রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশার কারণে টানা ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিট থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত টানা ৮ ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এর জন্য দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের লম্বা লাইন তৈরী হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন আটকে থাকা শত শত যানবাহনের যাত্রী এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
বিআইডব্লিউটিসি`র দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১ টার পর থেকে নদী অববাহিকায় কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত দেড়টার দিকে অতি মাত্রায় কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ায় নৌদূর্ঘটনা এড়াতে এ নৌরুটে সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ঘাট কর্তৃপক্ষ কর্তৃপক্ষ কর্তৃপক্ষ। এরপর কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে পুনরায় এই রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
বুধবার (১০ জানুয়ারী) সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে দেখা যায়, ফেরি ঘাট এলাকায় ৩ শতাধিক ঢাকামুখী গাড়ি নদী পাড়ি দিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছে। শীত ও কুয়াশায় আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীরা গাড়িতেই বসে আছেন। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে বাইরে চায়ের দোকানে ভিড় করছেন। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হেটে ফেরিঘাটের দিকে এগোচ্ছেন। ফেরি ঘাটের সংযোগ সড়কসহ পন্টুনে কিছু গাড়ির সাথে বেশকিছু যাত্রী কখন ফেরিতে উঠবে সে জন্য অপেক্ষায় করতে দেখা যায়।
কথা হয় ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনের সাথে ভিড়ানো ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে নদী পারি দিতে আসা সাইফুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আমার গাড়িটা ফেরিঘাট থেকে এখনও প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। তাকে দ্রুত ঢাকা যেতে হবে। তাই ঝুকি নিয়েই এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রলারে করে নদী পারি দিবেন।
ঝুকি নিয়ে ট্রলারে উঠার ব্যাপারে দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জে এম সিরাজুল কবির জানান, নৌদূর্ঘটনা এড়াতে নৌপুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক টহল দেয়া হচ্ছে। পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে ট্রলার চালকেরা স্থান পরিবর্তন করে। ফেরিঘাট থেকে লঞ্চঘাট আবার লঞ্চ ঘাট থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে যাত্রী পারাপার করার চেষ্টায় আছে। ট্রলারে যাতে করে কেউ পারাপার হতে না পারে সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে সকাল ৯টার দিকেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। রিকশা, অটোরিকশা ও ভ্যানে করে জরুরি কাজে ছুটে চলা মানুষদেরকে যবুথবু অবস্থায় বসে চলাচল করতে দেখা যায়।
দৌলতদিয়া ৪ নম্বর ফেরিঘাট থেকে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রো রো ফেরি `গোলাম মওলা` থেকে নামছিলেন সাতক্ষীরা লাইন পরিবহনের একটি বাস। এসময় বাসের মধ্যে আলাপকালে সুপারভাইজার মাহফুজ জানান, তারা ঢাকা থেকে রাত ১০ টায় সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। রাত ১ টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে এসে পৌছায়। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই ফেরিতে ওঠেন তারা। ফেরিতে উঠার পর ফেরিটি র্যাম উঠিয়ে ঘাটেই নোঙর করে থাকে। রাত দেড়টা টা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত ফেরিতেই বসে থাকতে হয় তাদের। দীর্ঘ ৮ ঘন্টা ফেরিতে আটকা থেকে সকাল সাড়ে ১০ টায় ফেরি থেকে নামেন তারা। তাদের ভোর ৬ টার মধ্যে সাতক্ষীরা পৌছানোর কথা থাকলেও তারা আজ ২ টা থেকে ৩ টার মধ্যে পৌছাবে বলে তিনি জানান।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, কুয়াশার কারণে ঘাটে ফেরিগুলো নোঙর করে ছিল। কুয়াশায় ফেরি বন্ধের ৮ ঘন্টা পর সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরি ছেড়ে যায়। ফেরি বন্ধের কারনে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হওয়ায় দৌলতদিয়া প্রান্তে ৩ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকে ছিলো। এ নৌরুটে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৫টি ফেরি চলাচল করছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :