকার প্রার্থী রয়েছি, তারা অধীর অপেক্ষায় আছি। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।’
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবাহান মিয়া গোলাপ বলেন, ‘কালকিনির এই জনসভায় প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত হবেন। আমরা মনে করছি, প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য, তার বক্তব্য শোনার জন্য লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটবে এই জনসভায়। এই অঞ্চল আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত। তারপরেও প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। যারা এখনো নৌকার বিরোধিতা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে তারাই নৌকার হয়ে যাবেন।’
এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে কালকিনিতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এলাকাজুড়ে নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে তাদের কার্যক্রম করছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ছয় স্তরের নিরাপত্তার বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।’
একুশে সংবাদ/ই.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :