বনের ভেতরে খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বজ্যের পচা পানি বিষক্রিয়ায় হয়ে আশপাশের বেশ কয়েকটি গাছ মরে গেছে। দুর্গন্ধে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সরেজমিনেদেখা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের বনের ভেতরে কাজি হ্যাচারির একটি ট্রাক থেকে ময়লা ফেলা হচ্ছে। তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ময়লাগুলো নামাচ্ছিলেন। প্রতিদিন দুপুর দিকে একটি ট্রাককে একই জায়গায় ময়লা ফেলতে দেখা যায়।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, সকাল থেকে কাজী হ্যাচারির বিভিন্ন ময়লা সংগ্রহ করে ট্রাকে করে তা দুই থেকে তিন দফায় বনের বেতর খোলা জায়গায় ফেলা হয়। এই জায়গা কাজী হ্যাচারি কিনে নিয়ে তার নিজের জায়গাতেই ডিমরে খোসাসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা ফেলানো হয়।
ময়লা আনার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের চালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন,প্রতিদিনই এখানে ময়লা ফেলা হয়। ময়লার পরিমাণভেদে দিনে দুইবার, কখনো তিনবার ফেলতে হয়। আমার বাড়ি এখানেই,এই ময়লার পচা দর্গন্ধে বাড়িতে থাকা যায়না,বাড়ির উঠানে টিনের চালে কাক,চিলসহ বিভিন্ন পাখি ও কুকুর ডিমের খোসার ভেতরে থাকা মুরগির মরা বাচ্চা নিয়ে ফেলে,পরিবেশ অনেক খারাপ অবন্থায় বসবাস করতে হচ্ছে। বর্জ্যের কারণে চলাচলকারী ও স্থানীয়রা পোহাচ্ছেন ভোগান্তি। খোলা আকাশের নিচে ফসলি জমিনের পাশে ফেলা বর্জ্যের কারণে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবু হাসান বলেন, ময়লার উটকো গন্ধে বাড়িতেও টেকা যায় না। এগুলো দেখারও কেউ নেই। চলাচল করা অনেককেই ওই এলাকা পার হওয়ার সময় নাক চেপে ধরে রাখতে দেখা যায়।
নাকে গামছা বেঁধে হেঁটে যাচ্ছিলেন আমজাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, গন্ধে টেকা যায় না। এতো দুর্গন্ধ যে নাক বন্ধ না করার উপায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, গন্ধের কারণে খুব কষ্ট হয়। ওই এলাকার বাতাসে সবসময় দুর্গন্ধ থাকে। প্রায়ই ময়লা পুড়িয়ে দেয়। গন্ধ ও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে। এদিকে বর্জ্যের বিষক্রিয়ায় বনের পাশের কয়েটি গাছ শুকিয়ে মরে গেছে।

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, এলাকায় পরিকল্পিত নগরায়ন হয়নি। বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কখনোই গড়ে ওঠেনি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় আমরা কাজী হ্যাচারির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি। খোলা জায়গায় ফসলি জমির পাশে একইভাবে ময়লা ফেলার কারণে সেখানেও গাছ মরেছে। মোদ্দাকথা কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। আমরা চাই একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি স্থায়ী সমাধান হোক।
এবিষয়ে নয়নপুর কাজী হ্যাচারির অফিসে গিয়ে তাদের কাওকে পাওয়া যায়নি,তাই এই পতিবেদনে কাজীর কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো.মোখলেছুর রহমান বলেন, বর্জ্য ফেলার বিষয়টি আমাদের পক্ষ থেকেও খোঁজ নেওয়া হবে,তবে বিষয়টি গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কতৃর্পক্ষকে জানান।
গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তা নয়ন মিয়া বলেন, বর্জ্যের তরল শুষে নিলে সেই গাছ মারা যায়। তবে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বলবো, যাতে সেখানে ময়লা না ফেলা হয়। বর্জ্য ফেলার বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :